somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে দুই ভাইয়ের ইসলাম গ্রহনের ঘটনা।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় ভাইয়ের ঘটনাঃ ছোট ভাইয়ের মুখেঃ

নওমুসলিম নূর মুহাম্মদ(পূর্ব নাম রামফল) ভারতের ফুলাতে বসবাসরত পীরে কামেল মাওলানা কালিম সিদ্দীকী (দা.বা.) এর ছেলে আহমদ আওয়াহ-এর সাথে সাক্ষাতকারে তাঁর এবং তাঁর বড় ভাই জয়পালের মুসলিম হওয়ার ঘটনা বলছেন………………………….

আমার সেই বড় ভাইয়ের নাম ছিল জয়পাল। তিনি খাতুলীতে মীরাটের লালাদের ফার্মে চাকুরি করতেন।

বড় ভাই ছিলেন বড়ই ধার্মিক, সজ্জন ও রহমদিল মানুষ। কোন দুঃখী মানূষের দুঃখ-কষ্ট তিনি দেখতে পারতেন না। আহত জীব-জানোয়ার দেখলে তিনি পেরেশান হয়ে যেতেন। ফুল ও গাছ-গাছালীর চারা দেখলে তিনি এড়িয়ে যেতেন।

বড্ড ভাবুক কিসিমের লোক ছিলেন তিনি। তারকা রাজি দেখলে অস্থির হয়ে উঠতেন, উঠে বসে পড়তেন। সারাটা রাত মালিকের তা’রীফ করতেন।

তাঁর কারখানার পাশে ফুলাতের দু’জন লোকের দোকান ছিল-যারা ফার্নিচার ইত্যাদি বানাত। তাদের দোকানে আপনার বাবা(মাওলানা কালিম সাহেব) মাঝে-মধ্যে আসতেন। বড় ভাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। সেখানে আরো দু’-চার জন লোক জমা হত, মাওলানা সাহেব তাদেরকে ইসলামের কথা শোনাতেন। আমার ভাই সেসব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। ইসলামের কথা তিনি এত মনোযোগ দিয়ে শুনতেন যে, তার সম্পর্কে মাওলানা সাহেব বলেন, আমার ধারনাই ছিল না যে, এই লোকটি হিন্দু।

আগস্ট মাসে খাতুলীতে ছড়ির মেলা বসত। অন্যান্য বছরের মত ১৯৯০ সালে মেলা বসতে যাচ্ছিল। মাওলানা সাহেব বলেন যে, আমি সে সময় সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন সেই ফার্নিচার দোকানের কাসীমুদ্দীন দ্রুতগতিতে এসে আমাকে সালাম দিল এবং বলল, দাদরীতে মীরাওয়ালাদের কারখানায় এক গোজর থাকে। সে আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য ছটফট করছে। আপনি পাঁচমিনিটের জন্য তার সঙ্গে দেখা করে গেলে ভাল হয়।

তখন মাওলানা সাহেব সেই ফার্নিচারের দোকানে এসে বসেন এবং মীরাওয়ালাদের কারখানা থেকে আমার বড় ভাইকে ডাকিয়ে আনেন। বড় ভাই এসে মাওলানা সাহেবকে ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে বলেন, ‘মাওলানা সাহেব! আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম- একটি খুব সুন্দর ও সুদৃশ্য স্বর্গ-রথ। এর উপর বহু হুজুর উপবিষ্ট। আপনি সেই রথ চালাচ্ছেন। আপনারা সামনের এক বিরাট প্রাসাদের দিকে যাচ্ছেন, যা খুবই মনোরম ও সুন্দর, যা হীরা দ্বারা নির্মিত ও কাচেঁর গোলাকৃতি বেলুন দ্বারা সজ্জিত ছিল। তার আটটি দরজা ছিল। লোকজন বলতে লাগল, এটি স্বর্গ। আমি এটা শুনতেই রথ ধরে ঝুলতে থাকলাম সেই স্বর্গে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আপনি আমার হাত ধরে নামিয়ে দিলেন এই বলে যে, তুমি হিন্দু! তুমি এ অবস্থায় স্বর্গে যেতে পার না। তখন আপনারা সকলেই স্বর্গে চলে গেলেন আর আমি দাড়িয়ে কাঁদতে থাকলাম। এই বলে বড় ভাই মাওলানা সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘মাওলানা সাহেব! আপনি আমাকে স্বর্গে যেতে দিলেন না কেন? আপনার কী ক্ষতি হত?

