somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নানা রঙের দিনগুলি (দ্বিতীয় পর্ব)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব


ভার্সিটিতে শুভ্রদের ছয়জনের একটা ছোট ফ্রেন্ড সার্কেল আছে – শুভ্র, নিলা, শাওন, ফারজানা, শান্ত আর দিপা। গত সেমিস্টারে একটা সাবজেক্টের প্রজেক্ট ওয়ার্কের সময় তারা ছয়জন একই গ্রুপে ছিল, সেই থেকে তাদের পরিচয় শুরু। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন গাঢ় হতে শুরু করল। ক্লাস, আড্ডা সবখানেই তাদের সপ্রতিভ উপস্থিতি ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য স্টুডেন্টদের মাঝে ইতিমধ্যেই অনেক সাড়া ফেলেছে। এই ছয়জন ফ্রেন্ড সার্কেলের বাইরে তারা যে অন্য কারো সাথে মেশেনা তা নয়, ডিপার্টমেন্টের তাদের ব্যাচের অন্যান্য স্টুডেন্টদের সাথেও তাদের কমবেশী খাতির আছে। কিন্তু গতবারের প্রজেক্ট ওয়ার্কের পর থেকেই তাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব ভাল। ক্লাসে তারা সবসময় বসেও একসাথে, ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের বটতলায় বা ক্যাফেটেরিয়াতে আড্ডার সময়ও তাদের প্রায়ই একসাথে পাওয়া যায়।


আজ নার্গিস ম্যাডামের ক্লাস শেষ করেও যথারীতি একসাথে বসে ক্যান্টিনে গেল আড্ডা দিতে। অন্যরা সকালে বাসা থেকে নাস্তা করে এলেও শুভ্র করে আসতে পারেনি। ক্লাসে মনোযোগের কারণে তখন শুভ্রর মাথায় ক্ষিধের ব্যাপারটা কাজ করেনি, কিন্তু ক্লাস শেষ হতে না হতেই শুভ্রর মনে হল কিছু খেয়ে নেয়া উচিৎ, একঘন্টা পর আরেকটি ক্লাস আছে, মাঝে কিছু খেয়ে না নিলে তার শরীরে সমস্যা হতে পারে। লিফটে করে সবাই একসাথে নিচে নামার পর প্রথম শুভ্রই কথা বলে উঠলঃ

- চল ক্যান্টিনে যাই, খুব ক্ষিধে পেয়েছে, সকালে বাসা থেকে কিছু খেয়ে আসিনি।
- (শান্ত বলে উঠল) হ্যাঁ চল যাই, বড্ড চায়ের তেষ্টা পেয়েছে।

ক্যান্টিনে ঢুকেই শুভ্র ক্যান্টিন ম্যানেজার বাবুলকে জোরে হাঁক দিল, “মামা, আমাদের টেবিলে সিঙ্গারা দিতে বল।” শুভ্রদের সার্কেলকে এই বাবুল খুবই পছন্দ করে, যখনই তারা ভার্সিটি আসে, তখনই কিছু না কিছু তারা এখান থেকে খেয়ে যাবেই, তাছাড়া এই ছেলেমেয়েগুলোর ব্যবহারও বাবুলকে খুব মুগ্ধ করে। তাই শুভ্রর বলা শেষ হতে না হতেই বাবুল তার এসিস্ট্যান্টকে শুভ্রদের টেবিলে সিঙ্গারা দেয়ার জন্য তাগাদা দিল।
টেবিলের সামনে পেতে রাখা চেয়ার টেনে বসেই প্রথমে নিলা কথা বলে উঠলঃ –

