somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র পর্ব --৩: যুদ্ধের ভেতরের গল্পঃ শ্যামল ছায়া

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র “শ্যামল ছায়া” । তার নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন “শ্যমল ছায়া” চলচ্চিত্রটি । যেখানে চলচ্চিত্রের ভাষায় তিনি তুলে ধরেছেন ১৯৭১ সালের কিছু মুক্তিকামী মানুষের কথা ও চেতনা , তাদের মর্মস্পর্শী জীবনকাহিনী, তাদের আনন্দ-বেদনা,হাসি-কান্না , দুঃখবোধ এবং আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস । চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালে "সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র" বিভাগে একাডেমি পুরস্কার এর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ।

সময়টা ১৯৭১ সাল , ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর । গুলির সাথে লাশ পড়ছে চারিদিকে। দিগ্বিদিক মানুষ ছুটছে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । কিন্তু কোথাও একটা নিরাপদ আশ্রয়ের দেখা নেই । আজ এখানেতো মানুষ কাল আরেক জায়গায় । ঠিকানাবিহীন এক গন্তব্যের উদ্দ্যেশে ছুটে চলছে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে মহিলা ,শিশু , যুবক , তরুণ সকলে । শুধু খোঁজ একটা নিরাপদ আশ্রয় আর বেঁচে থাকা । অপরদিকে আরেকদল মুক্তিকামী লোক নেমেছে নিজেদের মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে ।তার জন্যে হাতে তুলে নিয়েছে তারা অস্ত্র । সেই মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের দলে আছে কৃষক,শ্রমিক, ছাত্র , সাধারণ মানুষ । কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ কি পাবে এই মানুষগুলো ? যেখানে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনী । তবুও মুক্তিকামী সেই মানুষগুলোর অদম্য আশা স্বাধীনতার স্বপ্নকে সত্য করতে ।


একদল মানুষ ছুটে চলছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । নৌকায় করে তারা যাচ্ছে মুক্তাঞ্চলের খোঁজে । এক ঠিকানাবিহীন গন্তব্যে তাদের ছোটা , যেখানে তারা কিছুক্ষণ পরও বেঁচে থাকবে কিনা তার অনিশ্চিত সম্ভাবনা । তবু মানুষগুলো নৌকায় করে যাচ্ছে যুদ্ধময় সময়টা পাড়ি দিয়ে । তারা খুঁজছে একটু মুক্তির আলো , যেখানে একদণ্ড নিঃশ্বাস নিতে পারবে তারা প্রাণভরে । হিন্দু-মুসলমান বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একই নৌকার যাত্রী । সবার চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন , মুক্তির আশা । কিন্তু ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলোও সম্মুখীন হয় হানাদারদের কবলে । আবার সেই নৌকাতেই যাত্রী হয়ে আসে একদল মুক্তিযোদ্ধা । যাদের একটাই অঙ্গীকার । যেকোন মূল্যে তারা তাদের জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত করবে । আর তার জন্যে তারা গায়েন দলের বেশ ধরে । একসময় সেই নৌকার সাধারণ মানুষগুলোও জড়িয়ে যায় এই গায়েন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে যুদ্ধে । যেখানে যুদ্ধের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল মানুষগুলো , সেখানে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সেই নিরীহ মানুষগুলোর কেউ কেউ নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসে । আসলে মুক্তিযুদ্ধ যেমন একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছিল আমাদের , ঠিক তেমনি কেড়ে নিয়েছে অনেক মানুষের প্রাণ ।


চলচ্চিত্রে সেই নৌকা কিংবা নৌকার মানুষগুলোর মাধ্যমে যেন মুক্তিযুদ্ধের এক প্রতীকী দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে । যেখানে কাল , ধর্ম , মানুষের চিন্তা সবকিছু এক কাতারে দাঁড়িয়ে গেছে । যেখানে মানুষগুলো ভিন্ন ধর্মের হয়েও একই আত্নার হয়ে গেছে । যেন অনেকদিনের পরিচিত কোন আত্নীয় । যেখানে মৌলোভী রিয়াজও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। আর হিন্দু রমণী জড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে । ১১০ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ , সময়কে তুলে ধরে দারুণভাবে ফ্রেমে বন্দী করেছেন ছবির পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ । যুদ্ধের করুণতম মর্মস্পর্শী সময়েকে যেন দারুণভাবে জানান দিয়েছে ছবির প্রতিটি মুহূর্ত ।

চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- হুমায়ুন ফরীদি,রিয়াজ, শাওন ,শিমুল ,স্বাধীন খসরু, সৈয়দ আখতার আলী, তানিয়া আহমেদ, আহমেদ রুবেল, এজাজুল ইসলাম,শামীমা নাজনীন,জেসমিন পারভেজ । চিত্রগ্রহনে ছিলেন- আনোয়ার হোসেন, সঙ্গীত পরিচালনা করেন মাকসুদ জামিল মিন্টু । ছবির প্রযোজনায় ছিল – ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×