মাওলানা সাহেব তাকে স্বান্তনা দিলেন এবং বললেন যে, ‘ভাই! আমি তো এই স্বপ্ন সম্পর্কে জানিও না। কাউকে স্বর্গে বা মুসলিম পরিভাষা অনুযায়ী জান্নাতে যাওয়া থেকে বাধা দেবার কোন অধিকার আমার নেই। আসলে জান্নাতে যাওয়া থেকে তিনি বাধা দিয়েছেন-যিনি জান্নাতের মালিক। তাঁর আইন হল , তিনি কেবল ঈমানদারদের ও মুসলমানদের জন্য জান্নাত বানিয়েছেন। সত্যি কথা হল, যিনি ঈমান না আনবেন এবং মুসলমান না হবেন, এই দুনিয়াতেও তার থাকার ও বসবাসের কোন অধিকার নেই। যেহেতু তার নিকট সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত ন্যাশনালিটি বা জাতীয়তা নেই। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে-ঈমানবিহীন মানুষ বিদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতকের মত দুনিয়াতে থাকে।

এরপর মাওলানা সাহেব বলেন, ‘এই দুনিয়ার মালিক এক ও একক মা’বূদ মহান আল্লাহ। তিনি তাঁর দুনিয়ার মানুষের জন্য এক ইসলামের আইন তাঁর সত্য নবী মুহাম্মদ(সাঃ)-এর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। যেসব লোক সেই এক ও একক মালিককে মানবে না এবং তাঁর প্রদত্ত ইসলামের আইন মানবে না, তারা তো আল্লাহদ্রোহী ও গাদ্দার –যাদের দুনিয়াতেই থাকার ও বসবাসের কোন অধিকার নেই; অতএব, তারা কীভাবে বেহেশতে যাবে? আপনি যদি বেহেশতে যেতে চান, তাহলে আপনি কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান। আজ তো স্বপ্ন দেখে এতটা পস্তাচ্ছেন, কিন্তু যে মৃত্যুর ব্যাপারে আদৌ জানা নেই-তা কখন আসবে, সেই মৃত্যুর পর আল্লাহ না করুন, আপনি যদি মুসলমান না হয়ে মারা যান, তাহলে এই স্বপ্ন বাস্তব সত্যে পরিণত হবে এবং এরপর আর সেখান থেকে ফিরেও আসতে পারবেন না।

বড় ভাই বললেন, ‘দাদরীর মত গ্রামের আজকের এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার যুগে যদি আমি মুসলমান হয়ে যাই, তাহলে আমার ঘরের লোকেরাই আমাকে মেরে ফেলবে’।

মাওলানা সাহেব বললেন, ‘মেরে ফেললে তো আপনি শহীদ হয়ে যাবেন এবং আরও তাড়াতাড়ি জা্ন্নাতে চলে যাবেন’।

বড়ভাই বললেন, ‘আমি যদি মুসলমান হই, তাহলে আমাকে ঘর ছাড়তে হবে। এরপর আমি থাকব কোথায়?’

মাওলানা সাহেব বললেন, ‘আপনি ফুলাত চলে আসবেন এবং আমাদের এখানে থাকবেন’।

বড় ভাই বললেন, ‘আমি দু’-চার দিনের মধ্যেই বাড়ীর লোকদেরকে বলে আপনার ওখানে পৌছে যাব’।

মাওলানা সাহেব বললেন, ‘দেখা করেই অবিলম্বে যেন ফুলাত চলে আসেন’।

মাওলানা সাহেব বলেন, মনে করেছিলাম যে, দু’-চার দিনের মধ্যেই জয়পাল ভাই ফুলাত এসে যাবেন। কিন্তু তিনি আসলেন না।

