সত্য পৃথিবীর তাবৎ পিচ্ছিল পদার্থের প্রতিনিধি। ক্ষণস্থায়ী এবং সবচেয়ে বেশি অস্থির!
সত্য সকালের কুয়াশার মত দুপুরে বিলীন হয়ে যায় এবং বিকালে মিথ্যায় পর্যবসিত হয়।
মাতব্বর মুন্সির কাছে সত্য বিবেচ্য নয়।
তার সাফ কথা, স্বাক্ষী তুমি সত্য বলবা, তবে আমি সত্যের উপর বিচার করব না।
আমি বিচার করব ন্যায়ের উপর।
সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা না ও করতে পারে, তবে ন্যায় নিশ্চয় সত্যের নিশ্চয়তা দেবে।
ঃ মাতব্বর সাব, আমরা দেখেছি, জমিলার ঘরে বাসু বেপারী নিয়মিত যাতায়ত করত।
বিষয়ডা গ্রামসুদ্দ হক্কলেই জানে। এইটাই সত্য।
তয় আপনিই বলেন, জমিলারে পোয়াতি করল কেডায়?
তাছাড়া এই সব দোষ বেপারীর জোয়ানতি আমলেও ছিল। হেই কথা ভুললে চলব ক্যামনে!
ঃ মাতব্বর সাব, আমি যা কওেেনর তা আগেই কইছি। এবার আপনিই বিচার করেন।
ঃ তুমি একসময় কুকাম করছিলা। এহন আর কর না। তওবা পইড়া ভালা অইয়া গেছ।
তোমার মাইয়ারে যহন পাকিরা ক্যাম্পে নিয়া ধর্ষণ কইরা মাইরা ফালাইল,
তহন থিকা তুমি ওলী-আউলিয়া অইয়া গেছ, এই সব কাসুন্দি বহুত হুনছি!
তাছাড়া মাতব্বর সাব, আপনিই কন, চোর কখনো তার নিজের চুরি স্বীকার খায়?
ঃ জমিলা তোমার কি বলার কিছুই নাই? শুধু কান্না করলেই হবে?
তুমি কিছু না বললে বাসু বেপাীর কঠিন শস্তি হইব।
এক বুক গর্তের ভিতর পুতে তার মাথায় পাথর মারা হইব।
তাতে বেপারী প্রাণ হারাবে...
এই মিয়ারা গর্ত বানাও... পাথর আন... খুব জলদি কর...
তার পরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে-
গর্তের মাঝখানে বাসু বেপারী দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ। কিন্তু সে দেখতে পাচ্ছে,
দেখতে পাচ্ছে তার মেয়ে হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
হাট থেকে মেয়ের জন্য জরির লাল টুকটুকে শাড়ি এনেছিলেন,
তাই পরে আছে মেয়ে, বলছে, বাবা, দেখ আমাকে কেমন লাগছে...
গর্ত হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে ভরে উঠল। অনতি দূরে কয়েকটি শিয়াল সন্ধ্যা হওয়ার অপেক্ষায় রইল।
বাজখাই গলায় মাতব্বর ডাক দিল, পাথর রেডিতো মিয়ারা?
সমস্বরে আওয়াজ উঠল, রেডি...
মরিয়া হয়ে জমিলা চিৎকার দিল, বেপারীর কোন দোষ নাই...
এই শুনে বেলু বাতেন হাতের পাথর ফেলে দিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে লাগল।
মাতব্বর হাঁক দিলেন, বেলু বাতেন যেন পালাতে না পারে।
ঃ হুজুর! বেলু বাতেন আমারে ডর দেহাইছে।
কইছে, আমি যদি স্বীকার খাই তয় হে বেপারীরে মাইরা ফালাইব!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৫