গ্রেগর সামসা কেন এক সকালে সারারাতের অস্থির প্রভাব থেকে জেগে উঠল। দেখল তার বিছানাতেই বিকট এক পোকায় পরিনত হয়ে গেছে সে। ঢালের মতো মসৃন পিঠের উপর মাথাটি একটু উপরে তুলে দেখল তার সামন্য উঁচু হয়ে ওঠা পেট খয়েরী রংএর গভীর ধনুকের মতো বাঁকা বাঁকা রেখায় ভাগ করা। সেখানে চাদরটি পেটের মসৃণতায় আর আটকে থাকতে পারছে না। তার অনেক ক্থটি আগের চেয়ে অনেক সরু সরু পা তার চোখের সামনে অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া করছে।
"এ কি হল আমার!" ভাবল সে। এ তো সপ্নও নয়। তার ছোটখাট ঘরটি আগের মতোই পরিচিত চার দেয়ালের মাঝে । চাকুরির কাজে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানোই গ্রেগরের কাজ। গতকাল নকাশাসহ কাপড়ের যে স্যাস্পলগুলো খোলা হয়েছিল, দেয়ালের পাশে টেবিলের উপরেই রয়েছে সেগুলো। একটি পত্রিকা থেকে কেটে নিয়ে সোনালী ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটি তার উপরেই ছবিটি ঝুলছে। ঋজু হয়ে বসা পশমের টুপি মাথায় এক মহিলার ছবি। গলায় পশমের মাফলার আর হাতে ও বাহুতে কালো পশমের ঢাকনি।
গ্রেগর জানলার দিকে তাকালো। মন বিকল করে দেয়া বিষন্ন দিন, জানলার উপর আছড়ে পড়ছে বৃষ্টির ছাট। "এসব বোকামো ভুলে গিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে নিই আরেকটু"। ভাবলো সে। কিন্তু তা যে কতোটা অসম্ভব, দ্রুতই টের পেয়ে গেলো । ডানপাশে শুয়ে ঘুমোনো তার অনেকদিনের অভ্যাস। কিন্তু তার এ মূহুর্তের শারিরীক অবস্থা তাকে সেদিকে ঘুরতেই দিল না। সমস্ত শক্তি দিয়ে যতবারই সে চেষ্টা করলো ডানদিকে কাৎ হওয়ার, কিন্তু প্রতিবারই ফিরে এলো আগেরই চীৎ হওয়া অবস্থায়। একবার দু্থবার নয়, একশোবার চেষ্টা করলো। চোখ বন্ধ করলো বারবার, যাতে পায়ের অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া দেখতে না হয়। অবশেষ শরীরের ডানপাশে একটি অপরিচিত ভোতা যন্ত্রণা অনুভব করে হাল ছাড়তে বাধ্য হলো।
"হায় আল্লাহ্! কি এক ভয়ানক চাকুরী জীবন বেছে নিয়েছি আমি। প্রতিদিনই ঘোরাঘুরি। বাইরের কাজগুলোও অফিসে বসে কাজ করার চেয়ে অনেক বেশী কষ্টকর। ঘেরাঘুরির এই কষ্টগুলো শেষ করে দিচ্ছে আমাকে । ট্রেনের অনিয়িমত যোগাযোগ, প্রতিদিনের আরুচিকর খাবার, সবার সাথে এই ভাসা ভাসা সম্পর্ক আর কতো সহ্য করা যায়! জাহান্নামে যাক সব!" পেটের উপরের অংশে একটি চুলকানো অনুভব করলো সে। মাথা তুলে ভালো করে সে অংশটি দেখার জন্যে চীৎ থাকা অবস্থাতেই বিছানার প্রান্তের দিকে গড়িয়ে এলো সে। দেখলো সাদা সাদা ফুটকুড়িতে ছোট্ট একটি পেটের অংশ। পা দিয়ে সে জায়গাটি একবার স্পর্শ করেই অসহ্য শীতল এক শিহরণে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলো।
বিছানায় আবার আগের আবস্থায় ফিরে এলো সে। "প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা একটি মানুষকে গাধা বানিয়ে দেয়া জন্যে যথেষ্ট"। ভাবলো সে। "প্রতিটি মানুষেরই নিয়মিত ঘুম দরকার। অন্যান্য যারা ঘুরে বেড়ানোর চাকুরী করে, হারেমের মেয়েদের মতো আরামের জীবন তাদের। নিজে যখন প্রতি সকালের শেষে আমার চুক্তিগুলো সই করার জেন্য হোটেলে দৌড়াই, তারা সবাই তখন নাস্তার টেবিলে বসেছে মাত্র। আমার বেলায় মূহুর্তেই চাকুরীটি খেয়ে নেবে বস। হাড়ে হাড়ে জানি, এতে ভয়ানক ক্ষতি হবে আমার। শুধুমাত্র বাবা-মায়ের মুখ চেয়েই টিকে আছি, নইলে কবেই ছেড়েছুড়ে দিতাম সব! বসের সামনে গিয়ে সমস্ত জমানো ক্ষোভ ঝাড়তাম। তার উপরের মহাসন থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনতাম তাকে। এটা অসহনীয় ব্যাপার, নিজেকে মহাসনের উপরে বসিয়ে কর্মচারীদের সাথে নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলা। তাছাড়া বস ব্যাটা কানে কম শোনে বলে আমাকেই কাছে এগিয়ে যেতে হয়। আশা এখনও ছেড়ে দিইনি। বাবা-মার ধারগুলো শোধ করে দেবার মতো হাতে যথেষ্ট টাকা জমলেই হলো। আর হয়ত পাঁচ থেকে ছয় বছরের মতো লাগবে। তাখনই নেয়া হবে বড় পদক্ষেপ। আপাতত: আমাকে এখনই বিছানা ছেড়ে উঠে পাঁচটার ট্রেন ধরতে হবে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ ভোর ৫:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