নভেম্বরের শেষের দিকে একদিন মাওলানা সাহেব যোহরের নামাযের জন্য বের হলে দেখতে পান-জয়পাল ভাই বাইরে বসে আছেন। কিছু ফলমূল ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন। মাওলানা সাহেব আসা মাত্রই ভাই ওঠে দাঁড়ালেন এবং মাওলানা সাহেবের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন। অতঃপর বললেন, মাওলানা সাহেব আপনি ভেবে থাকবেন যে, জয়পাল ধোকাঁ দিয়েছে। আসলে আমার নামে কিছু জমি-জমা ছিল। আমার মা আছেন। আমি ভাবলাম যে, মায়ের সেবা করা তার প্রাপ্য হক। আমিতো এখন চলে যাবো। তাহলে তাঁর সেবার কী হবে? এই ভেবে আমি আমার ভাতিজাকে ডেকে পাঠাই এবং তাকে কসম দিয়ে তার থেকে ওয়াদা নেই যে, আমি আমার সমস্ত জমি-জমা তোমার নামে দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু শর্ত হল, তুমি আমার মাকে অর্থাৎ তোমার দাদীকে অন্তর দিয়ে সেবা করবে। সে এ শর্তে রাজী হল। জমি-জমা ও ঘরের অংশ তার নামে করতে এত সময় লেগে গেল। সবকিছু সমাধা করে এখন আমি এসে গেছি। আমাকে মুসলমান বানিয়ে দিন।

মাওলানা সাহেব তাকে সাথে করে মসজিদে নিয়ে গেলেন এবং তাকে গোসলের নিয়ম-কানুন বলে মসজিদের গোসলখানায় গোসল করতে বললেন। ফুলাতে তখন একটি আরব জামা’আত এসেছিল। তাই মসজিদ ভর্তি লোক ছিল। সবাই দেখে ভাবতে থাকেন যে, মাওলানা সাহেব একজন অপরিচিত লোককে ভেতরে নিয়ে যাচ্চেন কেন?

ভাইয়ের গোসল শেষ হলে, যোহরের নামাযের কিছু পূর্বে মাওলানা সাহেব ভাইকে মসজিদের ভেতর-অংশে নিয়ে যান এবং তাকে কালেমা পড়ান। মাওলানা সাহেব বড় ভাইকে ইসলামে দীক্ষিত করে তার নাম রাখেন নূর মুহাম্মদ।

ইতোমধ্যে জামা’আত দাড়িয়ে গেল। মাওলানা সাহেব ভাইকে নিজের বরাবর জামা’আতে দাড় করিয়ে দেন।

বড় ভাই মুসলমান হওয়ার পর জীবনের প্রথম নামায পড়ে হৃদয়ে অভূতপূর্ব প্রশান্তি অনুভব করেন। অতঃপর মাওলানা সাহেবের ঘরে গিয়ে খানা খান।

আসরের নামাযের সময় তিনি আবার মসজিদে আসেন। তখন আরবের লোকদের সাথে ভাইকে মাওলানা সাহেব পরিচয় করে দেন। ভাই সাহেবকে তাদের ভাল লাগে। রাত্রে তিনি তাদের সাথে থাকেন।

পরদিন ছিল রবিবার। আরবের তাবলীগী জামা’আত মীরাট যাবার কথা। বড় ভাই মাওলানা সাহেবকে বললেন, আমার মন চাচ্ছে এই জামা’আতের সঙ্গে যেতে। মাওলানা সাহেব গুজরাটের অধিবাসী আমীর সাহেবের সঙ্গে বড় ভাইকে দেখা করিয়ে তার ইচ্ছার কথা জানান। আমীর সাহেব এতে খুশি হন এবং বহু পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও মাওলানা সাহেব থেকে তার খরচ বাবদ কিছুই নেননি।

সেদিনই পরন্ত বেলায় জামা’আত মীরাট পৌছে যায়। বড় ভাই সমস্ত আমলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের সাথে শামিল হন।

