somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হে মাইরজীবন - রীতিমতো অপমান

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ, স্নাতক, স্নাতকোত্তর মিলিয়ে গড় আয়ুর প্রায় অর্ধেক ই শেষ করে ফেলেছি। দি লাঞ্চবক্স সিনেমায় একটা সুন্দর ডায়ালগ শুনেছিলাম, বলার মানুষ না থাকলে নাকি মানুষ তার ঘটনা ভুলে যায়। আমার ও ভুলে যাওয়া ঘটনা বলার জন্য মনে পড়লো নতুন করে।



আমার প্রাইমারী স্কুলে আবুল কাশেম স্যার হেড মাস্টার ছিলেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি কথা বলতেন কম, এক্সপ্রেশনিস্ট ছিলেন বেশি। তাঁর ইয়া বড় শরীর, কখনো কখনো শুধু নাম ই ভয় পাইয়ে দিতো আমাদের। দুই আঙ্গুলে পেট এর চামড়া চিমটি দিয়ে ধরা উনার মজার একটা শাস্তি ছিলো। ব্যাথা তে কোঁকানোর মতো সাহস ও ছিলো না আমাদের। স্যার গত হয়েছেন কয়েক বছর হলো। তবে স্কুলে সবচাইতে বেশি মজার শাস্তি দিতেন গোলাম কাবির স্যার, এক আঙ্গুলে কানের লতি তে থাপ্পড় দেওয়ার মতো এক বৈজ্ঞানিক কৌশল এর জনক ছিলেন বলা যায়।

প্রায় ক্লাশ থ্রি তে এক শিক্ষিকা এসে আমাদের অবাক করে দিলেন। তিনি কখনো মারতেন বলে মনে পড়ে না, এমনকি একটু আধটু ধমক ও মনে পড়ে না। তাঁর এই নতুন থিওরি আমাদের কাছে বিস্ময়কর ছিলো। তিনি আমাদের “উই শ্যাল ওভার কাম” শেখালেন, স্কুলের বই এর বাইরেও অনেক বই পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিলেন, মজার মজার কিছু বোর্ড গেইম ও নিয়ে এসেছিলেন আমাদের জন্য। আমরা তো স্বপ্নে আছি এরকম একটা পরিস্থিতি। এর পরে আরো ২ জন শিক্ষক পেয়েছিলাম যাঁরা নিতান্তই নীরিহ মানুষ। মারতেন না কখনো।

ক্লাস সিক্স এ ভর্তি’র প্রথম দিনেই মন্জুর স্যার নামের স্যার এর শাস্তি দেওয়ার কথা মনে পড়ে। স্যার শরীরে অনেক খাটো ছিলেন, বামুন। কাউকে মারার আগে তাঁর লেভেলে নিচু হতে বলতেন। তারপর উনার কনুই দিয়ে সজোরে ঘুষি মারতেন। মাইরে কোন শব্দ হতো না, ভেতর থেকে ক্ষীন একটা কুঁ শব্দ পেতাম শুধু। স্যার এর ভয়ে সবাই এত ভীত ছিলো যে এক আঙ্গুল তুলতেই এসেমব্লির লাইন ঠিক হয়ে যেতো। হেড স্যার ও এত পাওয়ার ফুল ছিলেন না মনে হয়।



স্কুলের ধর্ম স্যার ছিলেন, মাইর এর আগে বা পরে কোন কথা বলতেন না। উনার নির্দেশনা উনি প্রথম দিনেই পরিস্কার করে দিয়েছিলেন আমাদের কাছে। পড়া পারলে বসবে, না পারলে নিজে থেকেই নীল ডাউন হয়ে হাঁটুর ভরে সীট বেঞ্চে শাস্তি ভোগ করবে। ক্লাশ শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে উনি বেত নিয়ে পেছন থেকে আসতেন আর সপাৎ সপাৎ করে শব্দ করে একেক জনকে বসাতেন। আমি প্রায় ৯০% দিন ই মার খেয়েছি এই স্যারের ক্লাশে।

ইয়াং স্যার আসছিলেন স্কুলে একজন, স্যার এখনো আছেন যাঁর অভিনব আবিস্কার হাত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। আমি প্রথম ২-৩ দিন দর্শক হিসেবে দেখে এটাকে খুবই হালকা শাস্তি ভেবে নিয়েছিলাম। তারপর একদিন হাঁসির কারনে ধরা খেয়ে বুঝলাম প্রায় ঘন্টাখানেক হাত সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খুব একটা সহজ না। অভিনব কিছু শাস্তির জনক ছিলেন তিনি।

ক্লাশ সেভেন এ বিশালি রকমের রেজাল্ট খারাপ করায় বাড়ি থেকে একটা প্রাইভেট সেন্টারের সাথে বাবা-মা এর হাড় মাংসের চুক্তি করা হলো। ওই প্রাইভেট তখন মাইর এর শীর্ষে। চুক্তি হলো যে মাংস তোমার আর হাড় আমাদের। মেরে ধুয়ে ফেললেও বাসা থেকে কোন আপত্তি নাই। একবার আমার মনে আছে, মার এর দাগ লুকানোর জন্য আমি গরমের শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। বাড়িতে দেখলে হয়তো আরো ডাবল থেরাপী দিতো। তবে একটা জিনিস ভালো হয়েছিলো তখন। আমার ইংরেজী বেইজ এর প্রায় ৭০% ই তৈরি হয়েছিলো এই প্রাইভেট সেন্টারে।



কলেজ এ আঙ্গুল এর ইশারায় সবাইকে পাথর বানিয়ে দেওয়ার কারিগর আরেক স্যার কে পেয়েছিলাম। কেমিস্ট্রি এর শিক্ষক কাম আমাদের ক্লাশ টিচার কাম হেয়ার স্টাইলিস্ট। আমি যে কলেজে পড়তাম সেটা ধনী’র বিগড়ে যাওয়া দুলালদের জন্য মুটামুটি একটা শোধনাগার হিসেবেই পরিচিত ছিলো। আমরা কোনদিন ক্যামেরা ফোন নিয়ে গেইট পাস করার কথা ভাবিনি। পাসপোর্ট সাইজ ছবি ছাড়া কলেজের সময়কার আর কোন ছবি নাই আমার। ক্লাশ টিচার ক্লাসে আসতেন মার্কার, খাতা আর একটা কাঁচি নিয়ে। ক্লাশ শেষে কাউকে না কাউকে চুল এর কিয়দাংশ সাইজ করে দিতেন, বাকিটা সেলুনে না কাটিয়ে মুখ দেখানোর উপায় থাকতো না।

এত মার খেয়েছি, এক পাঁ খাড়া করে সবার সামনে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেছি, মাথায় বেত এর বাড়ি খেয়েছি, ব্যাঙ, টিকটিকি, মুরগি কত কিছু হয়েছি সব এখন মনেও পড়ে না। টিফিন খেয়ে সব ভুলে গেছি, বাসায় গিয়ে বাবা মাকে বলার সাহস মনেও আনতে পারিনি তখন। অপমান বোধ তো দূরেই থাক। এর পর ও কোনদিন মনেই হয়নি শিক্ষকরা ভুল করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৭
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×