আপনার প্রিয়জন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে এখনই ডাক্তারের কাছে নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনের এই মুহূর্তটিতে আপনি হয়ত ডাক্তার পাচ্ছেন না হাতের কাছে, হয়ত আপনি অবস্থান করছেন এমন একটি জায়গায় যেখান থেকে একজন ডাক্তারকে ধারেকাছে পাওয়াও কষ্টসাধ্য। সেই মুহূর্তে আপনি কী করবেন? অসহায় বোধ করবেন নিশ্চয়?
কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে আপনি হাতের কাছে ডাক্তার না পেলেও যদি ডাক্তারের পরামর্শ পেয়ে যান তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটি? নিশ্চয়ই ভালো। কারণ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনি নিজেই পারবেন আপনার প্রিয়জনের সেবা করতে, যার ফলে তার সুস্থতাও নিশ্চিত করা যাবে। আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে আপনার শঙ্কা কেটে যাবে। আপনি হবেন নিশ্চিন্ত।
আপনাকে এমনই নিশ্চিন্ত জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা দিতেই বর্তমানে বাংলালিংকের হেল্থ হেলপলাইন ৭৮৯। ৭৮৯ বা বাংলালিংকের হেল্থ হেলপলাইন সম্পর্কে বাংলালিংক তার গ্রাহকদের অবহিত করার জন্য ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ করে একটি বিজ্ঞাপন। ক্যারট কমিউনিকেশনের কপি রাইটার তাসনুভা আমিনের স্ক্রিপ্ট ও পরিকল্পনায় বাংলালিংকের জন্য বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেন পরিচালক সামিউল আহমেদ। বিজ্ঞাপনটির প্রোজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন বাংলালিংকের ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নাফিসা ফারুক। বিজ্ঞাপনটিতে অভিনয় করেছেন তারকা মডেল নোবেল এবং তারকা অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ।
বিজ্ঞাপনটিতে তাদের অংশগ্রহণ, নির্মাণ প্রসঙ্গ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা বলেছেন জলছবিকে :
বিজ্ঞাপনটির কাজ পাওয়া প্রসঙ্গে পরিচালক সামিউল আহমেদ বলেন, আমি এর আগে বাংলালিংকের আরেকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। সেটি হলো, কক্সবাজারের জন্য ভোট। নতুন প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের জন্য ভোট। এরপর এ বছরের শুরুতে ক্যারট কমিউনিকেশন থেকে আমাকে যখন ফোন করে বলল, বাংলালিংকের আরেকটি বিজ্ঞাপন করতে হবে। তখন তো আমি খুবই এক্সাইটেড। কারণ আমি জানি বাংলালিংকের কাজ মানেই একটা নতুন কিছু এবং সেটি অবশ্যই আরও ভালো হবে যেহেতু সঙ্গে ক্যারট কমিউনিকেশন আছে।
ফোন পেয়ে আমি ক্যারটের অফিসে গেলাম। তখন স্ক্রিপ্ট রাইটার তাসনুভা আমিন দেশে ছিলেন, তিনি এখন অস্ট্রেলিয়াতে গেছেন পড়াশোনা করতে। তার সঙ্গে এবং নাদিয়াসহ ক্যারটের পুরো টিমের সঙ্গে বসলাম স্ক্রিপ্ট নিয়ে। বেশ কয়েকবার সিটিং দিয়ে স্ক্রিপ্ট ঠিক হলো। বাংলালিংকের সিদ্ধান্ত ছিল এই বিজ্ঞাপনটিতে তারকা জুটি থাকবে। যাদের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে ছোট ছোট রোমান্সকে। যেগুলো তারকা জুটি খুব ভালোভাবে দিতে পারবে। আমরা তাদের এক্সপ্রেশন বা লুকগুলো ব্যবহার করব। সিদ্ধান্ত হলো নোবেল এবং বিজরী কাজ করবেন আমাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গেও কথা হলো। স্ক্রিপ্ট তাদের ভালো লেগেছে। তাদের ক্যারেক্টার তারা বুঝে নিল। ক্যারেক্টারগুলো এমন ছিল যে, দুজনেই চাকরিজীবী। দুজনেই স্বাধীন কিন্তু দুজনের মধ্যে দুজনের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে এমনটি প্রকাশ পাবে। এবং বলাইবাহুল্য কাজ করতে গিয়ে তারা তো সেটা অত্যন্ত চমৎকারভাবে করেছে।
বিজ্ঞাপনটিতে জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে বিজরী বরকতউল্লাহ বলেন, ‘আমি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। এক মাস থাকব। যখন পরিকল্পনা করছি এবং গোছগাছ করছি এ সময় ৭ তারিখের দিকে আমার কাছে প্রস্তাবটা এলো। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। কারণ আমার হাতে সময় খুবই কম। এদিকে ওদের শুটিংয়ের তারিখ আর সিডিউল ছিল সপ্তাহখানেকের এবং ১৪ তারিখের পর থেকেই। কাজেই মিল হচ্ছিল না। অথচ ওদের স্ক্রিপ্টটা আমার খুব পছন্দ হলো। বললাম, কাজটি করার ইচ্ছে আছে; কিন্তু সময়ের তো মিল হচ্ছে না।
তখন ওরা বলল, মার্চ মাসের দিকে আমি ফিরে আসার পর কাজটি শুরু করবে। আমিও ভাবলাম, হাতে কিছু সময় পাওয়া গেল। তারপর হঠাৎ করেই ওরা সিদ্ধান্ত নিলÑ কাজটা আমার বিদেশ যাওয়ার আগেই শেষ করে ফেলবে যেভাবেই হোক। সে হিসেবে তাড়াহুড়া করে কাজ শুরু হলো। লোকেশন ঠিক করা হলো। তিনটা বিজ্ঞাপনের কাজ একসঙ্গে।
যেহেতু তাড়াহুড়ো ছিল কাজেই শুটিং হয়েছিল খুবচাপের মধ্য দিয়ে। সেই অভিজ্ঞতাটা বলতে গেলে বলতে হয় সকাল থেকে শুরু করে রাত তিনটা পর্যন্ত টানা তিন দিন কাজ করেছি। আমরা যে শুটিং টিমের সঙ্গে কাজ করেছি তারা খুবই অভিজ্ঞ। ৯৮ সালে আমি যখন সানসিল্কের বিজ্ঞাপনের কাজ করতে মুম্বাইতে গিয়েছিলাম তখন ওখানকার টিমের সঙ্গে কাজ করে যেরকম ভালো লেগেছিল, ওরা যেরকম অভিজ্ঞ ছিল সে রকম অনুভূতিটা অনেকদিন পর আবার পেয়েছি এদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে।
পরিচালক সামিউলের সঙ্গে এর আগে আমি অন্য কোনো কাজ করিনি। তবুও কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রকার অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি। কারণ হলো আন্তরিকতা।
যেহেতু তাড়াহুড়া ছিল দু-চার দিনের মধ্যেই শুটিং শেষ করতে হবে। কাজেই যেটা হলোÑ মেকআপ, কস্টিউম সব নিজের মতো করে নিয়ে নেয়া, যেটা অন্যান্য শুটিংয়ের ক্ষেত্রে হয় যে, সব কিছুই রেডি থাকে, গেলাম মেকআপ নিলাম আর অভিনয় শুরু করলামÑ এখানে সেটা হয়নি। সবকিছুই নিজের মনে হয়েছে। এ ছাড়া স্ক্রিপ্টেও নতুনত্ব ছিল।
আরেকটা মজার ব্যাপার হয়েছিল- যখন বৃষ্টির শট নেয়া হবে তখন পানি পাওয়া যাচ্ছিল না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের আশপাশে। অবশেষে কোথা থেকে পানি জোগাড় হলো, বৃষ্টির দৃশ্যের শট নেয়া হলো। কিন্তু শট নেয়ার সময় নাকে কেমন একটা গন্ধ লাগছিল। তখন পাত্তা দিইনি। কিন্তু শুটিং শেষে দেখি, যে পানি দিয়ে বৃষ্টি ঝরানো হচ্ছিল সেটি কালো পচা পানি। তাড়াতাড়ি করে ডেটল সাবান দিয়ে গোসল করেছি। ওরাই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তবে পুরো শুটিংয়েই খুব মজা হয়েছিল।
এ রকম চমৎকার চিত্রনাট্যের বিজ্ঞাপনে কাজ করার আনন্দটাই তো আলাদা বলে উল্লেখ করেন বিজরী বরকতউল্লাহ।
নোবেল বাংলালিংক হেলথ-হেলপলাইনের বিজ্ঞাপনটি প্রসঙ্গে বলেন, বছরের শুরুর দিকে ওরা আমার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, স্ক্রিপ্ট পাঠিয়েছিল। স্ক্রিপ্ট দেখার পর আমার কাছে গল্পটা খুব ভালো লাগল। পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেও খুব ভালো লাগল। তারা খুব পজেটিভ ছিল। সব কিছু দেখে ওদের সঙ্গে কাজ করতে মন চাইল।
এখানে কাজ করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতার চেয়ে ইনপুটের কাজটিই বেশি করেছি। সারাদিন কাজ করেছি। সবাই মিলে মজা করেছি। ফেব্রুয়ারি মাস ছিল। সকালের দিকে গরম না থাকলেও ১০টা ১১টার পর সূর্যের প্রখর তাপের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। সেই গরমের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে সত্যি সত্যিই ঠাণ্ডা লেগে গিয়েছিল, জ্বর এসে গিয়েছিল।
আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল সুস্থ মানুষ হয়েও জ্বরের এক্সপ্রেশনটা তুলে ধরা। সেটা করতে গিয়ে আমি কাজে লাগিয়েছি আমার কয়েক বছর আগের জ্বরের স্মৃতি।
মডেলিং নিয়ে তার ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে নোবেল বলেন, ‘ভালো স্ক্রিপ্ট হলে অবশ্যই যে কারও সঙ্গেই কাজ করব। আর তাছাড়া বাংলালিংকের কাজ তো বরাবরই দেখে আসছি যে, তারা সব সময়ই ভিন্ন ধরনের কিছু কাজ করছে। আর ভিন্ন ধরনের এই কাজগুলোর মধ্যে মজাই আলাদা। আমরা কাজটা করেছিলাম খুবই অল্প সময়ের মধ্যে। কারণ বিজরীর খুব তাড়া ছিল। সে দেশের বাইরে যাবে, এজন্য। কিন্তু তাড়াহুড়া করে কাজটি করার পরও সেটি যেভাবে দর্শক গ্রহণ করেছে তা সত্যিই ভালো লেগেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, তাদের কাজের মান কী রকম? এ রকম ভালো কাজ করতে পারলে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে এটা তো বলাইবাহুল্য এবং আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকেই তা বুঝি। এ রকম কাজের প্রতি আমার আকর্ষণটা বরাবরই।’
source: 'সাপ্তাহিক'

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