অতঃপর পরদিন সোমবার ভোরে ফজরের নামাযের পর মুযাকার ও নামাযের দু’আ প্রভৃতি মুখস্ত করাবার জন্য যিম্মাদার সাহেব নূর মুহাম্মদকে তালাশ করেন। এ সময় একজন বললেন, ফজর থেকে তাকে দেখছি না। শেষরাতে তাকে মসজিদের ভিতরে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে দেখেছি।

তখন তালাশের নিমিত্ত এক সাথী মসজিদের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, সদরী বরাবর একটি আলাদা অংশে বড় ভাই সিজদারত। সাথী তাকে ডাকলে তিনি সাড়া দিলেন না। সাথীটি ধারনা করলেন, সম্ভবত তিনি সিজদার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই তাকে জাগাবার জন্য ঠেলা দিলেন। তখন জানা গেল-তিনি চিরদিনের জন্য রহমতের ছায়াতলে ঘুমিয়ে গেছেন।

সর্বমোট ৯ ওয়াক্ত ফরজ নামায ও একরাতের তাহাজ্জুদ নামায তাঁর নসীব হয়েছিল। আর সেই তাহাজ্জুদেই মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যের সিজদায় তিনি মহান আল্লাহর নিকট চলে যান চিরদিনের জন্যে। যে-ই তার এ ঘটনা শুনতো, এ ধরনের মৃত্যুর জন্য আকাঙ্ক্ষা জাহির করতো। সেদিনই যোহরের নামাযের সময় জানাযা শেষে মীরাটেই তাকে দাফন করা হয়।

ছোট ভাইের ঘটনাঃ

বহুকাল পর্যন্ত আমরা জানতেই পারিনি যে, ভাই ইন্তিকাল করেছেন। কিন্তু তিনি আমার ছেলেকে প্রায়ই স্বপ্নে দেখা দিতেন। বেশীরভাগ সময় ইসলামী পোশাকে টুপি, কোর্তা ও দাড়িসহ তিনি দেখা দিতেন।

একবার তিনি আমার ছেলেকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, বেটা! আমি আমার সব জমি-জমা তোমার নামে করে দিয়েছি। তুমি আমার এক কাজ করে দাও। এক ডজন কলা নিয়ে ফুলাতে বড় মাওলানা সাহেবকে পৌছে দাও।

স্বপ্ন থেকে জেগেই আমার ছেলে রওনা হয়ে গেল। সে খাতুলী থেকে এক ডজন কলা কিনে নিল এবং তা ফুলাত নিয়ে গেল। সেখানে পৌছলে মসজিদের খাদেম সাহেব তাকে আপনাদের বাড়ীতে নিয়ে যান। মাওলানা সাহেব তখন বাড়ীতে ছিলেন না। তিনি লক্ষ্মৌ গিয়েছিলেন। আমার ছেলে সেই কলা মাওলানা সাহেবের ভগ্নিপতিকে দিয়ে আসে এই বলে যে, মাওলানা সাহেবকে বলবেন, দাদরীর জয়পাল এই কলা পাঠিয়েছে।

এরপর আরেকবার বড় ভাই আমার ছেলেকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, মাওলানা সাহেবকে এক কেজি মিষ্টি ফুলাত গিয়ে দিয়ে এসো। তৎক্ষণাত আমার ছেলে মিষ্টি নিয়ে ফুলাত গিয়ে মাওলানা সাহেবকে দিয়ে আসে। এভাবে ভাই নূর মুহাম্মদ(জয়পাল) মারা যাওয়ার পর কয়েকবার মাওলানা সাহেবকে হাদিয়া পাঠিয়েছেন। বিঃ দ্রঃ জয়পাল ও রামফল উভয়ের নাম নূর মুহাম্মদ। একটু পরই তা অবগত হবেন।

এরপর একদিন এক ঘটনা ঘটল। আমাদের গ্রামে একজন বড় ও শক্তিশালী মানূষ কিছু গরীব ও দুর্বল লোকের ওপর খুব অত্যাচার করতেছিল। এতে আমার মন খুবই দুঃখিত ও বেদনার্ত হয়ে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম এল না। মনে মনে মালিকের কাছে অভিযোগ পেশ করতে থাকলাম যে, মালিক যখন সবকিছু দেখছেন, তখন এই অত্যাচার কেন হয়?

