somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নয়ন বিন বাহার
তোমাদের এ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। দূরে! বহু দূরে! ঈগল চোখের আড়াল খুঁজে নিচ্ছি- যেখানে সমস্ত পাপী স্বীকারোক্তি দেয় তাদের আকন্ঠ পাপের। অন্তত তারা সত্যের আড়ালে পাপ করে না; পাপ নিয়ে করে না কোন মিথ্যাচার!

গল্পঃ মানসিক

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুং করে উঠল হাতের মোবাইল সেটটা|

মেসেজ এসেছে। সিন করেই কপালে ভাঁজ ফেলল বদি সাহেব। বদিয়ল আলম বদি। স্বনামধন্য প্রমোটর।

খুব একটা পাত্তা দিল না বদি। হর হামেশা এরকম ফালতু মেসেজ আসেই। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে এরকম মেসেজ কয়েকবার এসেছে। সেদিন একটা ফকির, পাগল বলা যায়, উদ্ভ্রান্ত, হঠাৎ কোথা থেকে সামনে উদয় হয়ে লম্প দিয়ে বলল, তুই গাড়ি চাপা পাড়বি, সাবধান!

এমন ভয়ঙ্করভাবে শব্দগুলো কানে এল, যেন ভেতরটা একটা কাঁপুনি দিল।

খুবই শক্তপোক্ত মানুষ এই বদিয়ল আলম বদি। এবং ভীষণ লজিক্যাল। যুক্তির বাইরে কোনদিন চিন্তা করেননি। আবেগ সংক্রান্ত কোন বিষয় কোনদিন তাকে কাবু করতে পারেনি। অযৌক্তিকভাবে কেউ কোনদিন তাঁকে প্রভাবিত করতে পারেনি।

সেই বদিয়ল আলম বদি এই বাজে একটা টপিক নিয়ে একটু উতলা হয়ে উঠলেন। মাঝে মাঝে কি সব দু:স্বপ্ন দেখেন। এটা কি বয়সের ভার, না কি মনের ভার, ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। কতটুকু মানসিক আর কতটুকু জাগতিক, সে রহস্য খুব কঠিন হয়ে উঠছে।

একটা ফকির, পাগল, উদ্ভ্রান্ত লোকের কথায় কেন তিনি টলে উঠলেন? বুঝে উঠতে পারছেন না। জনশ্রুতি আছে এরকম উদ্ভ্রান্ত মানুষগুলো না কি দিব্য জ্ঞানের অধিকারী। কোনদিন তিনি এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাননি। প্রয়োজনও পড়েনি। হঠাৎ কি যে হল।

মোবাইলের মেসেজের বিষয়টিও বুঝে আসছে না। কি এক হিজিবিজি নাম্বার থেকে বারবার মেসেজ পাঠাচ্ছে। ‘রাস্তাঘাটে সাবধান’। এরকম জনসচেতনমূলক মেসেজ সরকারের বিভিন্ন দফতর বা বিভিন্ন এনজিও মাঝে মাঝে পাঠায়। এগুলো পড়ে বা না পড়ে ডিলিট করাই হল হালকা কাজ। কিন্তু ‘রাস্তাঘাটে সাবধান’ আর পাগলের ‘ তুই গাড়ি চাপা পাড়বি, সাবধান’ এদুটোর মধ্যে মিল কোথায়?

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল তিনি এরকম একটা ফালতু বিষয় নিয়ে কেন এত উতলা হচ্ছেন তাই বুঝতে পারছেন না।

এবার রীতিমত ভয় পেলেন বদিয়ল আলম বদি। তাঁর গাড়ির ঠিক সামনেই একটা পিকআপ উল্টে গেল। ড্রাইভার বেশ ভালই আহত হয়েছে। রাস্তার পাশে সমতল জমি থাকায় হয়ত এ যাত্রায় বেঁচে গেল। চোখের সামনের এ ঘটনায় খুব আতঙ্কিত হলেন তিনি। টুং করে মেসেজ এল। সিন করলেন।
‘রাস্তাঘাটে সাবধান’।

