জ্যাম আর ছুটিতে চাহে না। ওদিকে নিয়মিত ভেজাল খাইয়া বৎসর তিনেক ধরিয়া বহুমূত্র রোগে ভুগিতেছি। এই জ্যাম না ছুটিলে আমার পরিধেয় ধুতির ভবিষ্যত অন্ধকার। বিপদে পড়িয়া ইতিউতি তাকাইতেছিলাম। হঠাৎ রাস্তার ডানপার্শ্বের একটা সাইনবোর্ড আমার মনোযোগ আকর্ষণ করিল।
বর্তমানে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ নিত্য নতুন এতো আইডিয়া বাহির করিতে পারে তাহা বাংলাদেশে না আসিলে আসলে জানিতে পারিতাম না।
প্রস্রাব পাঁচটাকা। পায়... দশটাকা।
বাহ! উভয় পক্ষের লাভ।
নিরীহ পথচারিরা তাহাদের বর্জ্য ত্যাগ করিয়া কার্যভেদে পাঁচটাকা দশটাকা আয় করিতে পারিল। আবার এই ব্যবসায়ের মালিক ছোট ছোট লটে 'মাল' কিনিয়া সরকারের নিটক পাইকারি বিক্রয় করিয়া অনেক টাকা মুনাফা করিল। সরকার ইহা দ্বারা দেশ হইতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাইতে পারিল।
আমিও দেশে ফিরয়া এরুপ একটি ব্যবসায়ে মন দিবো বলিয়া ভাবিলাম। শুধু ত্যাগ করিয়ে আর কী উপার্জন হইবে! তাহার উপর ডায়াবেটিস হইবার পরে খাওয়া দাওয়াও কমিয়া গিয়াছে।
একটি জমি ক্রয় করিয়া তাহাতে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করিয়ে বেশ হইবে!
ইহা তরতিরকারির দোকান নহে যে মানুষের নিত্য আসিলেও চলিবে। বাপু, আসিতেই হইবেক!
আমি যেরুপ যাইতেছি।
কিন্তু আমি তো দুটি কাজেরই প্রয়োজন বোধ করিতেছি। টাকার লোভে কি না জানি না! কিন্তু এক কামরায় প্রবেশ করিয়া দুইটি কার্য করিলে 'বিনিয়োগের' তুলনায় আমার 'মুনাফা' কম হইতে পারে এই আশঙ্কায় প্রথমে ছোট কাজে মন দিলাম। ছোট কাজ শেষ করিয়া বড় কাজের জন্য নির্ধারিত কামরায় প্রবেশ কালে এই স্থলের আড়তদার কেমন করিয়া যেন আমার দিকে চাহিল।
বাপু, হে... আমার জালাকিটি ধরিতে পারিতেছো না বুঝি!
আমি আমার কার্য সম্পাদন করিয়ে তাহার কাউন্টারে দাঁড়াইলাম।
পনেরো টাকা পাইবো। একদিনে এরুপ তিন চারিবার ব্যবসা করিতে পারিলে ইয়াবার মূল্য লাইয়া আমাকে আর ভাবিতে হইবে না।
'হাগছুইন দশ ট্যাহা... মুতছুইন পাঁচ ট্যাহা.... মোটা হনরো ট্যাহা দিবেন।'
রাম রাম! বলে কী ছোঁকরা। প্রসন্ন গোয়ালিনীর ন্যায় আমার নিকট মূল্য চাহিতেছে!
ব্যবসায়ি আমাকে আশ্বস্ত করিল। এই স্থলে এরুপই নিয়ম।
পকেট হইতে তাহাকে পনের টাকা গণিয়া দিবার সময়ে নিজেকে কেন জানি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা মনে হইতেছিল।
আমারই জিনিস। আমি তাহাকে সম্প্রদান করিলাম। আমারই নিকট চড়া মূল্য চাহিতেছে!
পাষন্ড!
-------------
লিখাটি উন্মাদের ২০১৯ জানুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিক কমলাকান্ত যদি বাঁচিয়া থাকিতেন শিরোনামের একটা স্যাটায়ার গল্প এর অংশ মাত্র। লিখার এই অংশ পড়ে জোরে শব্দ করে মিনিট দশেক হেঁসেছি। কলিকালে এরকম লিখা চোখে পড়ে না তাই বিশাল এক ধন্যবাদনামা মনে মনে ঠিক করে লেখকিা মাসুমা মায়মুর এর প্রোফাইল গুগল করতে লাগলাম। কিন্তু লেখিকার কোন ডিজিটাল প্রোফাইল খুঁজে পেলাম না। এই লিখা কোথাও আগে বা পরে প্রকাশিত হয়নি তাই সার্চ রেজাল্ট এ কোন স্বস্তির ফলাফল পেলাম না।
মনস্থির করলাম পুরোটাই যদি টাইপ করে ফেলি ব্লগারদের জন্য। তারপরে মনে হলো এটা ঘোর অন্যায় হবে। বরং কিছু অংশ শেয়ার করা যায়। যার যার ভালো লাগবে উন্মাদ এর ৩৪১ তম সংখ্যা কিনে পড়ে ফেলতে পারেন। ৩০ টাকা গচ্চা যাবে না আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:১৪