somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূহুর্ত হলেও, থামুন: কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প, ডাখাউ, জার্মানী

০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সকাল ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় বিশ্বয়ুদ্ধের সময়কালীন জার্মান নাৎসী বর্বরতার কথা কমবেশী আমাদের সবারই জানা। গত পরশু প্রায় দশ বছর আগের একটি পুরোনো ছবি দেখানো হলো। ছবিটির নাম 'শিন্ডলারস্ লিষ্ট'। পোলান্ড যখন নাৎসীদের দখলে, তখন 'শিন্ডলার' নামের এই জার্মান ওখানে যান নিতান্ত ব্যাবসার উদ্দেশ্যেই। ইহুদিদের টাকায় কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে অতি সামান্য বেতনে ইহুদীদের খাটিয়ে পয়সা বানানোই ছিল তার পরিকল্পনা। সফলও হয়েছিলেন তিনি। কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প ও গ্যাস চেম্বার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়ই ছিল তখন কোন কাজে লেগে থাকা। তারপরও ক্যাম্প থেকে কাজে আসা যাওয়ার পথে ইহুদীদের যখন তখন নিবির্চারে গুলি করে মারা ছিল জার্মান সৈনিকদের পৈশাচিক আনন্দের খোরাক।

যুদ্ধের ছয় বছরে প্রচুর টাকা আয় করেন শিন্ডলার। কিন্তু আয়ব্যয়ের এই হিসেবের মাঝেও তার ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান কিছু ইহুদীর জীবন রক্ষার একটি উপায় হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু যখন যুদ্ধে পরাজয়ের আগের বছরে, পরাজয় আসন্ন টের পেয়ে নাৎসীরা সমস্ত ইহুদীদের পোলান্ডের 'আউসভিচ' নিয়ে গ্যস চেম্বারে হত্যা করা শুরু করলো, তখন শিন্ডলার এর কাছে টাকার চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোই বড় হয়ে দাঁড়ালো। ছয় বছরের সমস্ত জমানো টাকা ঘুষ হিসেবে নাৎসীদেরকে দিয়ে ১১০০ ইহুদীর জীবন কিনে নেন। নিজ শহরে আরেকটি কারখানা স্থাপন করেন। সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবেই ত্রুটিযুক্ত যুদ্ধের জন্যে গ্রেনেট ও বন্দুকের গোলা তৈরী করা হতো। পরে মিত্রবাহিনী এই ইহুদীদের উদ্ধার করে। এখনও এসব ইহুদীদের সন্তান-সন্ততিরা শিন্ডলারের কবরে প্রতিবছর সন্মান জানাতে যান।

এই ছবিটি দেখার পরদিনই মনের তাগিদেই মিউনিখ শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দুরে 'ডাখাউ' নামের ছোট এক শহরে এক 'কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প' দেখতে গেলাম। আগেও অনেক বার গিয়েছি ওখানে, বাইরে থেকে অতিথি এলে প্রায় প্রতিবারই নিয়ে যেতে হতো।

১৯৩৩ সালে হিটলারের ক্ষমতা দখলের পরই জার্মানীর প্রথম কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প হিসেবে এটি স্থাপন করা হয়। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ অবধি ২ লাখেরও বেশী বন্দীকে রাখা হয় এখানে। এর মাঝে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ অবধি ২৮০০০ বন্দীকে হত্যা করা হয়। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত হত্যার কোন হিসেব রাখা হয়নি। বন্দীদের মাঝে বেশীর ভাগই ছিল ইহুদী। বাকী যারা ছিল, তার সাধারণ অপরাধী, জার্মান কম্যুনিষ্ট, জিপসী ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।

এই নিশৃংশতার বর্ণণা আমার সাধ্যের বাইরে। কিছু ছবি তুলেছি। প্রতিটি ছবির সামান্য বিবরণও দিলাম। তাছাড়া ছবিগুলোই কথা বলবে।

১) বন্দীদেরকে ক্যম্পে আনার দৃশ্য
২) মিত্রবাহিনীর হাতে মুক্তির দিন। এসময় ৩৩০০০ বন্দী ছিল ক্যম্পে, যদিও ধারণ ক্ষমতা ৫০০০। ক্রেমেটোরিয়াম ছিল লাশে বোঝাই। পোড়ানোর মতো যথেষ্ট কয়লা ছিল না।
৩) লৌহ দরজা, ওপাশে শুধু আর্তনাদ। কিন্তু বলা হতো, কাজেই মুক্তি।
৪) ক্রেমেটোরিয়াম। প্রথমে ঢোকানো হতো একটি ঘরে। বলা হতো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথা। তাই কাপড়চোপড় সব খুলতে বলা হতো। তারপর ঢোকানো হতো গোসল করার ঘরে। উপরে শাওয়ারও ছিল। কিন্তু বাইরের দরজা বন্ধ হবার পরপরই শাওয়ার থেকে জলের বদলে, দেয়ালে ছিদ্র দিয়ে ঢোকানো হতো বিষাক্ত গ্যস। তবে 'ডাখাও' গ্যস চেম্বার কোন এক অজানা কারণে ব্যবহার করা হয়নি।
৫) ক্রেমেটোরিয়ামএর বিভিন্ন ধাপ। বা'দিক থেকে শুরু।
৬) তথাকথিত পরিষ্কার করার ঘর।
৭) গ্যাস চেম্বার।
৮) গ্যাস চেম্বার। উপরে শাওয়ার, দেয়ালে গ্যাস ঢেকানোর ছিদ্র।
৯) লাশঘর। পোড়ানোর আগে।
১০) নুরুন্নেসা ইনায়েত খান নামে উপমহাদেশের কোন বন্দিনী। বৃটিশ সেনাবাহিনীর সদস্যা। ওনি সহ আরো কিছু মৃতের প্রতি শ্রদ্ধাফলক।
১১) লাশ পোড়ানোর চুল্লী। আরো তিনটি এরকম চুল্লী রয়েছে।
১২) মুক্তির পর আকাশ থেকে তোলা ছবি।
১৩) বন্দীদের ব্যরাক।
১৪) টয়লেট।
১৫) যাদুঘর।
১৬) বর্বরতার প্রমাণ।

অনেকেই বলবেন এগুলো দেখিয়ে মন খারাপ করানোর কি দরকার। কিন্তু আমার মতে এসব দৃশ্যও মনে রাখা দরকার। আমাদের আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা, নিজেদের ভেতরে লুকানো হিংস্রতাকে প্রশমিত করা, মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবার জন্যে এর প্রয়েজনীয়তা অপরিসীম। জার্মানরা তা প্রতিনিয়তই ভাবে। স্কুল থেকে নিয়িমত শিশুদের ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেজন্যেই প্রয়াত জার্মান চ্যনসেলর উইলি ব্রান্ট পোল্যান্ডের আউশভিচের মরণ ক্যম্পে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সকাল ৮:৩৩
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×