সূজনের মেজাজ এই মুহূর্তে অবস্থান করছে এক্সোস্ফিয়ারে।যেটা হলো গিয়ে সাত নম্বর আসমান।বাকি গুলোর নাম সূজন নিজে নিজেই মনে করার চেষ্টা করলো, ট্রাপোস্ফিয়ার,স্ট্রাটোস্ফিয়ার! আর মনে পড়ছেনা। বিরক্তিতে তার জোড়ালাগা ভ্রূ কুঞ্চিত হল। যেটা নিয়ে সোমা প্রায়শই ঠাট্রা করে বলে,তোমাকে লেডিস পার্লারে নিয়ে যেতে হবে।সেলুনে তো আবার ভ্রূ-প্লাকের ব্যবস্থা নেই! বলেই হাঁসতে থাকে। সোমার হাঁসিটা অন্যদের চেয়ে আলাদা। মনে হয়,চল্লিশ হাজার হার্জের কিছু একটা কানের ভেতর দিয়ে একেবারে মস্তিষ্কে গিয়ে বিঁধে। গা গুলিয়ে উঠে।
বহু সাধ্য-সাধনার পর ঘন্টা-দুয়েকের জন্য সজীবের বাসাটা ব্যবস্থা করেছিলো। সজীবের বাবা-মা নোয়াখালী গিয়েছে। সজীবের ছোটভাই সুমনকেও সাথে নিয়ে গেছে। এটা ভালো হয়েছে।ছোকরা মহা ফিচেল টাইপ। অবশ্য এমনি এমনি সূজনকে এই সুবিধে দিচ্ছেনা সজীব। বিনিময়ে দুই প্যাকেট বেনসন সিগারেট নিয়েছে। সজীবের ভাষায় যার নাম উপঢৌকন!
আমি বাসায় না আসা অবধি কোথাও যাবিনা! অফিসগামী মায়ের এই উক্তিটি সজীবের কানে বিষের মতো বেজেছে। আর সেই থেকেই তার মেজাজের পারদ ঊর্ধ্বমুখী।
সোমার সাথে সূজনের সম্পর্ক আঠারো মাসের। এই আঠারো মাসে সোমাকে অন্তত আঠারো শ’ বার ইনিয়ে বিনিয়ে সূজন একটা কথাই বলার চেষ্টা করেছে,যার সারমর্ম হলো ‘খিড়কী অভিসার’। বিয়ের আগে এসব নয়,আমার এসব পছন্দ না,আমি এমন মেয়ে না সহ নানান উছিলায় সোমাও বারংবার প্রত্যাখ্যান করেছে সূজনের চাওয়া প্রশ্রয় ও দেয়া প্রস্তাব। সূজনও নাছোড়বান্দা। অবশেষে একদিন বরফ গলতে শুরু করলো।সজীবের আর্জিতে মর্জি জানিয়ে সোমা বললো,এই একবারই কিন্তু।অন্তত বিয়ের আগে এটাই প্রথম,এটাই শেষ! সজীবের ফোন বাজছে,কিরে বাবা কই তুই?
-কই আবার?বাসায়।
-শোন,তুই কিন্তু বাসা থেকে কোথাও যাবিনা।
-আম্মা,আমার অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে,আমি বন্ধুর বাসায় যাবো। বোঝার চেষ্টা করো আম্মা !
-আমি অফিস থেকে আধবেলা ছুটি নিয়েছি। তোর আব্বার পেনশনের কাগজে নাকি কী ঝামেলা হয়েছে। তার অফিস থেকে চিঠি পাঠিয়েছে,তোকে বলা হয়নি।তোকে নিয়ে সেখানে যাবো। সে তো মরে গিয়ে বেঁচেছে!
-আম্মা আমি পারবোনা।তুমি যাও। রাগে গজগজ করতে করতে সূজন ফোন কেটে দিলো।এতো কষ্ট করে পাওয়া সুযোগ নষ্ট হবে? এখন বাজে এগারোটা দশ। বারোটার মধ্যে মগবাজারে থাকার কথা। সজীব যেখানে থাকে,সেই গলির মুখে। সোমাও সেখানে থাকবে,এমনটাই কথা হয়েছে। দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো সে। বেরোবার সময় মোবাইলটা বন্ধ করে দিলো। চার্জ ছিলোনা বা কিছু একটা বলে পরে মাকে বুঝানো যাবে।মা নাহয় বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করেই যাবে।সবসময় এসব ভালো লাগে! ঠিক সময় মতোই সোমাকে নিয়ে সজীবের বাসায় পৌঁছালো সে।
তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হচ্ছিলেন সূজনের মা মিসেস আসমা বেগম।দ্রুত বাসায় যেতে হবে।সেখান থেকে সূজনকে নিয়ে ওর বাবার অফিসে।ঝামেলা কী হয়েছ সেটা জেনে,দ্রুত সমাধান করতে হবে।পেনশন আটকে গেলে মহাবিপদ হয়ে যাবে।তাছাড়া,এই মাসে সূজনের ভার্সিটির সেমিস্টার ফি ও দেয়ার কথা।আর হয়তো সপ্তাহখানেক বাকি।
আসমা বেগমের রক্তাক্ত,নিথর দুখণ্ড দেহটা পড়ে আছে রাস্তায়।সুপ্রভাত পরিবহণের দ্রুতগামী একটি বাস চলে গেছে তার শরীরের উপর দিয়ে।পথচারীরা জড়ো হয়েছে।হাতের ব্যাগটা ছিটকে পড়েছে কয়েক হাত দূরে।কেও একজন ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করলো।কল লিস্টে একটিই নাম,সূজন।ডায়াল করতেই,ওপাশ থেকে স্বয়ংক্রিয় নারীকন্ঠের আওয়াজ ভেসে আসলো-'আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি,এই মুহূর্তে বন্ধ আছে'!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:২৫