সেদিন অনেক রাতে ঘুম এল। তখন স্বপ্নে দেখলাম, অনেক লোকের ভিড় একদিকে চলে যাচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম, এত লোক কোথায় যাচ্ছে? হঠাৎ দেখলাম, সেখানে আমার বড় ভাই রয়েছেন! তিনি আমার কথার উত্তর দিয়ে বললেন, ‘এসব লোক ফুলাত যাচ্ছে মুসলমান হতে এবং মুসলমান হয়ে স্বর্গে যেতে। রামফল! জলদী কর! নইলে তুমি পেছনে পড়ে যাবে। জলদী যাও, জলদী! ফুলাত গিয়ে মাওলানা সাহেবকে বলবে, আমাকে মুসলমান বানিয়ে দিন, যাতে আমি স্বর্গে যেতে পারি। আমি তো আমার মালিকের দয়ায় স্বর্গে এসে গেছি।

আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি স্বপ্ন খুব কম দেখি। তাই স্বপ্নের প্রতি আমার তেমন ভ্রক্ষেপ থাকে না। কিন্তু এই স্বপ্ন আমাকে অস্থির করে তুলল। এক পর্যায়ে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, হ্যাঁ, আমি ভাই সাহেবের মত স্বর্গে যাব, আমি মুসলমান হব।

সকাল হল। আমি দেরী না করে রওয়ানা হয়ে গেলাম এবং কিছুসময়ের মধ্যেই ফুলাত পৌছলাম। মাওলানা সাহেবের খোজে আমি সেখানকার বড় মসজিদে গেলাম। মসজিদের মোল্লাজী আমাকে মাওলানা সাহেবের বাসায় নিয়ে গেলেন।

কিন্তু মাওলানা সাহেবকে পেলাম না। তিনি কোথাও সফরে গিয়েছিলেন। জানতে পারলাম, তিনদিনের মধ্যে তিনি আসবেন। তাই আমি সেখানেই অপেক্ষা করতে থাকলাম।

তিনদিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা হল। কিন্তু মাওলানা সাহেব আসতে পারেননি। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পেলাম, মাওলানা সাহেব রাত দেড়টায় এসে পৌছেছেন। দিনটা ছিল সোমবার আর এ দিনটি ছিল মাওলানা সাহেবের ফুলাতে থাকার দিন।

সকাল থেকেই লোকজনের আসা শুরু হল। মাওলানা সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাত করে লোকজন বিদায় নিতে লাগল। আমার পালা এল দেরিতে। ৯ টার সময় মাওলানা সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হল।

আমি মাওলানা সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি দাদরীর জয়পালকে চিনেন? তিনি বললেন, খুব ভাল করেই চিনি। তিনি আমার কাছে এসেছিলেন। এরপর মাওলানা সাহেব ভাইজানের ইসলাম গ্রহনের পুরো কাহিনী আমাকে শুনালেন।

অতঃপর আমি আমার স্বপ্নের কথা প্রকাশ করলাম। মাওলানা সাহেব তা শুনে আমাকে মুবারকবাদ দিলেন এবং বললেন, আজ রাতেই আমি নূর মুহাম্মদকে(জয়পাল) স্বপ্নে দেখেছি। দেখলাম, তিনি খুব সুন্দর বেশ-ভূষায় সজ্জিত। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার ছোট ভাই রামফল আসছে। তাকে মুসলমান না হয়ে যেতে দেবেন না’।

সে মুহূর্তে মাওলানা সাহেব আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন এবং বললেন, ‘আপনিই কি নূর মুহাম্মদের ছোট ভাই রামফল?’

