somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ নম্বর দেয়া-নেয়া

০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন ক্লাস এইটে।
দ্বিতীয় সাময়িকের ক্লাস টেস্টের খাতা নিয়ে ম্যাডাম ঢুকলেন। দেখলাম প্রথমেই আমার খাতা রাখা পঁচিশে চব্বিশ। ম্যাডাম আমার চেহারা দেখে কি ভেবে যেন খাতাটা সরায় রেখে বাকি সবার খাতা দিয়ে দিলেন।
দেখলাম হাইয়েস্ট পেয়েছি আমি। মহা খুশি হয়ে অপেক্ষা করছি, এখন আমার খাতার পালা।
ম্যাডাম আমার হাতে খাতা দেয়ার আগে আরেকবার টেনে নিয়ে টান দিয়ে তিনটা বড় প্রশ্নে এক-দেড় করে কেটে, সব যোগ করে টোটালের ঘরে উনিশ বসায় আমাকে খাতাটা দিলেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই একটু অবাক। সাধারণত ইংলিশের হাইয়েস্ট আমার কিংবা সামিয়ার দখলে থাকে। কিন্তু এভাবে হাইয়েস্ট পেতে তারও ভালো লাগলো না।
ম্যাডামকে বলবো কি বলবো না করেও বলে ফেললাম, ম্যাডাম এখানে চব্বিশ ছিলো?
ম্যাডাম আমার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন, হু। তোমার উত্তর আরও ভালো হওয়ার কথা ছিলো।
আমি চুপ করে খাতা নিয়ে বসেছিলাম সিটে।

এর বছর দেড়েক পরের কথা। সেই ম্যাডামই আমাদের সমাজ নিতেন নাইন-টেনে।
পরীক্ষার আগের কোচিং করতে গিয়েছিলাম সেদিন। ম্যাডাম টেস্টের খাতা ধরায় দিয়ে বললেন যোগ করে দেখতে যোগ ঠিক আছে কিনা। আমি আর শাতিল ছিলাম। দু'ভাগে করছিলাম যোগ।
এর মধ্যেই আমার খাতা আমার হাতে পড়লো। উপরে বাইশ। আমি মহা খুশি। পাস একুশে, আমি বাইশ। সমাজে আমি সেই লেভেলে খারাপ ছিলাম। তার উপর পরীক্ষার আগের দিন ঘুরতে গিয়েছিলাম। পাশ করেই তা-ধিন-তা অবস্থা। কিন্তু যোগ মিলিয়ে দেখি আসে সতের।
আমি আবার গুনে দেখি সতের- মানে আমি ফেল।
শাতিলকে দেখাই, সেও যোগ করে দেখে একি অবস্থা। বাকি সব খাতা ঠিক আছে কিন্তু, এই একটায় গড়বড়।
শাতিল দ্বিধা করছিলো ম্যাডামকে দেখাবে নাকি- আমার সামনে আমার খাতায় ফেল করাতে হয়তো বাধছিলো তার। আমি নিজেই ম্যাডামকে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম এই খাতায় যোগ ভুল হইসে, সতের হবে।
ম্যাডাম আমার হাত থেকে খাতাটা টান দিয়ে নিয়ে বললেন, এটা বাইশ হবে, বাকি গুলো ঠিক আছে??


দু'টো ঘটনার দু'রকম প্রভাব পড়েছিলো আমার উপর।
ক্লাস এইটে আমি বৃত্তির জন্য সিলেক্ট হয়েছিলাম বাই চান্স। আমার নিজের উপরে ভরসা ছিলো যে পাবো না। কিন্তু, কেন যেন টীচারদের বিশ্বাস ছিলো আমার উপর। এরকম টুকরো টুকরো ঘটনা দিয়ে ম্যাডাম আমাকে বুঝিয়ে দিতেন তিনি কি চান আমার কাছে।
এর ফলাফলটা হয়েছিলো এমন, প্রথম সাময়িকে ১৫ তম, দ্বীতিয়তে ২২ এবং তৃতীয়তে প্রথম হয়েছিলাম। আমার মার্কস এতবেশি ছিলো, যখন গড় করা হয়েছে তিন পরীক্ষার, গড়ে আমি তৃতীয়।
আর বৃত্তি? সেটাও পেয়েছিলাম, সাধারণ গ্রেডে দশম হয়ে।

আর টেস্টে, সেবার আমাদের মাত্র পনেরজন সব বিষয়ে পাশ ছিলো, আমি সহ। কি পরিমাণ ছোট লাগছিলো নিজেকে বলে বোঝাতে পারবো না।
এসএসসির রুটিনে যখন দেখলাম কম্পিউটার পরিক্ষা সমাজের আগেরদিন বিকালে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমার।
সেবার আমাদের মাঝে দুই জন এ পেয়েছিলো সমাজে, যাদের এ পাওয়াটা নিউজ ছিলো। শামীমা- ও যে এ+ মিস করবে কেউ ভাবে নি, আর আমি- আমি যে বি মিস করবো, কেউ ভাবে নি।

ম্যাডামের নাম, গুলশান আরা।
শহীদ আনোয়ারের অন্যতম বেস্ট টীচার।
আমার জীবনে দেখা সেরাদের একজন।

ম্যাডাম আমাকে অনেক আদর করতেন।
এই রকম আরো অনেক গল্প আছে ওনার সাথে আমার।
ছোট ছোট ঘটনা দিয়ে উনি সবসময় আমাকে অনুপ্ররণা যোগাতেন। সবসময় তার ট্রাস্ট ছিলো আমার উপরে।
আমার জীবনের ছোট বড় সাফল্যে যে কয়জন মানুষের চেহারা আমার মনে আসে উনি তাদের একজন।
আজ আমি খুব গর্ব করে বলি, বুয়েটে পড়ি- আর্কিটেকচারে। যেখানে পড়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে ছিলো, সেখানেই পড়ছি, নিজের সখের সাবজেক্টেই। আমার এই সাফল্যের ভিত যে কয়জন মানুষের হাতে গড়া,
ম্যাডাম তাদের একজন।


একটু আগে জানলাম ম্যাডাম মারা গেছেন। বেশ ক'বছর আগেই নাকি। আমি খবর পাইনি। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ব্যস্ততায় অনেক খবরই মিস হয়ে যায়।




___________________________________________


ছন্নছাড়ার পেন্সিলের কাছ থেকে জানলাম মাত্র খবরটা ভুল ছিল।
ম্যাডাম বেঁচে আছেন :)
ধন্যবাদ ছন্নছাড়ার পেন্সিলকে :)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:৩৪
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×