-কিরে শুভ্র তোর আজকে এই কাহিনী কেন? এত লেট করলি!!!
-আর বলিস না, গতকাল রাতে ঘুমিয়েছি অনেক দেরী করে, সকালে ওঠার জন্য ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু তখন এতই ঘুম পেয়েছিল, কোন ফাঁকে যে এলার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাইনি। পরে মাও অনেক ডাকাডাকি করল, তাও উঠিনি। তুই আজকে ফোন করে আমাকে না ডাকলে আমার সত্যিই খবর ছিল।
-(পাশ থেকে শাওন বলে উঠল) কেন এত রাত পর্যন্ত কি করছিলি? কোন মেয়ের সাথে চ্যাট করছিলি নিশ্চয়ই?
(শাওনের এই কথার সাথে সাথেই তারা ছয়জন হো-হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল)
-(হাসতে হাসতেই শুভ্রর উত্তর) আরে না, কি যে বলিস! আসলে কাল রাতে নেট সার্চ করে নার্গিস ম্যাডামের এসাইনমেন্টের জন্য ডাটা কালেক্ট করছিলাম, ওগুলো শেষ করে এসাইনমেন্টটা রেডি করতে করতেই কখন যে অনেক রাত হয়ে গেল টেরই পাইনি। সামনের ক্লাসেই তো এসাইনমেন্টটা জমা দিতে হবে, তার উপর অন্যান্য সাবজেক্টেরও চাপ আছে, তাই কাল রাতেই কাজটা শেষ করে ফেললাম। তোদের অ্যাসাইনমেন্ট এর খবর কি? শেষ করেছিস?
-(ফারজানা বলে উঠল) আমি কিছুটা এগিয়েছি, দেখি আজ বাসায় গিয়ে শেষ করে ফেলব।
-(দিপার উত্তর) আমি ভাবছি আজ লাইব্রেরী থেকে কিছু বই নিয়ে যাব, বাসায় গিয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে কিছু পেলে বই আর ইন্টারনেট এর রিসোর্স গুলো মিলিয়ে লিখব।
-(শাওন এর রাগতস্বরের উত্তর) উফফফ!!! তোরা কি শুরু করলি বলতো!! ক্যান্টিনে আড্ডা দিতে এসেও পড়ালেখা নিয়ে কথা না বললেই কি নয়? তোদের যন্ত্রণায় আর পারা গেলোনা দেখছি!!!
(আবারও চারিদিকে অট্টহাসির রোল উঠল)
-(নিলা বলে উঠল) ঠিক বলেছিস, ক্লাসের বাইরে এখানে আড্ডা দিতে এসে পড়ালেখার কথা বলে আড্ডার এই সুন্দর সময়টা নষ্ট করার কোন মানেই হয়না। শুভ্র, তুই কিছু বল…...

-আমি তোদের কথা শুনতে শুনতে একটা জিনিস নিয়ে ভাবছি।
-(সবাই সমস্বরে বলে উঠল)কি!! কি!!
-ভাবছি, সামনেই তো আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এই সেমিস্টারে আমাদের অনেক প্রেশার যাচ্ছে, সব দজ্জাল স্যার আর ম্যাডামদের ক্লাস, একের পর এক অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা। লাইফটা একেবারে হেল হয়ে যাচ্ছে।
-তো কি করবি ভাবছিস? (দিপা বলে উঠল)
-ভাবছি ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ঢাকার বাইরে কোথাও থেকে বেরিয়ে আসলে কেমন হয় সবাই মিলে?
(প্রথমেই আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠল শান্ত)
-দারুন আইডিয়া দোস্ত, সত্যিই এই সেমিস্টারের পড়াশুনার চাপে একেবারে লেজেগোবের অবস্থা। আউটিং এ গেলে সত্যিই খুব ভাল হয়। তোরা কি বলিস?
(নিলা,দিপা,ফারজানা,শাওন সবাই উৎসাহে মাথা নেড়ে উঠল)
-(নিলার সপ্রতিভ উত্তর)খুবই দারুন আইডিয়া, কিন্তু কিভাবে কি করতে চাস কিছু ভেবেছিস শুভ্র?
-না এখনও কিছু ভাবিনি, কাল রাতে অ্যাসাইনমেন্টটা লিখতে লিখতেই এই আইডিয়ার কথা মাথায় এল, ভাবলাম আজ তোদের সাথে আলাপ করে প্রাইমারী একটা ডিসিশান নেব। নিলা, তুই কি বলিস? কি করা যায়?
-এত তাড়াহুড়া করে কিছু ভাবার তো দরকার নেই, সামনের উইক এই তো পরীক্ষা, আগে পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপর ভেবেচিন্তে একটা ডিসিশান নেয়া যাবে। এখন চল ক্লাসের সময় প্রায় হয়ে এল।
-(শাওনের উত্তর) দাঁড়া চা-টা শেষ করি।

সবার চা খাওয়া শেষ হতেই তারা পা বাড়ালো পরের ক্লাসে ঢোকার জন্য। এখন নিয়াজ স্যারের বিজনেস কমিউনিকেশন ক্লাস, এই স্যারটাও চরম বদমেজাজী, ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথেই রোল কল করেন, কেউ যদি ঐ সময় ক্লাসে না থাকে, তাহলে পরে কিছুতেই তিনি তার অ্যাটেনডেন্স রেকর্ড করেননা। তাই স্টুডেন্টরা সবাই খুব ভয়ে থাকে এই স্যারের ক্লাসে।



(চলবে)....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×