সবাই জিততে চায়। কেউ হারতে চায় না। এটা ধ্রুব সত্য।
তবে নিষ্ঠুর সত্য হল; আমারা কাউকে না কাউকে হারিয়ে তবে জিততে চাই। বিষয়টাকে আমরা প্রাত্যহিক জীবনের অংশ করে নিয়েছি। আমি জিততে হলে কাউকে না কাউকে হারাতেই হবে। এটাকেও আমরা ধ্রুব সত্য বলে ধরে নিয়েছি।
তবে কাউকে না হারিয়ে কি জেতা যায় না?
আপাত দৃষ্টিতে অবাস্তব এবং অসম্ভব মনে হচ্ছে।
Think out of circle. বৃত্তের বাইরে থেকে ভাবুন।
আমি জিতব তবে কাউকে হারিয়ে নয়। অর্থাৎ আমিও জিতব তুমিও জিতবে। তার মানে হল, কাউকে না হারিয়েও জেতা যায়। জিততে হলে অন্যকে হারানোর বা পরাজিত করার প্রয়োজন নেই।
কাউকে পরাজিত না করেও আপনি জিততে পারেন এবং পুরোপুরিই জিততে পারেন।
আপনি হয়তো আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন। ভুরি ভুরি উদাহরন আছে। দুটি উল্লেখ করছি:
এক.
ক্রসেডের যুদ্ধ। মুসলমানদের সেনাপতি সুলতান গাজী সালাউদ্দীন। খৃীষ্টানদের ফার্ডিনান্ড। তুমুল যুদ্ধ চলছে। হঠাৎ যুদ্ধ বিরতির পতাকা উড়তে দেখা গেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেনা প্রধান ফার্ডিনান্ড অসুস্থ্য । দুুটি শিবিরই যুদ্ধ থামিয়ে দিল। যে যার মত গুছিয়ে নিল।
কিন্তু অনেক দিন হওয়ার পরেও যুদ্ধ বিরতি চলছে। সুলতান গাজী সালাউদ্দীন বুঝলেন ফার্ডিনান্ড এখনো সুস্থ্য হয়নি। তার মানে রোগ গুরুতর।
গাজী সালাউদ্দীন ছিলেন একজন দক্ষ চিকিৎসক। তিনি একজন কবিরাজ সেজে বিরোধী শিবিরে প্রবেশ করলেন। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসা দিয়ে ফার্ডিনান্ড কে সুস্থ্য করে তুললেন।
যথারীতি যুদ্ধের পতাকা উড়ল। যুদ্ধ শুরু হল। যুদ্ধ করতে করতে উভয় পক্ষের সেনাপতি মুখোমুখি হল। প্রথম দেখায়ই ফার্ডিনান্ড এর সন্দেহ হল গাজী সালাউদ্দীনকে নিয়ে। খুব যেন পরিচিত।
মোটামুটি নিশ্চিত হল ফার্ডিনান্ড। এ সেই কবিরাজ। যে পরম নিষ্ঠার সাথে তার চিকিৎসা করেছে।
‘আপনি কি সেই কবিরাজ, যে আমায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেছে?’ বলল ফার্ডিনান্ড।
হ্যাঁ আমিই সেই কবিরাজ। তবে তাতে কোন কাজ নেই। এসো যুদ্ধ করি।
যুদ্ধ করতে রাজি হল না ফার্ডিনান্ড। তলোয়ার ফেলে দিল সে। যে আমার জীবন বাচাঁল তার বিরুদ্ধে কিভাবে লড়ব? যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করল ফার্ডিনান্ড।
হ্যাঁ, সুলতান গাজী সালাউদ্দীন জিতল। তবে ফার্ডিনান্ড কি হারল? না! সেও জিতল।
দুই.
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ম্যাকলেল্যান্ড। তাঁর একজন শত্রু ছিল। পত্রিকার রিপোর্টার। সব সময় তার পত্রিকায় মন্ত্রী মহোদয়ের দুর্নাম প্রচার করত।
কিন্তু মন্ত্রী কিছুই বলতেন না। একদিন ট্রেন ভ্রমনে দেখলেন ঐ সাংবাদিক এক কোনায় জড়োসড় হয়ে কুঁকড়ে আছে। প্রচন্ড শীতের সময়। সাংবাদিক ঘুমাচ্ছে আর শীতে কাঁপছে।
মন্ত্রী তার গায়ের কোট খুলে সাংবাদিককে পরিয়ে দিলেন। দিয়ে চলে গেলেন।
সাংবাদিক ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন তার গায়ে একটা অচেনা কোট। অবাক হলেন তিনি। এটা কোথা থেকে এল?
ভাল করে দেখলেন। এটা তো মন্ত্রী মহোদয়ের কোট। মন্ত্রীকে ফলো করে এই ট্রেনে উঠেছিলেন। পথিমধ্যে ঘুম পেয়ে গেল। তার মাঝেই মন্ত্রী তাকে দেখতে পেয়ে এই কোট দিয়ে তার শীত নিবারন করেছিল। মন্ত্রী ইচ্ছা করলে তার ক্ষতিও করতে পারত। অথচ এই মন্ত্রীকে তিনি কতই না বিব্রত অবস্থায় ফেলেছিলেন।
সেদিন থেকে সাংবাদিক আর কখনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু লিখেন নি। সাংবাদিক তার ভুল বুঝতে পারল। সে মন্ত্রীর ভাল দিক নিয়ে লেখা শুরু করল। একজন শত্রু পরিনত হল বন্ধুতে।
মন্ত্রী জিতলেন। সাংবাদিক কি হারলেন? না! সাংবাদিককে জিতিয়েই মন্ত্রী জিতলেন।
তাই আসুন শত্রুকে জিতিয়েই তবে জিতি।।
পরিশেষে আপনার সন্তানের যত্ন নিন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




