somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত-অভিনন্দন হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইতিহাস গড়ে জয়লাভ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক। এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের মর্যাদাসম্পন্ন কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হলেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলীর জয়লাভের পর বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে নতুন পালক যোগ করলেন হ্যানসেন ক্লার্ক। পেশায় স্থপতি হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার শ্রীধরা গ্রামে। আর রুশনারা আলীও একই জেলার বিশ্বনাথের মেয়ে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী কংগ্রেসনাল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হলার জনকে পরাজিত করে বিজয়ের মুকুট পরেন হ্যানসেন ক্লার্ক। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি হলেও ক্লার্কের বিজয়ের মাধ্যমে এ আসনে ৬১ বছরের আধিপত্য ধরে রাখল ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাট।
বিজয়ের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক সাংবাদিকদের বলেন, 'বাবার জন্য আমি গর্বিত। ইমিগ্রেশনের একটি ফেয়ার পলিসি হওয়া দরকার, যাতে করে সব ইমিগ্র্যান্টকে ফেয়ারলি দেখা হয়। আমার বাবাও ইমিগ্র্যান্ট ছিলেন। তাই আমি ইমিগ্র্যান্টদের কষ্ট বুঝি।' কংগ্রেসম্যান হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবেন জানিয়ে মি. ক্লার্ক বলেন, 'আমি প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে কংগ্রেসম্যান হতে পেরে নিজেকে সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছি।'
বারাক ওবামার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মিশিগান থেকে কংগ্রেসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হ্যানসেন ক্লার্ক। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা আধিপত্য ধরে রাখতে না পারলেও উঠতি কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশিরা ইতিহাসের অংশ হলেন। আর এ ইতিহাসের নায়ক হচ্ছেন মিশিগান থেকে বিজয়ী কংগ্রেসম্যান হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক। হাসিম ক্লার্ক ১৯৯০ সাল থেকেই মিশিগান স্টেটের সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবার কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে তাঁর কর্মপরিধি বিস্তৃত হলো। একই সঙ্গে মূলধারায় বাংলাদেশি আমেরিকানদের উত্থানের ক্ষেত্রে তিনি হলেন পথপ্রদর্শক। এর আগে গত ৩ আগস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাচনে হাসিম ক্লার্ক ইউএস কংগ্রেসম্যান (মিশিগান কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৩) হিসেবে বিজয়ী হন। তিনি ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত করেন সাত মেয়াদের কংগ্রেসওম্যান ক্যারলিন চিকস কিলপ্যাট্রিককে।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ২টা) পর্যন্ত একটানা কংগ্রেসনাল নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সারা দেশের চিত্র ভিন্ন থাকলেও মিশিগান শহরে বরাবরের মতো এবারও ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ছিল। আর মিশিগানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সমর্থন থাকায় হাসিম ক্লার্কের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনা সহজ হয়ে ওঠে। ১৯৪৯ সাল থেকে কংগ্রেসের এ আসনটি ডেমোক্র্যাটদের দখলে রয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে এ নির্বাচনে মিশিগান স্টেট সিনেট প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে ড. দেবাশীষ মৃধা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি জয়ী হতে পারেননি। একইভাবে জর্জিয়া স্টেট সিনেটেও পরাজিত হয়েছেন ড. রশিদ মালিক নামের আরেকজন বাংলাদেশি। তবে তিনি ভোট পেয়েছেন মোট ভোটের এক-তৃতীয়াংশ_১৯০০০।
প্রসঙ্গত, হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের বাবা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শ্রীধরা গ্রামের আবদুল হাসিম। যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন ক্লার্ক। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা গেলে মা তেলেমা হাসিম স্কুল গার্ডের চাকরি করেন। ১৯৮৪ সালে বিশ্ববিখ্যাত জর্জ টাউন থেকে জুরিস অব ডক্টর ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে যোগ দেন ক্লার্ক। '৯০, '৯৮ ও ২০০০ সালে পরপর তিনবার মিশিগান স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ এবং ২০০২ ও ২০০৬ সালে স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হন। হ্যানসেন হাসিম ক্লার্ক যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি অনাবাসী (এনআরবি) সম্মেলনে যোগ দিতে ২০০৭ সালে ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন। সম্মেলন শেষে পৈতৃক ভূমি শ্রীধরা গ্রামে বেড়াতে এলে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ক্লার্ক একজন সৎ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত রাজনীতিক হিসেবে সব মহলে পরিচিত। আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ক্লার্কের বিজয়ে সারা আমেরিকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস চলছে। গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দে মেতে থাকেন বাংলাদেশিরা। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা প্রভৃতি স্টেটে এখন বিজয় উৎসবের আয়োজন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেটের একটি বেসরকারি কম্পানির সেলস ম্যানেজার সুফি ইসলাম বলেন, 'এখানে আমরা বিজয় মিছিল করব, ঠিক বাংলাদেশে যেভাবে বিজয় মিছিল হয়, সেভাবে।'
বিয়ানীবাজার থেকে আহমেদ ফয়সাল জানান, হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের বিজয়ের সংবাদ শুনে সিলেটের বিয়ানীবাজারে আনন্দের বন্যা বইছে। আনন্দ আর অভিনন্দনের জোয়ার বইছে বিয়ানীবাজার উপজেলার সর্বত্র। ভোরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হ্যানসেন হাসিম ক্লার্কের বিজয়ী হওয়ার বার্তা আসতে থাকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে উপজেলাজুড়ে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি, মিষ্টি বিতরণ আর অভিনন্দনের জোয়ার। বিয়ানীবাজার পিএইচজি হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক শিক্ষাবিদ আলী আহমদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'শুধু বিয়ানীবাজার নয়, এ গৌরব সব বাঙালির। এ বিজয়ের মাধ্যমে আরেক স্বপ্নের সোপান রচিত হলো।' কসবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, 'এত দিন শুনে এসেছি, বাংলাদেশিরা একদিন পৃথিবী জয় করবে, এখন তা বাস্তবে রূপ লাভ করছে।' বিয়ানীবাজার স্বদেশ সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি প্রভাষক ফয়ছল আহমদ বলেন, 'আমাদের মেধা ছিল, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে না ওঠায় আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। হ্যানসেন ক্লার্ক, রুশনারা আলীদের দেখে যদি কিছু শিখতে পারেন আমাদের রাজনীতিবিদরা।' উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, 'এ বিজয় আমাদের জন্য গৌরবের। এ থেকে আমাদের শিখতে হবে।' উপজেলা জাতীয়তাবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক নজমুল হোসেন পুতুল বলেন, 'হ্যানসেন ক্লার্ককে নিয়ে বাঙালির অহংকার এ বিজয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল। আশা করি, বাংলাদেশেও একদিন স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।' শ্রীধরা গ্রামের আবদুল মানিক বলেন, 'কত খুশি হয়েছি, কিভাবে তা প্রকাশ করব বুঝতে পারছি না। আমেরিকার মতো দেশে আমাদের ছেলে এমপি (কংগ্রেসম্যান) হয়েছে।' ক্লার্কের বিজয়ে আজ বিয়ানীবাজারে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হবে।
বি:দ্র: লেখাটি কালের কন্ঠ থেকে কোন পরিবর্তন না করে সম্পূর্ণ কপি পেষ্ট।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×