এক সময় আমরা কবিতার ভাষায় কথা বলতাম। সাহিত্যের ভাষা ছিল ছন্দময়। অন্তত প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শনাবলী তাই বলে। তবুও বাংলা ভাষায় কবিতা তেমন জনপ্রিয়তা পায় নি। জনপ্রিয়তা পেয়েছে বড় গল্প বা উপন্যাস।
কেন?
উত্তর সহজ।
যে কারণে উপন্যাস জনপ্রিয় হয়েছে সে কারণগুলো হয়তো কবিতায় নেই।
কথা হলো, কবিতায় উপন্যাসের গুণাবলী থাকবে কেন?
উত্তর হলো, থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই।
আমার বোধ হয়, যে কারণে আমরা কবিতা পড়ি না, ঠিক সে কারণে আমরা উপন্যাস পড়ি।
সে কারণ কী?
গল্প!
কারণটি হলো গল্প।
পাঠক হিশেবে আমরা একটা গল্প চাই, তা হোক যে কোন মাধ্যমে।
ঠিক এ কারণেই আমরা অপরের নিন্দা বা আলোচনা, সমালোচনা করতে এবং শুনতে মজা পাই। গল্পের কারণে।
এই অভিজ্ঞতাটা আমি পাই স্কুল জীবনে। মাধ্যমিকের শুরু...
আমার দাদা একবার ঢাকা বেড়াতে গিয়ে অনেক বই এনেছিলেন। মনে পড়ে প্রথম আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন শ্রীকান্ত, প্রথম পার্ট। আমি নাওয়া খাওয়া ভুলে গোগ্রাসে পড়ে শেষ করে ফেললাম। আউট বই পড়ার কারণে বাবার হাতে এবং স্কুলের স্যারদের হাতে মার খেয়েছিলাম। কিন্তু শত বাঁধা সত্তেও শ্রীকান্ত পড়া থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারেনি।
এরপর দাদা আমাকে কবি শামসুর রাহমানের কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ পড়তে দেন।
পাঠক হিশেবে আমার দূর্ভাগ্য বলতে হবে। আমি এর একটা কবিতাও পুরো পড়ে শেষ করতে পারিনি। কোন লাইন বুঝিনি। প্রতিটি কবিতাই আমার এক একটি দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।
দাদাকে বললাম। উনি বললেন, এগুলো কবিতাই। বড় হলে বুঝবে। শামসুর রাহমান একজন খ্যাতিমান কবি।
কিন্তু আমার মনের খচখচানি যায়নি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ওতো একজন খ্যাতিমান লেখক। উনার লেখা পড়তে আমাকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু কবিতার বেলায় ঘটনা উল্টো ঘটল।
আনসল্ভড মিস্ট্রি!
পরে বুঝলাম, কবিতা অনেক রকম।
আমরা কোন রকমের কবিতা পড়ি?
যে কবিতা পাঠককে তার অজান্তে শেষ লাইনে পৌঁছে দেয়, পড়তে শুরু করলেই পাঠক এক নির্ভেজাল গতিশীলতা অনুভব করে, বিজ্ঞের মত ভাব ধরে বুঝতেছি, বুঝেছি বলে নিজেকে প্রবোধ দেয়া লাগে না, এবং পাঠক ভাববে এই কথাগুলোতো আমারই, আমি বললে ঠিক এভাবেই বলতাম। পড়ে পাঠকের ক্যানভাসে একটা ভাব, একটা দর্শন তৈরী হবে, পাঠক এই ভাব আর দর্শন মিলে যদি কবিতায় একটা গল্পের সন্ধান পেতে পারে তবে সেই কবিতার কথা সে জনে জনে বলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০১