রাতে চোখ বুজলেই আমরা স্বপ্ন দেখি। সব স্বপ্ন কি আমাদের মনে থাকে? কিংবা সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখা কি কখনো সত্যে পরিনত হয়! স্বপ্ন নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। প্রচলিত একটা ধারনা সারাদিন আমরা যা ভাবি তা ই রাতে স্বপ্ন দেখি। ইতিহাস বলে কিছু লোকের স্বপ্ন বাস্তবে প্রতিলিপী ঘটেছে। এমনি কিছু ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছে রয়েছে যদি আপনাদের সাড়া পাই। আজ একটি ঘটনা তুলে ধরলামঃ
১৯০৯ সালে সারা ভারতে তখন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের জোয়ার বইছে। লণ্ডনে লেগেছে তার ঢেউ। সন্ত্রাসবাদীরা ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট বৃটিশ অফিসারদের হত্যা করতে পারে এ আশঙ্কা তখন লণ্ডনের সবার মনে। ভারতীয় সন্ত্রাসবাদীদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড বিশেষ গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর ম্যাক লাফলেনের ওপর অর্পণ করেন।
ইন্সপেক্টর ম্যাক লাফলেন এক রাতে স্বপ্ন দেখেন লালধিংরা নামে এক ভারতীয় ছাত্র একটি বিরাট ভবনের বাইরে রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরপর থেকে তিনি লালধিংরার ওপর সতর্ক নজর রাখতে লাগলেন। স্বপ্ন দেখার পর ইন্সপেক্টর ভবনটি সনাক্ত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু লণ্ডনের বহু রাজপথ পরিক্রমণ করেও তিনি সে ভবনটি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হন।
১৯০৯ সালে পহেলা জুলাই দক্ষিণ কেনিংস্টনের ইম্পেরিয়াল ইন্সটিটিউটে ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট বৃটিশ অফিসারদের সম্মানে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ভারত বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্যার কার্জন উইলি এবং তাঁর বিশিষ্ট বন্ধু পার্সি চিকিৎসক ডাক্তার কাউস লাল কাকাও এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন।
জমজমাট এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের পরেও চলতে থাকে। রাত নয়টায় স্যার কার্জন ও আরো কয়েকজন অতিথি বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্যার কার্জন ভবনের প্রধান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন। কিন্তু তিনি নিচে নেমে আসতে না আসতেই একটি স্তম্ভের আড়ালে আত্মগোপনকারী লালধিংরা বিদ্যুৎগতিতে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাত্র দু’হাতের ব্যবধানে থেকে লালধিংরা পরপর পাঁচটি গুলি করে তাঁকে। ডাক্তার লালকাকা কার্জনের পেছনে আসছিলেন। তিনি দ্রুত এগিয়ে এসে বাধা দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু লালধিংরার রিভলভারের শেষ গুলিটি আঘাত করে। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
ইন্সপেক্টর লাফলেন পরদিন দিবালোকে ভবনটির সামনে এসে দাঁড়ান। এবার সনাক্ত করতে পারেন ভবনটিকে। স্বপ্নে তিনি এ ভবনটিই দেখেছিলেন। স্বপ্ন দেখার পর লণ্ডনের বহু রাজপথের দু’ধারে তিনি এ ভবনটির খোঁজ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে কেনিংস্টনের এক্সিবিশন রোড ও তার আশেপাশের কয়েকটি রাস্তায় তিনি আসেননি।