.
-চলুন, ভিজে ভিজে চলে যাই।
.
রাত্রী ওর রিনরিনে গলায় কথাটা বলল।
আমি ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম,ও প্রায় ভিজে গেছে। চুল গুলো ভেজা ভেজা দারুন লাগছে ওকে দেখতে।
.
বৃষ্টি হচ্ছে অনেকক্ষন। আধাঘন্টা ধরে এই দোকানের ঝাপটার নিচে দাড়িয়ে আছি আমি আর রাত্রি। বৃষ্টির প্রতি বিরক্ত চলে এসেছে, সমস্যা আরো একটা আছে।যে দোকানের নিচে দাড়িয়ে আছি সেখানে জায়গা কম, দুজনেই দাড়িয়ে আছি খুব কাছাকাছি প্রায় গা লেগে যাচ্ছে।আর কিছু করার ও নেই গাড়ি টাও এমন জায়গায় নষ্ট হল যেখানের আশেপাশে কোন গ্যারেজ বা অন্য কোন যানবাহন ও নেই চলাচলের জন্য।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই এখানে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
.
আমি বললাম,
-না থাক,বৃষ্টি থেমে যাবে।
.
রাত্রী ওর হাত গুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজিয়ে বলতে লাগল,
-আধাঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছি,বৃষ্টি তো থামছেই না।আমি ভিজব বৃষ্টিতে,আপনি ও আসুন।
.
এটুকু বলে ও চলে গেল বৃষ্টির পানিতে ভিজতে।
বৃষ্টি যে মুষল ধারে পড়ছে তা নয়,ঝিরি ঝিরি ভাবে পড়ছে তবে গা ভেজার মত বৃষ্টি।
রাত্রীর সাথে আমার ও ভিজতে ইচ্ছা করছে,কিন্ত বৃষ্টির পানি মাথায় পরলে আমার জর আসবে নিশ্চিত বিশেষ করে রাত্রের বৃষ্টির পানি।আমি এটা অনেক কবার ট্রাই করে দেখেছি।
.
যাই হোক,রাত্রীর সাথে বৃষ্টি তে ভেজাটা কোন ভাবেই মিস করা যাবেনা।তাই আমিও নেমে পড়লাম বৃষ্টিতে।
রাত্রী আমাকে দেখে বলল,
-ভাল করেছেন,চলুন।শট কাটে অল্প একটু গেলেই আমার বাসা।
-হুম চলুন।
.
রাত্রি আমার কলিগ।আমরা একি অফিসে কাজ করি।যদিও রাত্রী আমাকে শুধু কলিগ মনে করে,আমি ওকে আমার অনেক কিছুই মনে করি।ওকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে,এই মেয়ে আমি তোমাকে ভালবাসি কিন্তু এই বোকা মেয়ে তো কিছুই বোঝে না।
.
সরাসরি জানানোর সাহস কখনোই হয়নি তাই ইমেইল লিখতাম। ওকে পাঠাবো পপাঠাবো করে সেগুলো কখনোই পাঠানো হয়নি।সব গুলোই ড্রাফট বাক্সে জমা পড়ে আছে।
.
এই যে আজকের কথা,ওর একগাদা কাজ আমি করে দিলাম।তারপর ডিনার করালাম,তারপর বৃষ্টিতে ভিজে ওকে বাসা পৌছে দিচ্ছি।অবশ্য প্রায় প্রায় ওকে বাসা পৌছে দিতে হয় আমাকে।
মাঝে মাঝে ও নিজেই বলে ওকে পৌছে দিতে। ওকে পৌছে দেওয়া খুব একটা অসুবিধার কাজ নয় কারণ আমার আর ওর বাসা একি দিকে।
.
কিছু দূর যাওয়ার পর রাত্রী বলল,
-কেমন লাগছে বৃষ্টি তে?
.
আমার আজ রাত্রে কি হবে কে জানে।জর আসলে সেবা করার মতো কেউ নাই।মাঝে মাঝে ভয় পাই বাসায় মরে পরে থাকলেও দেখার মত কেউ নাই।বাবা মা থাকে সেই গ্রামে।এত আসতে বলি আসেও না।বলে বিয়ে করব তারপর ওনারা আসবে কিন্তু রাত্রী তো আমার মনের কথা বোঝেই না।
.
