হৃদ্য,
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে অর্বাচীন সুখটুকু কিনেছিলাম আমি। তুমি খেঁয়ালি মনের ঝাঁপি খুলে দিয়েছিলে। আমি বলেছিলাম, “ওমা সেকি! তুমি কিভাবে জানতে আমি কড়া নাড়বো ?” তুমি মুখ টিপে হেসে বলেছিলে , “হুম আমি সব জানি; আমার যে জহুরী'র চোখ।” সত্যিই কি তুমি সব জানতে হৃদ্য ? চালতা বনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, শালিকগুলো কিচির মিচির করে ডাকছিল; মনে হচ্ছিল ওরা আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। তুমি বললে “প্রকৃতি এতটা গোঁয়ার হতে পারে জানা ছিল না; দেখো লজ্জাবতী কিভাবে নুয়ে পড়েছে অথচ তার ধার কত, উফ আমার পা'টা কেটে গেলো !” আমি তোমাকে আলতো ছুঁয়ে বলেছিলাম, “কাঁটা দেখোনা সোনা--সবুজটা দেখো। জীবনের বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকবে হাজারো কাঁটা, তুমি জীবনের সুন্দর রঙটাকে দেখো, জীবনের বোধটাকে দেখো তাহলে কাঁটার ব্যথা ভুলে যাবে। প্রকৃতির সবুজে বিলীন হয়ে যাও- লজ্জাবতীর আঘাত তুচ্ছ মনে হবে।” তুমি আমার কথাগুলো শুনে তন্ময় হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে-------।
হঠাৎই কান্নাস্বর, একটা নবজাতকের চিৎকার। আমরা থমকে গেলাম। হেলেঞ্চার ঝোপে বসা প্রজাপতিগুলো ভীত হয়ে আঁচল ভাসাল বৈকালী আকাশে । শিমুল গাছের ফুলগুলো খসে পড়ল বোঁটা থেকে। নেতিয়ে পড়ল সেই লজ্জাবতী। আকাশের চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছে। লোকালয় ছেড়ে প্রকৃতির শরণে এসেছি শৌখিন শীষ বাজাবো বলে কিন্তু সংক্রামিত হলাম কিসের মায়ায় জানিনা ! নিজের প্রদমিত করতে পারিনি, আমি সামনে এগিয়ে গেলাম।
তুমি আমাকে বললে, “নিজের হাতে চিরতার বীজ বুনতে যেওনা তাহলে জীবনটা তিক্ততায় ভরে যাবে।”
আমি তোমার কথায় কর্ণপাত করিনি। আমি দু'হাত দিয়ে কচি প্রাণটাকে বুকে তুলে নিলাম। সে আজ থেকে আমার- একান্তই আমার। আমি তাকে ভোরের আলো দেখাবো; আমি তাকে দুপুরের রোদের তেজ দেখাবো; গোধূলির মায়া দেখাবো; রাতের কষ্ট দেখাবো। আমি তোমায় স্পষ্ট করে বলেছিলাম, তুমি যদি সাড়া দাও ভাল, যদি সাড়া না দিলে আমার কিছুই করার নেই। আমি তুলতুলে সোনা বাচ্চাটা'র “মা” হব। আমি আমার আলো তার ভেতর- বাহির সব জায়গায় ছড়িয়ে দেবো।
না তোমাকে রাজি করানো যায়নি হৃদ্য। তুমি পরাজিত সৈনিকের মত ময়দান পরিত্যাগ করলে। আমার কষ্ট হয়েছে খুব তোমার জন্য কিন্তু আপসোস হয়নি। কারন আমি জীবন থেকে পালাবোনা। তুমি জান, আমি সেই সোনা বাচ্চাটার নাম রেখেছি 'প্রভাত' ; আজ সে অনেক বড় হয়েছে। আমাকে সে গলা জড়িয়ে 'মা' বলে ডাকে। আমি সকল কষ্ট ভুলে যাই তার এই ডাক'টিতে। তাকে আমি ভালবাসা শিখিয়েছি, কাঁটার আঘাত ভুলে থাকার মন্ত্র শিখিয়েছি। সে জানে- সে ভালবাসতে জানে, কিন্তু আঘাত দিতে জানেনা। সে ঝড়ের প্রতিকূলে শক্ত হাতে জীবনের হাল ধরতে জানে। আমি আজ বড্ড নিশ্চিত হৃদ্য।
তোমার প্রতি আমার কোন অনুযোগ বা অভিযোগ কিছুই নেই।
তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি কেমন আছি- তাই আমি জানালাম। তুমিও তোমার সংসার নিয়ে ভাল আছ জেনে ভাল লাগল। ভাল থেকো- পাশের মানুষটিকে ভাল রেখো।
অতসী
(ছবি কৃতজ্ঞ্রতা--গুগুল)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২০