জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি জাহান মনি জাহাজের নাবিক আব্দুল ফাত্তাহ এখনও ভূলতে পারছেন না বন্ধি জীবনের কথা। ৯৯দিন জলদস্যুদের হাতে আটক থাকার কথা মনে হলেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কয়েকদিন পূর্বেও তিনি জানতেন না যে স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে আর তার দেখা হবে।
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই পথ চেয়ে আছেন তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা। সবার কাছে মনে হচ্ছে আজকের সকালটা যেন অনেক লম্বা। ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল ৯টা তখন হঠাৎ একটি গাড়ী এসে থামল তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায়। এ গাড়ীতে আর কেউ নয় তিনি হচ্ছেন জলদস্যু কর্তৃক ছিনতাই হওয়া জাহাজের নাবিক আব্দুল ফাত্তাহ। বাবা গাড়ী থেকে নামা মাত্র তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন একমাত্র মেয়ে নাবিলা বেগম। পূর্ব থেকেই জানাছিল সকালে তিনি বাড়ীতে আসবেন। এজন্য সকাল হতে না হতেই পাড়াপড়শি ও আত্মীয় স্বজন ভিড় জমান ফাত্তাহর বাড়ীতে। এসময় উপস্থিত সকলের মাঝেই এক আবেগ দেখা দেয়। বুধবার সকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউপির ধারাবহর গ্রামের নবিক ফাত্তাহর বাড়ীতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। দীর্ঘদিন পর স্ত্রী রওশন আরা আক্তার, মেয়ে নাবিলা বেগম, ছেলে সুলতান মাহমুদ, হানিফ মাহমুদ, সাজিদ মাহমুদকে কাছে পেয়ে চোখের জল আর থামাতে পারলেন না নাবিক ফাত্তাহ। এসময় তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবানী ও দেশবাসীর দোয়ায় আমার সন্তানদের কাছে আমি ফিরে আসতে পেরেছি। এজন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশ সরকার ও জাহান মনি মালিক প আমাদের ছাড়িয়ে আনতে যে উদারতা দেখিয়েছেন। এজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
বন্ধি জীবনের কথা তিনি জানান আমরা কল্পনা করেতেই পারিনি যে এত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাব। আমাদের আটক করার অনেক পূর্বের জাহাজ এখনও মুক্ত হয়নি। অনেক জাহাজের নাবিকদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর শুকরিয়া আমাদের কারো কোন তি করেনি। তিনি আরো বলেন আমাদের যারা আটক করেছে তাদের কাছ থেকে অন্য জলদস্যুরা জাহাজটি ছিনিয়ে নিতে প্রতিদিনই ক্রস ফায়ার হত। কারো যাতে কোন তি না হয় এজন্য তারা আমাদের রার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতো। তারা (জলদস্যুরা) আমাদের যে খাবার দিত আমাদের পে তা খাওয়া সম্ভব হত না। তাদের খাবারে খুব দুর্গন্ধ ছিল। খাবারের সময় ৫জন করে আমাদের আমাদের খেতে বসাতো। তাও আবার আট দশজন অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে। আর কোন জাহাজ তাদের কাছে আটক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন জার্মানের ১টি, কোরিয়ানের ১টি, ইরানের ১টি ও গ্রিসের ৩টি জাহাজ আটক রয়েছে। গ্রিসের কাছে তারা ২২ মিলিয়ন ডরার মুক্তিপর দাবী করেছে। আমারা যখন তাদের হাত থেকে মুক্তি পাই তখন আমাদের কাছে খাওয়ার মত পানি ছিল না। আসার পথে রাশিয়ান একটি জাহাজ আমাদের কিছু পানি সরবরাহ করে। নাবিক আব্দুল ফাত্তাহ যখন এ কথাগুলো বলছিলেন তখন তার কথাগুলো অধির আগ্রহে উপস্থিত সকলে শুনতে থাকেন।
নাবিক ফাত্তাহর একমাত্র কন্যা নাবিলা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান মঙ্গলবার রাত থেকে বাবার জন্য আমরা অপমান। অনেকদিন পর আমরা বাবাকে পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
উলেখ্য বাংলাদেশী পাতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ বাংলাদেশী ২৪ জন নাবিক, ১জন ক্যাপ্টেন ও তার স্ত্রীসহ ৪১ হাজার মেট্টিক টন পণ্য নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে গ্রিস যাওয়ার পথে গত ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরের ভারতীয় উপকূলে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা তাদের দাবিকৃত মুক্তি পর পেলে গত সোমবার ২৬জনসহ জাহাজটি মুক্ত করে দেয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