আমি হাসি মুখে বললাম,
-দারূন লাগতেছে।আপনার?
.
রাত্রিও হাসি মুখে বলতে লাগল,
-আমার তো সবসময় বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগে।
-জর আসেনা আপনার,
-না তো,
-ও আচ্ছা।
.
মিনিট দশেক হাটতেই সামনে একটা গলি পড়ল।
রাত্রি বলল,
-গলি টা পার হলেই আমার বাসা,,
-ও,
-হুম,আপনি তো অন্য রাস্তা দিয়ে আসেন,এটা শটকাট
-আচ্ছা।
-হুম,চলুন।মাথা মুছে এক কাপ চা খাবেন।
.
আমি কিছু বললাম না।রাত্রীর পিছে পিছে হাটতে লাগলাম।
গলি পার হতেই বৃষ্টি থেমে গেল,আর রাত্রীর বাসায় চা খাওয়াও হলনা।অবশ্য ও অনেক বার রিকুয়েস্ট করল, আআমি ননা করলাম।আমি দেরী করতে চাইছিলাম না কারণ ভয় হচ্ছিল আবার যদি বৃষ্টি হয়।তাই আরেকবার বৃষ্টি হওয়ার আগেই আমাকে বাসা পৌছা তে হবে।
.
বাসা এসে কাপড় পাল্টে কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।কিন্তু মাঝ রাত্রেই বুঝলাম জর এসেছে কঠিন রকম জর।অবশ্য আশা করছিলাম জরের,যে এটা মিস হবেনা।
.
সকাল হতে হতে প্রচন্ড জর চলে এল, মেপে দেখি ১০২ ডিগ্রী।এভাবে আর অফিস যাওয়া সম্ভব নয়।তাই অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আজ যাবনা।
খুবই খারাপ অবস্থায় ছিলাম,,আস্তে আস্তে জর বাড়ছিল,মনে হচ্ছিল কিছুক্ষনের মধ্য মারা যাব।
.
ঠিক সে সময় বাসার কলিংবেল টা বেজে উঠল।
মনে মনে খুব বিরক্ত হলাম,আমার বাসায় আবার কে?
কিন্তু গেট খুলে বিরক্তর জায়গায় খুশিই হলাম,
রাত্রী এসেছে।ও এখানে কি করছে?
.
আমি কোন রকম জিজ্ঞেস করলাম,
-আপনি এখানে হঠাৎ?
.
ও কোন কথা বলল না,সরাসরি আমার কপালে হাত দিল।ওর ঠান্ডা হাত গুলো আমাকে শিহরিত করতে লাগল।
ওর হাত আমার কপালে পরা মাত্রই ও চমকে উঠে বলল,
-আপনার তো অনেক জর?
-হুম,এসে গেছে।আপনি এখানে কেন,অফিসে যান নাই?
.
রাত্রী একটু কোমল গলায় বলল,
-গিয়েছিলাম,শুনলাম আপনার জর তাই চলে এলাম দেখতে।
-ও দেখা শেষ।এখন চলে যান।
.
রাত্রী একটু অভিমানের সুরে বলল,
-তাড়িয়ে দিচ্ছেন কেন??
.
আমি অবাক হলাম ওর কথা শুনে।আমি বললাম,
-না তাড়িয়ে দিচ্ছি না।
-আপনি আগে কেন বলেন নি রাত্রে বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার জর আসে?
-কে বলছে আপনাকে?
-জামিল ভাই বলল,
-আরে না তেমন না,
-হুম,আপনি মিথ্যা বলছেন।আমার কারণেই আপনার এ অবস্থা।
.
আমি বললাম,
-না তেমন ব্যাপার না,হঠাৎ ভেজার কারণে,
রাত্রী বলল,
-চলুন আপনার মাথায় পানি দেই,
-থাক আপনার কষ্ট করতে হবে না।
.
ও আমার কোন কথা শুনল না বাত্রুম থেকে বালটিতে পানি এনে আমার মাথায় পানি ঢালতে লাগল।অবশ্য ভালই লাগছিল।কেউ একজন খেয়াল নেয়ার আছে আমার।
.
কিছুক্ষন পর রাত্রী আমাকে বলল,
-আপনার আজ একটা ক্লাইন্টের সাথে দেখা করার কথা ছিল?
-হুম
.
