somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিডনী রোগ চিকিৎসায় খাদ্যের ভূমিকা

২৬ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিডনী রোগের নাম শুনলেই সাধারণ মানুষ আঁৎকে উঠে। মনে মনে ভাবতে থাকে যে, জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছে গেছি। এ থেকে রক্ষা পাবার আর বোধহয় কোন উপায় নেই। ছুটাছুটি শুরু হয় বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য। আমাদের দেশে কিডনী রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কিডনী রোগ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু কিডনী রোগ আছে, সময়মত উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে কিডনী ফেইলুর হয়ে যায়। অর্থাৎ কিডনী স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। কিডনী ফেইলুরের অন্যতম কারণ হ’ল অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগ। মেডিসিন বা অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি কিডনী ফেইলুরে Dietary modification-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিডনী ফাংশন এবং ফেইলুরের ধাপ ও অন্যান্য অংগের ফাংশন নিরূপণ করে উপযুক্ত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী সুষম খাবার খেলে রোগী প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ডায়েটের উদ্দেশ্যই হ’ল- (১) সঠিক পুষ্টিমান বজায় রাখা, (২) কিডনীজনিত বিষক্রিয়া কমিয়ে রাখা, (৩) শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙ্গে যেতে বাধা দেয়া, (৪) রোগীর শরীর ভাল লাগা এবং কিডনী ফেইলুরের বর্তমান অবস্থান যেন আর আগাতে না পারে (৫) ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তার দূরত্ব কমিয়ে আনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ একমত হয়েছেন যে, প্রয়োজনীয় প্রোটিন (Amino acid of high biological) দিতে হবে, যেমন ডিম ও দুধ থেকে। অন্যান্য প্রোটিন সীমিতকরণ করতে হবে। কারণ ঐসব প্রোটিন শরীরে জমা হয়ে ইউরিয়া, নাইট্রোজেন তৈরি করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে অপ্রোটিন জাতীয় ক্যালরী দিতে হবে প্রোটিনের যথাযথ ব্যবহারের জন্য এবং অভ্যন্তরীণ প্রোটিনকে সুরক্ষার জন্য।

খাদ্যশক্তি : এই রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরী দিতে হবে। পর্যাপ্ত ক্যালরী না দিলে শরীরের টিস্যু ভেঙ্গে রক্তে ইউরিয়া এবং পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনীর পক্ষে ঐগুলো অপসারণ করা দুঃসাধ্য হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের দিতে হবে ৩৫-৪০ কিলোক্যালরী, শরীরের প্রতি কেজি আদর্শ ওযনের জন্য অথবা ২০০০-৩০০০ কিলোক্যালরী প্রতিদিন যারা নিয়মিত হিমোডায়ালাইসি/পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস করেন। যেসব রোগী অনবরত চলমান পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস গ্রহণ করেন তারা ডায়ালাইসেট থেকে গ্লুকোজ শোষণ করে এবং তাদের অতিরিক্ত ওযন বাড়ে। শ্বেতসারই (Carbohydrate) ক্যালরীর প্রধান উৎস এবং প্রোটিনের সঙ্গে একসাথে খেতে হবে। সুতরাং খাদ্যশক্তির জন্য প্রোটিন ব্যবহৃত হবে না। অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত শ্বেতসার এবং কম ইলেকট্রোলাইট সাপ্লিমেন্ট করলে বেশি পরিমাণে খাদ্যশক্তি বাড়ে।

প্রোটিন : প্রোটিন ০.৬ গ্রাম শরীরের প্রতি কেজি আদর্শ ওযনের জন্য দিলে নাইট্রোজেন ব্যালান্স ভাল হয় এবং যাদের ডায়ালাইসিস হয়নি তারা এর চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ করলে শরীর শুকিয়ে যায়। কম প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (২৫ গ্রামের কম) যুক্ত এসেনসিয়াল এমাইনো এসিড এবং কিটোসিড দিলে কিডনী ফেইলুর রোগীদের নাইট্রোজেন ব্যালেন্স ভাল হয়। হিমোডায়ালাইসিসের রোগীকে ১.০ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি শরীরের ওযনের জন্য দিতে হবে, হিমোডায়ালাইসিসে ক্ষতি হওয়া প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর জন্য।

তেল : ক্রনিক কিডনী ফেইলুরে সাধারণত লিপিড প্রোফাইল বাড়ে। সুতরাং ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল কম রাখতে হবে এবং পলিআনসেচুরেটেড তেল বেশি দিতে হবে।

