আগের পর্ব ...
তাসবীহ পাঠকারী- ১ম অংশ
জান্নাতে যাওয়ার এক বড় মাধ্যম তাসবীহ পাঠ করা। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলে তাসবীহ পাঠ করা। তাসবীহ পাঠ করা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘আমার নিকট সমস্ত পৃথিবী অপেক্ষাও প্রিয়তর হচ্ছে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলা’ {মুসলিম, মিশকাত হা/২২৯৫; বাংলা মিশকাত হা/২১৮৭}। হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল উপরোক্ত বাক্যগুলি আল্লাহর নিকট সমগ্র পৃথিবী অপেক্ষাও উত্তম।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিক হয়’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২২৯৬; বাংলা মিশকাত হা/২১৮৮}। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল মানুষের গুনাহ যত বেশীই হোক নাকেন এই তাসবীহ দিনে একশত বার পাঠ করলে সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘দু’টি সংক্ষিপ্ত বাক্য যা বলা সহজ, অথচ পাল্লাতে ভারী ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তা হল, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২২৯৮; বাংলা মিশকাত হা/২১৯০}। এ তাসবীহটি তিনটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী- (১) বলা খুব সহজ (২) ক্বিয়ামতের দিন পাল্লায় ভারী হবে (৩) আল্লাহর নিকট অতীব প্রিয়। এই তাসবীহ পাঠ করার পরিণাম জান্নাত।
সা‘দ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছা.)-এর নিকট ছিলাম। এসময়ে তিনি বলেলেন, তোমাদের কেউ কি দৈনিক এক হাযার নেকী অর্জন করতে অক্ষম? তাঁর সাথে বসা কোন ছাহাবী বললেন, কিভাবে আমাদের কেউ দৈনিক এক হাযার নেকী অর্জন করতে পারে? তখন রাসূল (ছা.) বললেন, সে দৈনিক একশত বার সুবহানাল্লাহ বলবে। এতে তার জন্য এক হাযার নেকী লেখা হবে। অথবা তার এক হাযার গুনাহ মাফ করা হবে’ {মুসলিম, মিশকাত হা/২২৯৯; বাংলা মিশকাত হা২১৯১}। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, দৈনিক একশত বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতে পারলে এক হাযার নেকী লেখা হবে কিংবা এক হাযার গুনাহ মাফ করা হবে।
উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়া হতে বর্ণিত, একদিন খুব সকালে নবী করীম (ছা.) তাঁর নিকট হতে বের হলেন, যখন তিনি ফজরের ছালাত আদায় করে স্বীয় ছালাতের স্থানে বসা ছিলেন। অতঃপর রাসূল (ছা.) প্রত্যাবর্তন করলেন, যখন সূর্য খুব উপরে উঠল, তখনো জুওয়াইরিয়া (রা.) তথায় বসা ছিলেন। রাসূল (ছা.) জিজ্ঞেস করলেন, আমি তোমার থেকে পৃথক হওয়া অবধি কি তুমি এ অবস্থায় আছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী করীম (ছা.) বললেন, তোমার পরে আমি মাত্র চারটি বাক্য তিনবার বলেছি, যদি তুমি এ অবধি যা বলেছ তার সাথে ওযন দেয়া হয়, তাহলে বাক্যগুলির ওযনই বেশী হবে। বাক্যগুলি হচ্ছে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়ারিযা নাফসিহি, ওয়াযিনাতা আরশিহী ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি। অর্থ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসা সহকারে তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ, তাঁর সন্তোষ পরিমাণ, তাঁর আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর বাক্য সমূহের সংখ্যা পরিমাণ’ {মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০১; বাংলা মিশকাত হা/২১৯৩}। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, এ বাক্যগুলির নেকী সীমাহীন। এ বাক্যে আল্লাহর অনেক অনেক প্রশংসা করা যায়। এই বাক্যগুলিতে আল্লাহর বেশী বেশী সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনিই হচ্ছেন, সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। ঐ ব্যক্তির দশটি গোলাম আযাদ করার সমান নেকী হবে। তার জন্য আরো একশতনেকী লেখা হবে এবং একশত গুনাহ মাফ করা হবে এবং এ বাক্য তাকে ঐ দিনের জন্য শয়তান হতে রক্ষাকবচ হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সে যা করছে তা অপেক্ষা উত্তম কেউ কিছু করতে পারবে না। ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে এ আমল অপেক্ষা অধিক আমল করবে’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০২; বাংলা মিশকাত হা/২১৯৪}।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি এ দো‘আটি দৈনিক একশত বার বলবে সে দশজন গোলাম আযাদ করার সমান নেকী পাবে। আরো একশতটি নেকী বেশী করা হবে এবং একশতটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং সে দিন শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আবু মূসা আশ‘আরী (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল (ছা.)-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে লাগল। তখন রাসূল (ছা.) বললেন, হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি রহম কর এবং নীরবে তাকবীর পাঠ কর। তোমরা বধিরকে ডাকছ না এবং অনুপস্থিতকেও ডাকছ না। তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টাকে, তিনি তোমাদের সাথে আছেন। যাকে তোমরা ডাকছ তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড় অপেক্ষাও তোমাদের অধিক নিকটে আছেন। আবু মূসা বলেন, আমি তখন রাসূল (ছা.)-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অর্থাৎ আমার কোন উপায় নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত। তখন রাসূল (ছা.) বললেন, ওহে ইবনু কায়েস! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডার সমূহের একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দিব না? আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তা হচ্ছে- ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ {বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০৩; বাংলা মিশকাত হা/২১৯৫}।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, উচ্চস্বরে তাকবীর বা যিকির করা যাবে না। কারণ আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। সাথে সাথে তিনি বান্দার খুবই কাছে থাকেন। অর্থাৎ তাঁর রহমত ও সাহায্য মানুষের সাথে থাকে। অত্র দো‘আটি পাঠ করলে জান্নাত লাভ করা যাবে।
ইনশাআল্লাহ্ চলবে ...
রচনাঃ
আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪৪