লীনা তখন কিশোরী। বয়স হয়তো ১৭ এর কাছাকাছি। পাটকাঠির মত ছিল স্বাস্থ্য। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো সামনের শীত সম্ভবত লীনা পার করতে পারবেনা। তবে গত শীতটা সে পার করে এসেছে.....
আমরা যেদিন প্রথম একসাথে বের হলাম দিনটি ছিল বুধবার দুপুর বেলা। লীনা তখন স্কুল শেষে মাত্রই কলেজে পা রেখেছে। সেদিন অনেক মেঘ ছিল আকাশে। কিন্তু কেন জানি আকাশে বৃষ্টি হয়নি সেদিন। বৃষ্টি হয়েছিল আমাদের চোখের কোণা বেয়ে....
গাঢ় নীল পাড়ে হালকা নীলের মাঝে হাতের কাজ করা একটা শাড়ী পড়ে এসেছিলো লীনা। সাথে ম্যাচ করা নীল ব্লাউজ। দুটোই ছিল ওর মায়ের। আমার নীল শাড়ী প্রিয় বলে চুরি করেছিল একদিনের জন্যে। আনাড়ী হাতে প্রথম শাড়ী পড়া লীনাকে প্রথম দেখে ঠোঁটের কোণে একটু হাসি জমেছিল আমার। অগত্যা সে সেটা দেখে ফেলেছিল....
আমরা পার্কের ফাঁকা একটা রাস্তায় হাটছিলাম। মাঝখানে আঙুল চার দূরত্ব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্যে আমি একাই কথা বলছিলাম। লীনা শুধু "হু" "হ্যা" করছিল। হঠাৎ লুকিয়ে চকিত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। ও নিচের দিকে তাকিয়ে। খটকা লাগল। কাঁদছে কেন লীনা?
আমি একটু ঘুরে দাঁড়ানোয় দুজনের গা অল্প করে ছুঁয়ে গেল। কেপে উঠলো লীনা....
-লীনা কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?
লীনার ফুঁপানি বাড়ল কিছুটা। আমি হতবম্ভ।
-আমাকে বলো প্লিজ। কি হয়েছে?
আমি যত প্রশ্ন করি লীনার কান্না তত বাড়ে। একসময় রাগে আমি অন্য দিকে তাকালাম। তখন মুখ খুলল সে,
"আমি তো তোমার জন্যেই শাড়ি পড়েছি। আগে কি কখনো পড়েছিলাম? এর জন্যে হাসতে হবে এভাবে?"
এবার একটু লজ্জা পেলাম আমি। কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করছিল ভেতরে। এভাবে কষ্ট দিলাম মেয়েটাকে? কেন দিলাম?
লীনা তার শীতল হাতটা হাতের উপর রাখল। আমি তাকালাম ওর দিকে,
"আর কখনো করোনা এমনটা। কেমন?" বলেই একটু হাসল।
সিক্ত চোখে ওকে অপূর্ব লাগছিল। কোন প্রতিমার মূর্তি যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এই অপূর্ব মানবীটা আজীবন পাশে থাকবে তো?
তখন চোখের কোণায় নেমে এলো মেঘ। তবে সে মেঘ আনন্দের। অমুল্য কিছুএকটা পাওয়ার আনন্দের....