চেষ্টা করলো শরীরের উপরের অংশটি বিছানা থেকে নামানোর। সেজন্যে মাথাটি বিছানার প্রান্তের দিকে ঘুরিয়ে আনলো। খুব পরিশ্রম করতে হলোনা সেজন্যে। যদিও তার শরীরের ব্যাপ্তি চওড়া ও ভারী, তারপরেও তা ধীরে মাথা যেদিকে যায়, সেদিকেই ঘুরলো। কিন্তু মাথাকে আরেকটু বিছানার বাইরে আনতেই আরো বেশী ঘুরতে ভয় পেলো সে। কারণ এবার যদি সে নীচে পড়ে যায়, তাহলে শুধুমাত্র দৈব ছাড়া কারো সাধ্য থাকবে না, তার মাথাকে ভয়ংকর এক আঘাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার। এই বোধটুকু নষ্ট করার চাইতে বিছনায় পড়ে থাকাও অনেক গ্রহণযোগ্য মনে হলো তার।
ক্লান্ত নি:শ্বাসে আবারো আগের মতোই চীৎ হয়ে বিছানায় পড়ে রইল। আবারো দেখলো তার পা গুলো কোন এক ক্রোধে পরস্পরের সাথে আরো বেশী যুদ্ধে মত্ত। পায়ের এই অরাজকতায় কোন রকম শৃঙ্খলা আনার পথ সে খুঁজে বের করতে পারলো না। তারপরও সে নিজেকে বললো, এভাবে বিছানায় পড়ে থাকা একেবারেই সম্ভব নয় আর। যদি একটুও বিছানা থেকে নামার আশা থাকে, তাহলে সে সবকিছু মেনে নিতে প্রস্তুত। সে এটাও ভুলতে চাইল না যে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের চেয়ে পরিকিল্পিত ও পরিকল্পিততম চেষ্টা তার জন্য সবচেয়ে জরুরী। সে চেষ্টা করলো যতোটা সম্ভব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জানলার দিকে তাকানোর। কিন্তু সেখানেও জমাট বেঁধে আছে সকালের কুয়াশা আর পাশের বাড়ীর ঘিন্জি দেয়াল। সেখান থেকেও কোন আশা ভরসার চিহ্ন সে খুঁজে বের করতে পারলো না। ঘড়ি সাতটা বাজার সংকেত দিল। ্তুসাতটা বেজে গেল, এখনও এত কুয়াশা্থ? মনে মনে বললো সে। ভারী নি:শ্বাস ফেলতে ফেলতে আরো কিছুক্ষন এমন ভাবে শুয়ে থাকলো সে, মনে হলো একটা নি:স্তব্ধ নীরবতা তাকে আবার তার পুরানো ও যথার্থ অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
তারপর আবার নিজেকেই সে বলল,্থসওয়া সাতটা বাজার আগেই আমাকে বিছানা ছাড়তেই হবে। সাতটায় অফিস খোলে ওরা, সাথে সাথেই কেউ না কেউ এসে পড়বে আমাকে খোঁজার জন্য্থ। এবার সে চেষ্টা করলো শরীরকে দোলাতে দোলাতে আড়াআড়ি ভাবে একবারেই বিছানা থেকে নীচে ফেলার। এভাবে যদি সে মাথাটি বেশ উঁচু করে নিজেকে নীচে ফেলতে পারে, তাহলে হয়তো ব্যাথা না ও পেতে পারে। পিঠটাকে তো শক্ত বলেই মনে হচ্ছে। কার্পেটের উপর পড়লে তেমন কিছু ঘটবে বলে মনে হয়না। যে বিকট আওয়াজ হতে পারে, এ নিয়েই ভাবনা তার। হয়তো চার দেয়ালের আড়ালে সে আওয়াজ তেমন কোন ভাবনার কারণ ঘটাবে না। কিন্তু সাহস করে এই কঠিন কাজটিতো সারতে হবে এখন।
নিজেকে যখন প্রায় অর্ধেকটা বিছানা থেকে বের করে এনেছে গ্রেগর, তখন নড়াচড়াটা যতোনা না কষ্ট, তারচেয়ে আরো বেশী এক ধরণের খেলার মতো মনে হলো তার। শুধুমাত্র পেছন দিকে হেলে দুলে নড়তে হচ্ছে তাকে। হঠাৎ মনে হলো, কারো সাহায্য পেলে কতোই না সহজ হতে বিষয়টি। তার বাবা আর বাড়ীর আয়া, দু্থজন হলেই তো চলতো। পিঠের নীচে হাত দিয়ে দু্থজনে মিলে টেনে ওঠাতে পারতো, তারপর মেঝেতে উবু হয়ে তাকে উল্টে দিলেই হতো। পা গুলোও তখন হয়তো কাজে লাগানো যেতো। এখন তো আর সে আশা বৃথা, সবক্থটি দরজাও বন্ধ। তার কি কাউকে সাহায্যের জন্যে ডাকা উচিৎ ছিল ? একথা ভেবে এই নিদারুন কঠিন অবস্থাতেও একটি মৃদু হাসি চেপে রাখতে পারলো না।
দুলতে দুলতে একসময় ভারসাম্য বজায় রাখাই শক্ত হয়ে দাঁড়ালো। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আসল সময় এবার। ঘড়ির কাটা তখন সাতটা বিশের ঘরে। ঠিক তক্ষুনি কলিং বেল বেজে উঠলো সদর দরজায়। ্তুনিশ্চয়ই অফিসের কেউ একজন্থ, মনে মনে বললো সে। নিজের পা গুলোর দিকে তাকিয়ে হিম হয়ে গেলো তার ভেতরটা। সেগুলো আরো বেশী আরো বেশী উত্তেজিত হয়ে আরো দ্রুত এদিক সেদিক নাড়াচাড়া করছে। এক মূহুর্তের জন্যে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো চারদিক। ্তুদরজা খুলবে না কেউ্থ, কোন এক নিরর্থক বিশ্বাসের উপর ভরসা রেখে নিজেকেই বিড়বিড়িয়ে বললো সে। কিন্তু পরমূহুর্তেই বাড়ীর আয়ার জোরালো পায়ের আওয়াজ ও দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। সৌজন্য বিনিময়ের প্রথম শব্দটি শুনেই টের পেলো গ্রেগর, এ তাদের অফিসেরই আইনসঙ্গত প্রতিনিধি। এমনি একটি জায়গায় কাজ করতে হচ্ছে ভেবে নিজের প্রতিই ক্ষোভ জমলো তার। সামান্য সমস্যায় এত বড় সন্দেহ কেন? সব কর্মচারীই কি অলস আর অকর্মন্য? সকালে প্রতিটি সময় অফিসের কাজে ব্যবহার করতে না পেরে সে কি আত্মসমালোচনায় জ্বলছে না? নিজে তো বিছানাই ছাড়তে পারছে না। কি হয়েছে জানা এতটা দরকারী হলে একজন শিক্ষানবিসকে পাঠালেই তো চলতো। এই উকিল ব্যটার নিজে এখানে আসার কি দরকার ছিল? এই সন্দেহজনক ঘটনা পর্যবেক্ষন করার জন্যে একজন উকিলেরই উপস্থিতি দরকার, এই নির্দোষ পরিবারকে তা প্রমান করার কোন প্রয়োজন ছিল কি? এসব ভাবতে ভাবতে উত্তেজিত গ্রেগর একটা শক্তিশালী সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলো। সমস্ত শক্তি দিয়ে হেলতে দুলতে বিছানা থেকে পড়লো সে। একটা ভোতা আওয়াজ হলেও তেমন বিকট মনে হলোনা তা। হয়তো মেঝের কার্পেটই সে আওয়াজ কমিয়ে দিয়েছে। হয়তো তার পিঠ শক্ত হলেও স্থিতিস্থাপক। কিন্তু মাথাটি তেমন সাবধানে রাখা গেল না। ব্যাথা পেলো বেশ ও রাগে ও যন্ত্রণায় সেটি কার্পেটে ঘসলো।
অসমাপ্ত.....
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



