সূর্য উঠেছে।
যদিও আকাশে মেঘের আড়ম্বরে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু ফ্যাকশে আলো জানান দিচ্ছে- সে এসেছে।
পর্দা গুলো ভুলে গেছে যেন তাদের চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকার কথা, নেচে চলেছে এলোমেলো বাতাসের সাথে আর তাতে তাল যোগাচ্ছে উইন্ড চাইমের মৃদুমন্দ ঝংকার।
ঘর ছেড়ে বারান্দায় পা দেয় তিতলী।
এখনও মানুষের কোলাহল বাকি সব শব্দকে ছাপিয়ে ওঠেনি। এখনও গাছের পাতার সরসর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও পাখির ডাক শোনা যায়- শহুরে পাখির শহুরে ডাক। ভোরের এই সময়টা খুব ভালো লাগে ওর। সবসময়ই বলতো, ভোর দেখার জন্য সারারাত জেগে থাকাও সার্থক।
তিতলী বড় একটা নিঃশ্বাস নেয়।
মাথা ঝাঁকিয়ে তাড়িয়ে দেয় অনর্থক চিন্তা গুলোকে, স্মৃতি গুলোকে। ঘুম থেকে উঠেই এসব আবোল তাবোল কথা মনে করার কোন দরকার নাই। বরং সে মনোযোগ দেয়া চায়ের মশলার পরিমাণে। সকালের চাটা পারফেক্ট নাহলে তিতলীর ভালো লাগে না।
বাথরুম থেকে যখন ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই, আয়নায় নিজের উপরে চোখ পড়ে তার। কানে যেন স্পষ্ট শুনতে পায়, এখন শুধু কাজল দিলেই হয়ে যাবে।
নিজের উপরে প্রচন্ড বিরক্ত হয় তিতলী।
ভেবেছিলো, আজ ভোরে উঠেছে, ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে তৈরি হয়ে কাজে যাবে। কিন্তু কি সব আবোল তাবোল স্মৃতি মনে পড়ছে আজ?
নিজের এই জিনিসটার উপরে তার কোন নিয়ন্ত্রণ নাই, আর এটই সব থেকে বেশি বিরক্ত করে তাকে। একটা সুইচ থাকত- তার ইচ্ছেয় অন-অফ হতো। কিংবা কম্পিউটারের কোন ফোল্ডারের মত হত- অপ্রয়োজনীয় সব কিছু শিফট ডিলিট করে দেয়া যেত।
হাতের চায়ের কাপ নিয়ে বসে থাকে তিতলী চুপ করে, বারান্দার এক কোণে। নিজেকে হারতে দেবে না সে, এই সিদ্ধান্তে সে এখনও অটল।
বড় করে আরেকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বুকের ভিতরের আকুলি বিকুলি করতে থাকা কষ্টগুলোকে আবারও চাপা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়।
দূরের গির্জার ঘন্টা ধ্বনি ভেসে আসে। তিতলীকে জানান দেয় তৈরি হওয়ার সময় হয়ে গেছে।
অভ্যাস মতো পিডিএটা হাতে নিয়ে নিজের শিডিউল চেক করে সারা দিনের- সকালে বসের সাথে একটা মিটিং আছে। তার পরে রিক্রুটিং সেশন। সারাদিন সেখানেই যাবে।
রিক্রুটিং সেশন?? আজ? দ্রুত তারিখের ঘরে চোখ চলে যায় তার। গতকাল তার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। ডিভোর্সের দু'মাস পরে এই তারিখটা স্রেফ একটা তারিখ বৈ আর কিছু নয়। তার পরও এক মুহূর্তের জন্য থামিয়ে দেয় তাকে।
দিনটা গতকাল ছিলো- কাজের চাপে খেয়াল করেনি সে। চলে গেছে দিনটা।
নিজেকে একট ছোট্ট হাসি উপহার দেয় তিতলী। হারতে দেবে না সে নিজেকে, এই সিদ্ধান্তে সে এখনও অটল।