somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্য শরীর-২, মূল: ফ্রান্স কাফকা, জার্মান থেকে অনুবাদ

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছি আবার। : ফ্রান্স কাফকার এই বড়গল্পটি ধরলাম। ভাষা ব্যবহার ও যে কোন পরামর্শ ও মতামতে আনন্দিত ও উপকৃত হবো।)

কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিদ্যুতের মতো এসব চিন্তা যখন তার মাথায় ঘুরছে, বিছানাও ছাড়েনি, তখনই পৌঁনে সাতটার আওয়াজ বেজে উঠলো ঘড়িতে। তার বিছানার মাথার কাছেই দরজা। মায়ের সাবধানী টোকা আর মোলায়েম আওয়াজ শোনা গেল। ্তুগ্রেগর, পৌনে সাতটা বাজে, বেরোবি না আজ্থ? উত্তর দিতে গিয়ে নিজের গলার আওয়াজ শুনে হতচকিত হলো গ্রেগর। আগের মতোই মূল আওয়াজটি। কিন্তু নীচ থেকে তীব্র যন্ত্রনাকাতর চিহি চিহি আওয়াজ এসে তার সাথে মিশে যাচ্ছে। উচ্চারণের প্রথম মূহুর্তেই সে আওয়াজ মূল স্বরের সাথে মিশে ধ্বনিকে এমনভাবে ধ্বংস করছে যে, পুরো শব্দটাকেই অবোধ্য হয়ে যাচ্ছে। গ্রেগর মা কে পুরো আবস্থাটি বর্ননা করতে চাইলেও নিজের অবস্থা বুঝে সংক্ষিপ্ত করলো উত্তর। ্তুহ্যা, হ্যা মা, ধন্যবাদ। এক্ষুনি উঠছি্থ। হয়তো দরজাটি কাঠের হওয়ায় তার গলার আওয়াজের এই অস্বাভাকিতা মায়ের কাছে পৌঁছালো না। মা তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে দরজা থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু তাদের এই কথোপকথনে বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরাও টের পেলো যে, গ্রেগর সময়মতো বেরিয়ে পড়তে পারে নি। সুতরাং পাশের আরেকটি দরজায় হালকা হাতে ধাক্কা দিলেন বাবা। ্তুগ্রেগর, গ্রেগর, উঠছিস না কেন? কি হলো্থ? তারপর একটু থেমে আবার মৃদুস্বরে ডাকলেন, ্তুগ্রেগর, গ্রেগর্থ। অন্য দরজায় তার বোন এসে ডাকলো,্থগ্রেগর, তোর কি শরীর খারাপ্থ? দু্থদিকেই উত্তর দিল গ্রেগর,্থহ্যা, আমি তৈরী্থ। কথা বললো খুব সাবধানে, বিরতিগুলো একটু লম্বা করলো, যাতে তার আওয়াজের অস্বাভাকিত্ব যতোটা সম্ভব দুর করতে পারে। বাবা তার নাস্তার টেবিলে ফিরে গেলেন। কিন্তু তার বোন তখনো দরজায়। ফিসফিসিয়ে বললো, ্তুগ্রেগর, দরজাটা খোল, আমি দেখছি কি হলো্থ। কিন্তু গ্রেগর দরজা খোলার কথা চিন্তাই করলো না, বরং তার যাযাবর জীবনের সাবধানতায় শেখা দরজা বন্ধ করে শোওয়ার অভ্যাসটির কথা ভেবে নিজেকেই প্রশংসা করলো।

তার প্রথম উদ্দেশ্য হলো শান্ত ও কোনরকম বিরক্তিকে পাত্তা না দিয়ে বিছানা ছাড়া। তারপর কাপড় পড়া ও অতি জরুরী কাজ, - নাস্তা সারা। তারপর সবশেষে ঠান্ডা মাথায় সামনের পদক্ষেপগুলো ভাবা। বিছানায় শুযে শুয়ে ভেবে সে কোনরকম কার্যকরী সিদ্ধান্তে আসা যাবে না, তা সে ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছে। প্রায়ই বিছানা ছাড়ার সময় তার এধরণের হালকা যন্ত্রনা হয়, হয়তো অস্বাভাবিক কোন ভঙ্গীতে শোবার কারণেই। পরে সে ব্যাথা নিতান্তই মনোগত বলে মনে হয়েছে। আজকের অবস্থাটি কোন দিকে মোড় নেবে ভেবে একটু উত্তেজিত হলো সে। গলার আওয়াজের পরিবর্তন যে তার ঘোরাঘুরি ও সর্দি লাগার কারণেই হয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ রইল না তার।

গা থেকে লেপটি নামানো খুবই সহজ, একটু নড়াচড়া করলেই পড়ে যাবে। কিন্তু ওটা একটু বেশী চওড়া হওয়াতে কাজটি বেশ কঠিনই হয়ে দাড়ালো। উঠে বসার জন্যে যেখানে তার হাত দরকার, সেখানে তার অনেকগুলো শীর্ণ শীর্ণ পা, সেগুলো আবার সারাক্ষন এদিক সেদিক নড়াচড়া করছে। সে নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও তার নেই। যে পা্থটাকে সে সর্বপ্রথম সোজা করতে চাইল, সেটাই ভাজ হয়ে গেল বারবার। তারপরেও একটি পা্থকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল, বাকীগুলো স্বাধীনভাবে, কোন এক অস্বাভাবিক বেদনাদায়ক উত্তেজনায় এদিক সেদিক নড়াচড়াতেই রইল। ্তুকোন অবস্থাতেই আর বিছানায় নয়্থ, নিজেকেই বললো গ্রেগর।

প্রথমে সে তার শরীরের নীচের অংশটি নিয়ে বিছানা থেকে নামতে চাইল। কিন্তু এই অংটি সে কখনো দেখেই নি ও কোন ধারণাও নেই, দেখতে কেমন। এটাকেই তার সবচে্থ বেশী ভারী ও নড়াচড়ার অযোগ্য বলে মনে হলো। বুনোর মতো সমস্ত শক্তি দিয়ে কোন চিন্তাভাবনা না করেই নিজেকে সামনে ঠেলল সে। আর সেটাই ভুল দিক হবার কারণে বিছানার ধাক্কা লাগলো । জলন্ত এক যন্ত্রণায় অধীর হয়ে টের পেতে বাধ্য সে, তার এই শরীরের অংশই এই মূহুর্তে সবচে্থ বেশী স্পর্শকাতর।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×