পটাসিয়াম : অতিরিক্ত বা কম পটাসিয়াম দুটোই রোগীর জন্য খারাপ। ক্রনিক কিডনী ফেইলুরে সাধারণত পটাসিয়াম বৃদ্ধি হয়। রোগীর রক্তে এবং প্রসাবে পটাসিয়ামের মাত্রা দেখে ডায়ালাইসেটের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। ডায়ালাইসিস হয়নি এমন রোগীদের ১৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম দিতে হবে। হিমোডায়ালাইসিস রোগীকে দিতে হবে ২৭০০ মিলিগ্রাম এবং পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস হ’লে ৩০০০ মিলিগ্রাম থেকে ৩৫০০ মিলিগ্রাম। প্রাণিজ প্রোটিন, অনেক ফল এবং শাক-সবজিতে পটাসিয়াম বেশি থাকে, সেগুলো বাদ দিতে হবে। অনবরত চলমান পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস রোগীদের পটাসিয়াম সীমিত করার প্রয়োজন নেই।

সোডিয়াম : শরীরে রস, উচ্চরক্তচাপ এবং হার্ট ফেইলুরের কারণে লবণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়ালাইসিস হয়নি এমন উচ্চরক্তচাপ সম্পন্ন রোগীকে এক গ্রাম সোডিয়াম দৈনিক দেয়া যেতে পারে। তবে সোডিয়ামের অভাব থাকলে দুই গ্রাম দৈনিক দিতে হবে। হিমোডায়ালাইসিস চলছে এমন রোগীদের দৈনিক দিতে হবে ১.০ থেকে ১.৫ গ্রাম। আর পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস রোগীদের ২.০ থেকে ৩.০ গ্রাম। অনবরত চলমান পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস রোগীদের সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই। তবে রক্তচাপ কম হ’লে সোডিয়াম দিতে হবে।

ফসফরাস : ইউরিয়া বেশি রোগীদের ক্রমান্বয়ে ফসফরাস লেবেল সেরামে বাড়তে থাকে এবং রোগীর এসিডোসিস হয়। ফসফরাস লেবেল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দিনে ৬০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস খাদ্যে দিতে হবে। ডায়রিয়ার উৎপাদিত খাবার সীমিত করতে হবে। যেহেতু তাদের মধ্যে বেশি ফসফরাস থাকে এবং তাতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমবে। অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড জেল প্রায়ই দেয়া হয় অন্ত্রে ফসফেটকে বন্ধন করার জন্য।

ক্যালসিয়াম : কিডনী ফেইলুরে সাধারণত ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায় এবং কিডনীর ক্ষতি হয়। সাধারণত প্রোটিন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার সীমিত করার কারণে ক্যালসিয়ামও কমে যায়। সেরাম ক্যালসিয়াম লেবেল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ও এটা সাপ্লিমেন্ট করতে হবে এবং স্বাভাবিক মাত্রায় আনতে হবে। ক্রনিক ইউরেমিক রোগীকে দিনে ১.২ গ্রাম থেকে ১.৬ গ্রাম এবং ডায়ালাইসিস রোগীকে ১.০ গ্রাম দিতে হবে।

খনিজ : শুধুমাত্র খাদ্য আয়রণ এবং ট্রেস মিনারেলস-এর চাহিদা মেটাতেই পারে না। সুতরাং খনিজ সাপ্লিমেন্ট করতে হবে। কিডনী ফেইলুরে খাওয়ার অরুচি হয়। সেক্ষেত্রে জিংকসাপ্লিমেন্ট করলে রুচির পরিবর্তন ঘটে।

ভিটামিন : ডায়ালাইসিসের সময় ভিটামিন সি এবং বি ভিটামিন শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই ভিটামিনগুলো কম খাওয়া হয়। কারণ কাঁচা শাক-সবজি সীমিত করা হয় এবং খাদ্য অনেক পানির মধ্যে পাক করা হয় এতে পটাসিয়ামের মাত্রা কমানোর জন্য। ফলিক এসিড এবং পাইরিডক্সিনের প্রয়োজনও বেশি হয় অন্যান্য ওষুধের বিপরীত কার্যকারিতার জন্য। ভিটামিন ডি-এর বিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। কারণ ফেইলুর হওয়া কিডনী ভিটামিন ডি-কে একটিভ ফর্মে নিতে পারে না। সুতরাং সকল ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট করতে হবে।

পানি : ক্রনিক কিডনী ফেইলুরে পানি গ্রহণ নিবিড়ভাবে মনিটর করতে হবে। যদি উচ্চরক্তচাপ বা ইডিমা না থাকে, তবে দৈনিক ৫০০ মিলিলিটার যোগ যে পরিমাণ প্রস্রাব হয় তা দিতে হবে। দেড় থেকে তিন লিটার পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। যদি প্রস্রাব একেবারেই না হয় বা কম হয় তাহ’লে পানি দেড় লিটারের নিচে সীমিত রাখতে হবে। ডায়ালাইসিস হওয়া রোগীর ওযন দৈনিক এক পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে দেয়া যেতে পারে। অনবরত পেরিটোনিয়েল ডায়ালাইসিস নিয়ে চলনশীল রোগীর পানি সীমিত করার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ডায়ালাইসেট থেকে।


* সংকলিত
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×