রাত্রীর কথাতেই হঠাৎ মনে পড়ল ক্লাইন্টের সাথে দেখা করার কথা ছিল।বাট এভাবে দেখা করা সম্ভব নয়।তবে সব কিছু ইমেইল এ লেখা আছে। সেটাতে কাজ হয়ে যাওয়ার কথা।
তাই আমি ওকে বললাম,
-আমার একটা ইমেইল পাঠাতে হবে ক্লাইন্টের কাছে,,ল্যাপটপের ড্রাফট এ আছে।দুপুরে পাঠিয়ে দিয়েন।
-আচ্ছা,,আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করেন।
.
মাথায় পানি পড়ার কারণে খুব ভাল লাগছিল, সাথে ঘুম ও ধরছিল।তাই পুরোপুরি ঘুমাতে বেশি ক্ষন টাইম লাগলো না।
.
ঘুম ভাঙল বিকালের দিকে,মনে হল জর নেই।
পুরো সেরে উঠেছি,খুব ক্ষিদে পেল।তাই কিচেনে গেলাম, কিছু রান্না করে খেতে হবে।গিয়ে দেখি সব কিছু রান্না করা।
রাত্রী রান্না করে দিয়ে গেছে।ভালই হল।
.
খাবার বেড়ে নিয়ে গিয়ে টেবিলে এসে বসলাম।তখনি আমার ল্যাপটপের দিকে চোখ পরল।
হঠাৎ মনে হল রাত্রী কি ড্রাফট এর সব ইমেইল চেক করেছে নাকি?
ক্ষুধা মুহূর্তর মধ্য উড়ে গেল,আমি চেক করতে লাগলাম কি অবস্থা ইমেইল এর।
গিয়ে তো অবাক,রাত্রী কে লেখা ১৬৯ টা ইমেইল ছিল ড্রাফটে একটাও নেই।চেক করে দেখি সব রাত্রীকে ফরোয়ার্ড করা হয়ে গেছে।
.
অদ্ভুত এটা কে করল?রাত্রী?
আমি শেষ,রাত্রীকে মুখ দেখাব কি করে?
ভাবতেই একটা অনুশোচনা জাগছে মনে।
.
সেই দিন আর কোন কিছুতেই মন বসল না। পরের দিন অফিসে গেলাম।গিয়েই রাত্রীর সাথে কথা বলতে গেলাম, দেখি ও এরিয়ে গেল আমায়।
একটু খারাপ লাগল,আর এ জন্যও খারাপ লাগল এত দিন ধরে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম ওকে আমি পছন্দ করি ও কি কিছুই বোঝেনা।
.
চলে এলাম নিজের কেবিনে,কাজ পরেছিল অনেক।কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারলাম না।লাঞ্চ টাইম এ বের হলাম।
ক্যান্টিনের দিকে যাব তখনি পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠল,
-নয়ন সাহেব।
.
আমি পিছনে ঘুরে দেখি রাত্রী। ও আবার কেন?
ওর সাথে ল্যাপটপ ও দেখি।ইমেইল দেখিয়ে অপমান করার জন্য ডাকছে না তো?
.
রাত্রী আমার কাছে এসে বলল,
-কোথায় যাচ্ছেন?
-ক্যান্টিন,
-চলুন একসাথে যাই।
.
দুজনেই ক্যান্টিনে গিয়ে বসলাম।রাত্রী ওর খাবার বাসা থেকেই নিয়ে আসে,তাই আমার জন্য খাবার আমি অর্ডার দিতে যাব তখনি রাত্রী বলল,
-আমি এনেছি আপনার জন্য?
-কেন?
-জরের শরীর, বাইরের খাবার খেলে সমস্যা হবে তাই,
-ও আচ্ছা।ধন্যবাদ।
.
রাত্রীর প্রতি কিছুটা সন্দেহ হচ্ছিল,ইমেইল এর কথা কি রাত্রী ভুলে গেছে নাকি?
নাকি শেষ বারের মত খাওয়াচ্ছে।খাওয়ার পর দৌড় লাগাবে আমার পিছনে।
আমি ভয়ে ভয়ে খাওয়া শেষ করলাম।
.
ভেবেছিলাম খাওয়া শেষে ও কিছু বলবে কিন্তু তখনো রাত্রী কিছু বলল না,তাই দেখে আমি বললাম,
-কিছু বলবেন?
