লেখা লেখি করি না অনেক দিন হয়ে গেলো। পড়াশোনা, কাজ আর সংসার এসবের ভীড়ে লেখার অভ্যসটা আর জায়গা করে নিতে না পেরে কিভাবে যে হারিয়ে গেলো তা টের ও পেলাম না। যাক সে কথা... সপ্তা খানিক আগে হঠাত ফেইসবুকে বেশ কিছু ম্যাসেজ পেলাম, বিষয় ছিল হাট্টিমাটিম ছড়াটির প্রথম ৪৮ লাইন!
অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখলাম, সে কি কান্ড, হাট্টিমাটিম পুরো ছড়া আবিস্কার করে রীতিমত সাড়া জাগিয়ে ফেলেছেন অনেকেই! ফেইসবুকে অসংখ্য পেইজ পেলাম যেখানে আলোচিত শিরোনাম '' এত বছর পর্যন্ত জানতাম এই ‘হাট্টিমা টিম টিম’ ছড়াটা ৪ লাইন। আসলে এটা রোকনুজ্জামান খানের ৫২ লাইনের অসম্ভব সুন্দর একটি ছড়া।'' এই টপিকে সকলের শেয়ার, কমেন্ট আর আলোচনার বন্যা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। এতো সুন্দর একটা ছড়ার সম্পর্কে এই ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি দেখে তা দূর করার জন্য কিছু একটা না লিখলেই যে নয়।
দাদাভাই (রোকনুজ্জামান খান) এর লেখা ৪ লাইনের চমৎকার শিশুতোষ ছড়া হাট্টিমাটিম টিম। ২০১২ সালের দিকে লিখেছিলাম প্রথম দিকের লাইনগুলো। দাদা ভাইয়ের লেখা চারটি লাইন ছোটবেলায় পড়েন নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, আর তাই যখন আমি এই ছড়াটির প্রথম দিকের লাইন লিখেছি তখন রেফারেন্সিং এর প্রয়োজন ও বোধ করি নি। বিভিন্ন অনলাইন ব্লগ আর ফোরামে এক্টিভ থাকার কারনে ছড়াটি সে সময় পোস্ট ও করেছিলাম আর চমৎকার সব রেসপন্স ও পেয়েছলাম কিন্তু এই ছড়া নিয়ে যে এতো বিভ্রান্তির শুরু হতে পারে তা ঘুণাক্ষরে ও মনে আসে নি। ছড়াটি নিয়ে এই ভুল তথ্য যেভাবে হাওয়র বেগে ছড়িয়েছে, আমি আশা করবো সঠিক তথ্যটি ও এভাবে ছড়াক।
এবার আসি একটা ভিন্ন প্রসঙ্গে, অনলাইনে পুরো ছড়াটি কম বেশি সবাই ভীষণ পছন্দ করেছে এবং এতে আমিও চমৎকৃত। বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ঘুরে পাঠকদের মন্তব্য পড়ে তাদের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ লক্ষ্য করলাম এবং তাদের মন্তব্যের কিছু বিষয় তুলে ধরলাম নিখাত বিনোদন এর জন্য-
জ্ঞ্যনী পাঠকঃ এই ছড়ায় শিক্ষণীয় কিছু নাই। দেশ প্রেমের কথা নাই, সমাজের কল্যান বিষয়ে কিচ্ছু নাই। এই কাল্পনিক প্রানীর ছড়া শিশু মনে কি প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে জ্ঞ্যনী পাঠকগণ ব্যপক উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন তাদের মূল্যবান মন্তব্য।
সবজান্তা পাঠকঃ ৪ লাইনের নয় ৫২ লাইনের ছড়াটি নাকি অনেক আগে থেকেই তারা জানতেন। অনেকে নাকি ছোট বেলায় মায়ের কাছে পুরো ছড়াটি ই শুনেছিলেন এতদিন পরে আবার সম্পূর্ণ ছড়া পড়ে তারা নস্টালজিক হয়ে পরেছেন।
আফসোসকারী পাঠকঃ জীবনের এতোগুলো বসন্ত পার হয়ে গেলো অথচ এই ৪ লাইনের ছড়াটি যে ৫২ লাইনের তা আজ জানা গেলো হায়!!! আপনাদের জন্য সুখবর হল, আপনাদের পার হয়ে যাওয়া বসন্ত বৃথা যায় নি।
বিশেষজ্ঞ পাঠকঃ খাড়া দুটো শিং, তারা মাঠে পাড়ে ডিম??? শিং আছে যে প্রাণীর সে ডিম কেনো দেবে, তারা তো বাচ্চা প্রসব করবে! কিছু মন্তব্যে বেচারা হাট্টিমাটিমের ডিম পাড়া নিয়ে ব্যপক সমালোচনা ও চোখে পরলো।
ভাগ্যবান পাঠকঃ ভাগ্যিস ছোট বেলায় এই পুরো ছড়া মুখস্থ করতে হয় নি। চার লাইনেই পরীক্ষায় রফাদফা, ছোট বেলায় ৫২ লাইনের ছড়া সম্পূর্ণটি দাড়ি কমা সহ পরীক্ষায় লিখতে হয়নি এই আনন্দে অনেক পাঠক ঝলমল করছিলেন, তা তাদের মন্তব্য পড়েই বোঝা যায়।
চিন্তাবিদ পাঠকঃ ছড়ার প্রথম অংশ পড়ে, এতে নিহিত গভীর ভাবার্থ তারা আবিস্কার করেছেন বলে কিছু মন্তব্যে জানা গেছে।
অনুসন্ধানী পাঠকঃ এদের আমি সাধুবাদ জানাই। তারা জানার চেস্টা করেছেন এটি আসলেই রোকনুজ্জামান খানের লেখা ৫২ লাইনের ছড়া কি না। শব্দ চয়ন বিশ্লেষণ করে বুঝতে চেয়েছেন একই ছড়াকারের লেখা কি না প্রথম আর শেষ অংশ। ভুল তথ্য অন্ধের মত শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ান নি। ধন্যবাদ আপনাদের।
নির্মল পাঠকঃ অসংখ্য ধন্যবাদ এই নির্মল হৃদয় শ্রেণীর পাঠকদের। শুধুমাত্র মনোরঞ্জনের জন্য লেখা এই শিশুতোষ ছড়াটি পড়ে আপনারা আনন্দ পেয়েছেন এতেই এই ছড়ার সার্থকতা।
কবি শামসুর রাহমানের পন্ডশ্রম কবিতার কিছু লাইন দিয়ে লেখাটি শেষ করছি, কেন করছি তা আপনারাই ভেবে বের করুন!
এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,
আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।
দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে,
কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে।
কান গেলে আর মুখের পাড়ায় থাকল কি-হে বল?
কানের শোকে আজকে সবাই মিটিং করি চল।
যাচ্ছে, গেল সবই গেল, জাত মেরেছে চিলে,
পাঁজি চিলের ভূত ছাড়াব লাথি-জুতো কিলে।
সুধী সমাজ! শুনুন বলি, এই রেখেছি বাজি,
যে-জন সাধের কান নিয়েছে জান নেব তার আজই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৭:১৬