সে রাতে দু:স্বপ্ন দেখলেন। সারা গা ঘামে জবজব। লক্ষ্য করলেন, থর থর করে কাঁপছেন। একটা বাইসাইকেল তাকে ধাক্কা দিয়েছে। তিনি রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে বাইসাইকেলটা তাকে ধাক্কা দিল। তিনি রাস্তায় পড়ে গেলেন। পাশ থেকে শুনতে পেলেন কেউ একজন পড়ছে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন।

সে রাতে আর ঘুম হল না তার। স্বপ্নটাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলেন তিনি। এক দৃষ্টিতে খুবই মামুলি একটা দু:স্বপ্ন। কিন্তু তার যে রি-এ্যাকশনটা হল তা অকল্পনীয়। ভাবতে চেষ্টা করলেন, মানসিক চাপের কারণে এমনটা হতে পারে। এমনিতেই একটু ঝামেলা চলছে। এরকম ঝুটঝামেলাতো হর হামেশাই লেগে থাকে। তাঁর ব্যবসাটাই ঝামেলার। প্রমোটারের ব্যবসা করবেন আর ঝামেলায় পড়বেন না, তা তো হয় না। এ লাইনে খুব সহজে আঙ্গুলে ঘি উঠে না। মহামূল্য ঘি আঙ্গুলে উঠাতে হলে বাধ্য হয়েই তা বাঁকাতে হয়। তখন কতজন ভেসে যায়-, কেউ সহজে ভাসে কেউ দেরীতে ভাসে।

তবে এবারের ভাসাভাসির ঝামেলটা কেন জানি এক ধরণের অস্বস্তি দিচ্ছে। এক অচেনা অস্বস্তি। অথচ মামলাটা খুব ভারী নয়। চোখের সামনে কোন বাঁধা বা বিপত্তি দেখাই যাচ্ছে না। পার্টিও দিক থেকে কোন স্ট্রং পিকেট নেই। পার্টির স্ট্রং কোন কানেকশনও নেই। রীতিমত গো-বেচারা টাইপ। বলতে গেলে হা-ভাতে।

জায়গাটা নিয়ে প্রস্তাব দেয়ার সাথে সাথে তারা নিমরাজী হয়ে যায়। আদর্শের বুলি কপচানো মহামানবগুলো এইরকম প্রস্তাবে তেলে বেগুনে জ¦লে উঠে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে সমানে। এই রকম হলে বুঝে নিতে হয় পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। ক্রমানুপাতিক প্রয়োজনীয় স্টেপ নেওয়ার পর দেখা যায় সব ঠিক হয়ে গেছে। প্রজেক্ট সাকসেসফুল। কোন চাপ নেই।

আজব ব্যাপার হল, এই প্রজেক্টে কোন চাপ তৈরীই হয়নি। কোন ধরণের প্রতিকূলতা আসেইনি। ভেবে দেখি, না, পরে জানাবো, -এরকম কোন শব্দও আসেনি। হম্বি-তম্বিতো নয়ই।

প্রস্তাব দেয়ার সাথে সাথেই তারা রাজী হয়ে গেল। শুধু একটাই অনুরোধ করল, আমাদেরকে একটু সময় দিন। যাস্ট কটা দিন। এর মধ্যেই যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক ঠাক করে রাখুন। শুধু একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি।

বিরাট স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।

নিশ্চিন্তভাব দুর্ভাবনায় পরিণত হল তখন, যখন দেখা গেল সেই কটা দিন মাস গড়িয়ে বছর হতে চলল। ক্রমানুপাতিক কোন পদক্ষেপও নেয়া যাচ্ছে না। কারণ প্রতিপক্ষের থেকে কোন উস্কানি নেই।