-কেন?
-না এমনি।
.
যখনি টেবিল থেকে উঠতে যাব তখনি রাত্রী বলে উঠল,
-নয়ন সাহেব।
.
আমি সাথে সাথে বসে বললাম,
-হুম,কিছু বলবেন।
-হুম,
.
রাত্রী ওর ল্যাপটপ টা টেবিলে উঠাল।তারপর ইমেইল গুলো বের করে ল্যাপটপ টা আমার দিকে ঘুরিয়ে বলল,
-কি এগুলা।
.
আমি চুপ করে রইলাম,কোন জবাব দিলাম না।রাত্রী আবার বলল,
-কি এগুলো,
.
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
-সরি,
.
আমি ভেবেছিলাম এবার রাত্রী কঠিন কিছু বলবে কিন্তু না, রাত্রী আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,
-ভাল কবিতা লেখেন তো আপনি,
-হুম,,একটু
-আমাকে পছন্দ করেন?
-একটু,
.
রাত্রী রাগ হয়ে বলল,
-একটু মানে কি?
-একটু না বেশী, খুব বেশি,
-আচ্ছা, এক কাজ করবেন।সুন্দর একটা কবিতে লিখে মেইল করবেন।রাত্রে একসাথে যাব,কিছু কথা আছে আরো।
-আচ্ছা।
.
এটুকু বলেই রাত্রী টেবিল থেকে উঠে চলে গেল।
খুশি হব না মন খারাপ করব বুঝলাম না,রাত্রী খোলামেল্য ভাবে কিছুই বলল না।
আমি আমার কেবিনে গিয়ে কবিতে বানাতে বসলাম।কিছুক্ষনের মধ্য কবিতাও লিখে শেষ করলাম।
.
বাইরের আকাশের অবস্থা খুব ভাল নয়।সম্ভবত আবার বৃষ্টি হবে।গাড়ি এখনো গ্যারেজে।ড্রাইভার বিকালে ফোন করেছিল।
এসব ভাবতেই ভাবতেই ফোন বেজে উঠল, রাত্রীর ফোন।
-হ্যালো,
-কই আপনি?
-কেবিনে
-বের হন,
-কেন?
-বৃষ্টি হতে পারে,
-আচ্ছা।
.
আমি আর রাত্রী দুজনেই অফিস থেকে বের হয়ে আসলাম।যে কোন সময় বৃষ্টি হতে পারে।
রাত্রীর হাতে অবশ্য ছাতা আছে।
রাত্রী বলল,
-লিখেছেন?
-হুম,
-বলুন,
.
যেই কবিতা শুরু করতে যাব তখনি বৃষ্টি শুরু হল।রাত্রী আমার দিকে ছাতা এগিয়ে দিয়ে বলল,
-নাও ছাতা,
.
এই প্রথম রাত্রী আমাকে তুমি করে বলল।আমি বললাম,
-কেন?
.
রাত্রী বলল,
-কেন আবার,জর আসলে তো আমাকেই কষ্ট করে সারাতে হবে,
-কেন?
-বোঝনা কেন?
.
আমার মাথায় সত্যি কিছুই আসছিল না,তাই বললাম,
-নাহ,
-বুঝতে হবেও না,
রাত্রী ছাতাটা খুলে বলল,
-আসো ছাতার নিচে,
.
আমি একটু সরে এসে বললাম,
-আগে বোঝাও,তারপর ছাতার নিচে যাব।
আমিও তুমি করে বললাম।
.
রাত্রী কিছু বলল না,
-আমার হাত টা ধরে ছাতার ভেতর নিয়ে আসল।
.
আমি এতেই বুঝে গেছি সব।আমি রাত্রী র হাত থেকে ছাতা টা নিয়ে ফেলে দিলাম।
রাত্রী বলল,
-কি কর?আবার জর ধরাবা?
-হুম,
-কেন?
-সারিয়ে তোলার কেউ থাকলে জর ধরাতে সমস্যা কি?
.
রাত্রী কিছু বলল না শুধু হাসল।আমি ওর হাত টা ধরে ফেললাম,দুজনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাটতে লাগলাম।
.
পৃথিবী দেখতে লাগল দুজন মানব মানবীর বৃষ্টি প্রেম।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০২