1) দেশ আমার দরিদ্র মা
আমাদের দেশ পৃখিবীর দরিদ্রতম ভেতরে অন্যতম। দারিদ্রতার বিচারে আমাদের দেশটির মাঝামাঝি একটি অবস্থান হলে আমার মনের মতো হতো। দেখেছি দারিদ্র একদিকে ধ্বংস করে মানুষকে, অন্যদিকে সম্পদের অতি প্রাচুর্য মানুষের ভেতরের নিবিড়তাকে নষ্ট করে দেয় অনেকখানিই। অনেক দিন ধরেই অবস্থান আমার দেশের বাইরে। সেখানে সম্পদ থাকলেও মানুষের ভেতরের নিবিড়তার অভাব প্রকট বেশ। নিজেদের দেশের মাঝেও ধনী, দরিদ্র, শহর ও গ্রামকে দেখে বিষয়টি টের পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন কথা। ছোট ছিলাম বেশ। শহর থেকে পালাচ্ছি গ্রামে ঢাকা শহরের আশে পাশের গ্রামের ভেতর দিয়ে। সে গ্রামের মানুষজন যার যা ক্ষমতা, নানা ধরণের খাবার ও পানীয় নিয়ে রাস্তার কোনায় কোনায় দাঁড়িয়ে শহর পালনো মানুষদের সাহায্য করার জন্যে। আমরা শহুরে তখাকথিত ধনী মানুষরা এটা কখনোই করবো না। আমরা তাদেরকে আমাদের দরজা থেকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিতে পারলেই আনন্দিত হই বেশী। তাই ধনাট্য হওয়ার বিনিময়ে মানবিকতার বিসর্জন আমার কাম্য নয়।
2) নীতিহীন রাজনীতির যাতাকল
রাজনীতিবিদদের কাছে সর্বাগ্রে সততা কাম্য। তারপরই তাদের কর্মে সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসেব নিকেশ করা, রাজনৈতিক গতিপথের সুক্ষ বিচার বিশ্লেষন সম্ভব। কিন্তু এ মুহুর্তে আমরা তাদেরই আগ্রাসী থাবার করলগত, যাদেরকে আমরা আমাদের গনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে সংসদে পাঠাই। ক্ষমতামদমত্ত রাজনৈতিক দলগুলোর এ থাবা প্রতিদিনই আরো বেশী চেপে বসছে আমাদের গলায়। আমাদের নি:শ্বাস নেবার কোন পথ নেই, পিঠ ঠেকে আছে দেয়ালে। তাদের এ করালগ্রাস থেকে বেরিয়ে আসা না অবধি কোন মুক্তি নেই আমাদের। আমার জলরঙ্গে অাঁকা সপি্নল এক সৎ রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার উন্মেস ও প্রভাব যেন ঘটে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যাতে আমরা এই অসৎ রাজনীতিবিদদের অসৎ উদ্দেশ্যকে প্রতিহত করতে পারি।
3) ধর্ম ও মানবিকতা
আমাদের সর্বস্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক হতাশার ও পরাজয়ের কারনে আমাদের ভেতরে মানবিক গুনাবলী প্রতিনিয়তই হৃাস পাচ্ছে। ধর্ম যদি আমাদের সে গুনাবলী ফিরিয়ে আনতে সামন্যতমও সাহায্য করতে পারে, তাহলে তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে আমার মতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সঠিক সামাজিক শিক্ষা তার প্রধান মাধ্যম। যে কোন মাধ্যমেই হোক বা না কেন, আমাদের আবার ফিরে পাওয়া মানবিক গুনাবলী যদি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রসংস্কারে সহায়ক হয়, সেটাই হবে আমাদের প্রধান পাওয়া। তবে ধর্মপালন ও না পালন প্রতিটি মানুষের একান্তই নিজস্ব ও এই নিজস্বতাতেই তার সত্যিকারের স্থান। রাষ্ট্রনীতিতে ধর্মের প্রভাব কোন কল্যান আনতে পারে না ও সংখ্যালঘুদের জন্যে অমানবিক।
4) শিক্ষা আর ধর্ম
আমাদের দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা গনমুখী তো নয়ই, বরং সময়ের সাথে সাথে আরো বেশী সে লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তার কারন হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষানীতি ও কিছু ব্যবসায়ী শ্রেনীর শিক্ষকদের কলুষিত হাত। ভালো ফলাফল করার পরও নিজেদের সন্তানদের ভালো স্কুল কলেজে ভর্তি করা বেশীরভাগ বাবা মায়ের কাছেই অসম্ভব। তারপরেও রয়েছে মাঝারি ও খারাপ ফলাফল করা ছাত্রদের পেশাগত জীবনের অনিশ্চয়তা। প্রত্যেকেই প্রথম হতে পারে, এমন কোন নজির না থাকা সত্বেও আমাদের সমাজ ও অর্থনীতি আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে সে আশাই করে। আমার সপ্ন, শিক্ষা সার্বজনীন ও আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী হোক। ধর্মবষয়ক শিক্ষা নিয়েও আমার কিছু বলার রয়েছে। ষ্কুলগুলোতে ধর্মবিষয়ক কাশগুলোকে আরো বেশী ব্যপক ও বহুমুথী করা দরকার। একে কলেজ ও বিশ্যবিদ্যালয় অবধি এমন ভাবে সপম্রসারণ করা দরকার, যাতে এ বিষয়গুলোকে স্নাতক ডিগ্রীও দেয়া যেতে পারে। বিনিময়ে বিলুপ্ত করা হোক মাদ্রাসা ভিত্তিক শিক্ষার। এতে ধর্মপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক শিক্ষিত পরিচালকদের আনাগোনা হবে। ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদী প্রভাব কমে আসবে অনেকখানি।
আপাতত: এই বিষয়গুলো নিয়েই লিখলাম। জানি সপ্নগুলো সপ্নের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমাদের দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ আশাগুলো কুহকিনি রূপই দাঁত বের হাসে প্রতিনিয়ত। তবে এই সপ্নগুরণের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে সততা। আর সে সততা যদি আমরা জাতি হিসেবে ধীরে ধীরে পুনার্জন করতে পারি, তাহলে সপ্ন ও বাস্তবের দুরত্ব কমবে অনেকখানি। হয়তো আমরা না হলেও আমাদের উত্তসুরীরা ভোগ করবে এর অর্জিত ফলাফল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