আমার না বলা স্বত্ত্বেও মাওলানা সাহেব আমার নাম বললেন! তা শুনে আমার স্বপ্ন সত্য হওয়ার ব্যাপারে মনে প্রত্যয় জন্মাল। তখন আমি মাওলানা সাহেবকে আমার নিজের মুসলমান হওয়ার ইচ্ছার কথা বললাম।

তা শুনে তিনি খুব খুশী হলেন এবং আমাকে কালেমা পড়ালেন। অতঃপর বললেন, আপনি যদি ইসলামী নাম রাখতে চান, তাহলে পূর্বের নাম পাল্টাতে পারেন। আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি আমার নাম রেখে দিন। আরও ভাল হয়, যে নাম নিয়ে আমার বড় ভাই স্বর্গে গেছেন, আপনি যদি আমারও সেই নাম রাখেন। আমার নাম কি নূর মুহাম্মদ রাখা যায়? মাওলানা সাহেব বললেন, এতে অসুবিধা নেই। এই বলে তিনি আমার নাম ‘নূর মুহাম্মদ’ রাখলেন। অতঃপর সেখানে আরো একদিন থেকে আমি দাদরীতে নিজের বাড়ীতে চলে এলাম।
বাড়ীতে গিয়ে আবেগ ও উদ্দীপনার সাথে পরদিনই আমি আমার স্ত্রীকে আমার ইসলাম গ্রহণের পুরো কাহিনীটি বলে দিলাম। কিন্তু সে শুনে খুব অসন্তুষ্ট হলো এবং আমার গোটা পরিবারে ব্যাপারটা ফাঁস করে দিল।

আমার চাচা ছিলেন গ্রামের প্রধান। আমাকে নিয়ে গ্রামে পঞ্চায়েত বসল। কেউ কেউ বলল, তার মুখে কালি মেখে গাধার পিঠে বসিয়ে সারা গ্রামে ঘুরাও। কেউ মত দিল, তাকে গুলী করে মেরে ফেল। সে ধর্মচ্যুত হয়ে গেছে।

আমাদের গ্রামে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ছিলেন। তিনিও ছিলেন এ পঞ্চায়েতে। তিনি বললেন, এই যুগ হলো যুক্তি-প্রমাণের যুগ। আপনারা তাকে বোঝান এবং প্রমাণ করুন যে, হিন্দুধর্ম ইসলামের তুলনায় ভলো। জোর-যবরদস্তি করে আপনারা তার দিল পাল্টাতে পারবেন না। তাই ভালো হয় যদি আপনারা তাকে চিন্তা-ভাবনার জন্য সময় দেন এবং বুঝিয়ে শুধরাবার চেষ্টা করেন। যেহেতু তিনি শ্রদ্ধেয় ও সন্মানিত লোক ছিলেন, তাই তাঁর কথার ওপরই পঞ্চায়েতে ফায়সালা দেয়া হয়।

সেই অনুযায়ী বাড়ীতে এনে আমার মা আমাকে খুব বোঝাতে লাগলেন। তদুপরি তাঁর ধারণা ছিল, ফুলাতওয়ালাগণ আমার ওপর যাদু করেছেন। তাই সেই যাদুর ক্রিয়া থেকে আমাকে মুক্ত করবার জন্য তিনি আমাকে ফালাওদাহ নিয়ে গেলেন।

সেখানে পৌছে চেয়ারম্যানের পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করতে লাগলেন-যিনি এসব ঝাড়-ফুকের উস্তাদ ছিলেন এবং তাকে বললেন যে, আমার ছেলের ওপর যাদু করা হয়েছে। ফলে সে হিন্দুধর্ম ছেড়ে মুসলমানদের ধর্ম গ্রহণ করেছে। আপনি আমার ওপর দয়া করুন। তার ওপর কৃত যাদুকে নষ্ট করে দিন। যেন সে আমাদের ধর্মে ফিরে আসে।

চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে পরীক্ষা করে দেখলেন যে, আমি ঠিক আছি। তখন মাকে বুঝিয়ে সান্ত্বনা দিলেন এই বলে যে, তার ওপর কোনো যাদু নেই। তার ওপর মালিকের স্রোত বয়ে চলেছে। আপনি একে সমস্যা মনে করলে আপনি নিজেই ফুলাতওয়ালাগণের নিকট যান। তারা খুব মেহমান-নাওয়ায। তারা দুঃখী-অসহায় মানুষকে সাহায্য করেন।