বাড়ীতে দুটা মাত্র প্রাণী। মা পেশায় স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। স্বামী হারিয়েছেন বহু আগেই। একমাত্র মেয়েও শিক্ষক। এখনো বিয়ে করেনি। কাজেই ঝামেলাহীন কারবার।

এদিকে বায়ার চাপ দিচ্ছে। জায়গাটা এমন একটা পজিশনে, যাকে বলে একেবারে লোভনীয়। বায়ার খুব দ্রুত জায়গার দখল চায়। কাজ শুরু করে দিতে চায়। কারণ যত দিন যায়, তত কস্টিং শুধু বাড়তেই থাকে।

এই প্রজেক্টে হাত দেয়ার পর থেকেই যত ঝামেলার শুরু।

মোবাইলে মেসেজ কে পাঠায় তার কোন হদিস বের করতে পারেননি। উদ্ভ্রান্ত পাগলটাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথমদিকে সপ্তাহে একদিন মেসেজ আসত। এখন দিনে দুই-তিনবারও আসে। ইদানিং মেসেজ লম্বা হয়েছে। ‘রাস্তাঘাটে সাবধান’ এর সাথে যোগ হয়েছে ‘গাড়ী চাপা পড়বেন’। প্রেরক যেন নিশ্চিত!

পরিস্তিতি খুবই ভয়াবহ বদির। প্রায়ই সে দু:স্বপ্নটা দেখেন তিনি। সারারাত আর ঘুমাতে পারেন না। ঘুমালেই এই দু:স্বপ্নটা ফিরে আসে। জেগে থাকলে মনে হয় একটা সাইকেল পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে। মোবাইলে কল এলে মনে হয় সেই মেসেজটা এসেছে। এমন অবস্থা হয়েছে মোবাইল থেকে দূরেও থাকতে পারছেন না। এই মেসেজটা সিন করতেই হয়। না করে কোন উপায় থাকে না। কোন এক মন্ত্রবলে তিনি যেন মোহাবিষ্ট।

গত দুই দিন কোন মেসেজ আসেনি। দু:স্বপ্নটাও গত দুই রাতে মাত্র এবার এসেছে। আজ একটু স্বস্তি লাগছে। চারদিকে খোঁজ খবর লাগনো হচ্ছে। যদিও কোন যুক্তিযুক্ত খবর আসেনি এখনো। তবুও মনে হচ্ছে একটা সুরাহা হবে।

অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলেন তিনি। ড্রাইভার আছে ছুটিতে। নিজেই ড্রাইভ করবেন ভাবলেন। আজ নিজেকে একটু ফিট লাগছে।

গাড়ি নিয়ে রাস্তায় উঠলেন বদি। ফোনে ইনকামিং কল বেজে উঠল। বায়ারের ফোন। রিসিভ করলেন। বায়ায় খুব রেগে আছে। এক পর্যায়ে তিনি শুনতে পেলেন,‘আপনারা পারছেন না কেন বলুনতো? এর আগে বশির প্রমোটারকে দিয়েও কাজটা হল না। বেচারা পরে গাড়ি চাপা পড়ে মরেই গেল। আপনিও পারছেন না। শুধু সময় নিচ্ছেন। আর কত সময় নিবেন, বলুন তো!’

কান গরম হয়ে গেল, মাথা চক্কর দিয়ে উঠল বদিয়ল আলম বদির। গাড়ি চাপার প্রসঙ্গটা এবার জ্যান্ত হয়ে উঠল। বশির প্রমোটার গাড়ি চাপা পড়ে মরেছে!

গাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে বদি দু’হাতে মোবাইল চেপে ধরল যন্ত্রের মত। তিনি কোথায় আছেন তা ভুলে গেলেন। নিজের যেন কোন অস্তিত্বই নেই।

ট্রাকটি যখন তার উপর দিয়ে চলে যায়, ঠিক তখন মনে পড়ল, প্রথমদিন মাস্টারনি বলেছিল,‘রাস্তাঘাটে সাবধান!’



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×