নেপালে ভূমিকম্প উত্তর দূর্যোগ নিয়ে কূটনীতি হচ্ছে বিস্তর। এর মধ্যে আবার ধর্মীয় বিদ্বেষ ঢুকে যাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশের মত যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে ধর্মীয় বিদ্বেষের স্বাধীন চর্চা হচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে এর ডালপালা ছড়াচ্ছে। আজকাল বহু দাড়িটুপি থেকে শুরু করে ক্লিনশেভ এমনকি নাক টিপলে দুধ বের হয় এমন বাচ্চা পোলাপানরা পর্যন্ত পাকিস্তানের জন্য ব্যাকুল। অথচ এই পাকিস্তান ইসলামের নামে এই দেশে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, বিসমিল্লাহ বলে মদের বোতলে চুমুক দিয়ে নারায়ে তাকবির দিয়ে আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ করেছে। অথচ আজ আমরা বিস্মৃত। আমরা নেপালকে মালাউন বলে গালি দিচ্ছি, তাদের উপর আল্লাহর গজব পড়েছে বলে ফতোয়া দিচ্ছি। অথচ এর চেয়েও খারাপ অবস্থায় আমরা পড়তে পারি। বিজ্ঞানীরা সেই ভবিষ্যতবাণীই করছেন। অথচ সেদিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। এর আগে পাকিস্তান আর ইরানে ভূমিকম্পে হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছিল। কিন্তু সেটাকে সেইসব বিবেকবান মুসলমানরা আল্লাহর রহমত বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তখন আর সেটাকে গজব মনে হয়নি, বা তখন সুন্নীরা বলে শিয়াদের উপ্রে আল্লাহর গজব, আর শিয়ারা বলে সুন্নিদের উপ্রে আল্লাহর গজব। আমরা আর কতটা নিচে নামলে ভালো মুসলমান হব? আসল কথা হল যে আমরা নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে মিথ্যা আর ভ্রান্ত সাব্যস্ত করতে ভালোবাসি, এটা আমাদের মধ্যে একটা আলাদা ঈমানী জোশ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে আবার পাকিস্তান নাকি নেপালে ত্রানের সাথে বিফ মাসালা (এক ধরনের খাবার) পাঠাইসে। এই নিয়া ফেসবুকে হিন্দু মুসল্মান তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলতেসে। পাকি লাভাররা নেপালিদের গালি দিতে দিতে কাহিল। তারা অভিসম্পাত দিয়ে বলতেসে যে পাকিস্তানের হালাল পাক গোশত খেলে নেপালীদের পাপ মোচন হত, এখন না খেয়ে মর!! অথচ এটা আমাদের বেলায় হলে তখন কি বলত? আমাদের দেশে ঝড় সাইক্লোনে যদি আমেরিকা শুয়রের মাংস পাঠায় আর আমরা না খাই, তখন যদি তারা আমাদের না খেয়ে মরে যেতে বলে আর কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেয়, ভাল্লাগবে? ছোটবেলায় আমাদের পরিবার আর সমাজ এমনভাবে ধর্ম শিক্ষা দিয়েছে যে আমরা নিজের ধর্ম বাদে অন্য সব ধর্ম আর বিশ্বাসকে শুধু ঘৃণা করতে শিখেছি। আমাদের বাবা মা আত্মীয়স্বজন একটা কালো বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকেই বুঝিয়ে দেয় যে সে কালো। এর পর সেই মেয়ে একটু বড় হলেই শুরু হয় ফেয়ার এন্ড লাভলি মেখে ইয়ামী গৌতম হবার দীর্ঘ যাত্রা। আর ছেলে হলে সাইফ আলী খান হবার মিছে আশা। এভাবে আমরা আমাদের মনুষ্যত্বকে জন্মের সময়ই গলা টিপে হত্যা করছি। ধর্মের রোগে আমরা সবাই আক্রান্ত, ভগবান পৃথিবী বানিয়ে সেটাকে অটোমেটিক মোডে রেখে ছেড়ে দিয়েছেন, তাই কোথাও ঝড় হয়, কোথাও ভূমিকম্প। কেউ মরে যায় কেউ বেঁচে থাকে। এটা নিয়ে ঈশ্বরের কোন মাথা ব্যাথা নেই। যারা বেঘোরে মরে গেল তারা তো গেলই, যারা বেঁচে গেলো, তাদের উচিত ঈশ্বর কি ভাবলো সেটা না ভেবে নিজেকে বাঁচানো। কারণ তিনি আমাদের ঘটে যথেষ্ট বুদ্ধি দান করেছেন, এরকম পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে টিকে থাকি সেটাই তিনি দেখতে চান। কিন্তু আমরা মোল্লা-পুরোহিতদের সাজেশন মত প্রিপারেশন নেই তাই সেই পরীক্ষায় ফেল করি। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ না, তাই ধর্ম যখন আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে, তাকে কিছুদিনের জন্য ছুটি দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ঈশ্বর সদয় হলে তো আর মাথার উপ্রে সব ভেঙে পড়তো না, আর যেহেতু তিনি সদয় হননি, তাই তিনি কিসে দুঃখ পান আর কিসে খুশি হন সে কথা ভাবার অবকাশ আছে কি? এটা সবারই বোঝা উচিত। প্রিয় নেপাল, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০