এ কথা শুনে মা হতাশাগ্রস্ত হয়ে আমাকে নিয়ে ফিরে এলেন। তখন মাকে বিভিন্নভাবে বুঝালাম যে, মা! আপনিও মুসলমান হয়ে যান। কিন্তু মা উত্তর না দিয়ে বিষন্ন হয়েই রইলেন।

আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে সবচেয়ে বেশী আমাদের চাচা প্রধানজী কষ্ট পান। তিনি বলতে থাকেন, রামফল আমাদের সমাজে মুখ দেখাবার মতো অবস্থা রাখেনি। তিনি এ নিয়ে অনেক বাকবিতন্ডা করেন। কিন্তু আমি বশ্যতা স্বীকারের পরিবর্তে তাকেও ইসলামের কথা শুনাই এবং ইসলাম গ্রহণের জন্য দাওয়াত দেই।

পরিশেষে তিনি আমাকে বশ করতে না পেরে একদিন পূর্ণিমার অনুষ্ঠানের নাম করে আমাকে দাওয়াত দিলেন। আল্লাহর কী মহিমা, সেদিনই রাত্রে আমি স্বপ্নে মাওলানা সাহেবকে দেখলাম, তিনি আমাকে বলছেন, পূর্ণিমার দাওয়াতে ক্ষীরের যেই পেয়ালা তোমার সামনে দিবে-তার ভেতর বিষ মেশানো, তা কখনো খাবে না।

সেই দাওয়াতে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু চাচার জোরাজুরির কারণে যেতে বাধ্য হলাম।

কী আশ্চর্য ব্যাপার, স্বপ্নে যা দেখেছিলাম, বাস্তবেও তেমনটিই পেলাম। আমার চাচা আমার সামনে ক্ষীরের পেয়ালা রাখলেন। আমি রুটি খেতে শুরু করলাম এবং সুযোগ বুঝে সেই পেয়ালা চাচার সামনে ঠেলে দিলাম। তিনি তা জানতে পারেননি।

চাচা সেখান থেকে দু’-তিন চামচ ক্ষীর খেতেই এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। তিনি কেমন যেন করতে লাগলেন।

তাৎক্ষনিকভাবে তার চিকিৎসা করতে তাকে মীরাটে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু বিষক্রিয়ায় সেখানেই তিনি মারা গেলেন।

তার অন্তেষ্টিক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমি ফুলাতে এসে মাওলান সাহেবকে সমস্ত ঘটনা শুনালাম এবং তাঁর কাছ থেকে জানতে চাইলাম, আপনি কীভাবে জানতে পারলেন যে, ক্ষীরে বিষ মেশানো হয়েছে?

মাওলানা সাহেব বললেন, আমি তো এর কিছুই জানি না। আর গায়েব(অদৃশ্য)-এর খবর আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কেউ জানেনা। বরং আল্লাহ তা’আলাই তাঁর বান্দাকে বাচিয়ে থাকেন এবং যার সঙ্গে তার মুহাব্বত হয় তার আকৃতিতে স্বীয় ফেরেশতা পাঠিয়ে পথ দেখান। তাইতো তাকে মেহেরবান রব বলা হয়।

বাড়ীতে গিয়ে মাকে এসব ঘটনা বিস্তারিত খুলে বললাম। আমার হিন্দুধর্ম ত্যাগ সত্ত্বেও চাচার এই শত্রুতা মায়ের খুব খারাপ লাগে এবং এ ঘটনার কারণে তিনি ইসলামের খুব কাছাকাছি এসে যান।

চাচার দুই ছেলে এরপর থেকে আমার জানের দুশমন হয়ে গেল। অপরদিকে আমি নিত্যকার ঝগড়া-বিবাদের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়লাম। তাই সবদিক চিন্তা করে গ্রাম ছেড়ে ফুলাতে এসে থাকতে শুরু করলাম।

কিন্তু আমার বাড়ীর লোকেরা এখানেও আমার পিছু নিল। তবে এখানে তার তেমন কিছু করতে পারল না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৫১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×