somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টেমসেল গবেষণায় নোবেল পেলেন জন গার্ডন ও শিনিয়া ইয়ামানাকা

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়েছে গত সোমবার থেকে। এ বছর সর্বপ্রথম ঘোষণা করা হয়েছে চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীর নাম। স্টকহোমের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় চিকিৎসা বিভাগে বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করে জুরি বোর্ড। এবার বিশ্বজুড়ে আলোচিত স্টেমসেল গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেয়েছেন শিনিয়া ইয়ামানাকা ও ব্রিটেনের জন গার্ডন।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে। ১৯০১ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এমিল ভন বোরহিং। বোরহিং মূলত ডিপথেরিয়া রোগের চিকিৎসায় সেরাম থেরাপি আবিষ্কারের জন্য এ পুরস্কারটি পেয়েছিলেন। ১৯০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১০২ বারে মোট ১৯৯ জনকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ২০১১ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুস বাটলার, ফ্রান্সের জুলস হফম্যান ও কানাডার রালফ স্টেইনম্যান।

স্টেমসেল গবেষণায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর চিকিৎসায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষক স্যার জন গার্ডন ও জাপানের গবেষক শিনিয়া ইয়ামানাকা। যুক্তরাজ্যের স্যার জন গার্ডন ও জাপানের গবেষক শিনিয়া ইয়ামানাকা এমন একটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছেন যে পদ্ধতিতে পূর্ণবয়স্ক কোষ থেকে প্রাথমিক স্টেমসেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে এবং এই প্রাথমিক স্টেমসেল বা কোষ থেকে পরে যেকোনো ধরনের টিস্যু বা কলা তৈরি করা সম্ভব।

একটি পরিপক্ব ও বিশেষায়িত কোষ পরবর্তী সময়ে অপরিপক্ব কোষে রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত হতে সক্ষম। এটা শরীরের যেকোনো অংশের টিস্যুতে উৎপন্ন হতে পারে। শরীরের কোনো অঙ্গ বা কোষ কিভাবে তৈরি হয় এটা বুঝতে তাদের এ আবিষ্কার এক বৈপ্লবিক ধারণা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্টেমসেল নিয়ে গবেষণায় বিপ্লবের স্বীকৃতি হিসেবে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানীদ্বয় কর্মরত রয়েছেন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ডন ইনস্টিটিউটের গবেষক জন গার্ডন (৭৯) এবং জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা (৫০)। স্যার জন গার্ডন ১৯৩৩ সালে যুক্তরাজ্যের ডিপেনহলে জন্মগ্রহণ করেন। শিনিয়া ইয়ামানাকা জাপানের ওসাকায় ১৯৬২ সালে জন্ম নেন।

গার্ডন ও ইয়ামানাকার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণিদেহের পরিণত যেকোনো কোষকে স্টেমসেলে রূপান্তর করা যায়। তার মানে, দুর্ঘটনা বা রোগে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য এক দিন হয়তো এভাবে তৈরি স্টেমসেল ব্যবহার করা যাবে। স্টেমসেল থেকে দেহের রক্ত, ত্বক, পেশি, হাড়সহ সব কিছুরই সৃষ্টি। স্টেমসেলই পরিণত হয়ে শরীরের এসব উপাদান গঠন করে। কিন্তু উল্টোটা হওয়া সম্ভব ছিল না, এমনটাই ভাবতেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ পরিণত কোষকে আবার স্টেমসেলে রূপান্তর সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীদের এই ধারণাই ভুল প্রমাণ করেছেন গার্ডন ও ইয়ামানাকা।

এই দুই বিজ্ঞানীর গবেষণাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে বিপ্লবের সাথে তুলনা করেছে জুরি বোর্ড। চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেয়ার দায়িত্ব সুইডেনের স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের। ইনস্টিটিউটের জুরি বোর্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্ডন ও ইয়ামানাকার গবেষণা কোষের রূপান্তর ও বিশেষায়ন সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে দিয়েছে। তাদের এই আবিষ্কার যুগান্তকারী।’

গার্ডন ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ‘এ কাজের চূড়ান্ত লক্ষ্য সব ধরনের কোষ প্রতিস্থাপন সম্ভব করা। যেমন আমরা চাই, ত্বক বা রক্তের কোষ দিয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ প্রতিস্থাপন সম্ভব করতে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা যাতে প্রতিস্থাপিত কোষ বাতিল করে না দেয়, সে জন্য প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির কোষ ব্যবহার করতে হবে।’

কোষের বিশেষায়ন প্রক্রিয়া পাল্টে দেয়ার বিষয়ে গার্ডনের আবিষ্কারটি ৫০ বছর আগে ১৯৬২ সালেই। তিনি ব্যাঙের ক্ষুদ্রান্তের পরিণত কোষের নিউক্লিয়াস নিয়ে অপরিণত ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করেন। এরপর ওই পরিবর্তিত ডিম্বাণু থেকে একটি স্বাভাবিক ব্যাঙাচির জন্ম হয়। তার মানে, নতুন একটি ব্যাঙের সব ধরনের কোষ সৃষ্টির জন্য যেসব তথ্য দরকার, পরিণত কোষে এর সবই থেকে যায়। এ জন্য নোবেল কমিটি গার্ডনের কাজকে বলেছে ‘একটি কালজয়ী গবেষণা’। গার্ডনের ওই কাজের চার দশকের বেশি সময় পর ২০০৬ সালে জাপানি গবেষক ইয়ামানাকা ইঁদুরের পরিণত কোষে অল্প কয়েকটি জিন সন্নিবেশ করে দেখান, কিভাবে সেগুলো স্টেমসেলে রূপান্তর করা যায়। নোবেল কমিটির সদস্য ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের মলিকিউলার ডেভেলপমেন্ট বায়োলজির অধ্যাপক টমাস পার্লম্যান বলেন, ‘ওই দুই বিজ্ঞানীকে ধন্যবাদ, তাদের কাজের মাধ্যমে আমরা এখন জানতে পারলাম যে, কোষের রূপান্তর শুধু একমুখী কোনো ব্যাপার নয়।’

সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের বিবৃতিতে বলা হয়, এই দুই গবেষক দেখিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক বিশেষায়িত কোষকে কিভাবে স্টেমসেলে রূপান্তর করা যায়, যাতে করে তা থেকে যেকোনো অঙ্গের জন্য নতুন কোষ তৈরি করা যেতে পারে। তাদের অনন্য সাধারণ এই উদ্ভাবন বিভিন্ন ধরনের দেহকোষের বেড়ে ওঠা ও কাজের ধরন নিয়ে আমাদের ধারণা পুরো পাল্টে দিয়েছে।

এক ধরনের দেহ কোষ থেকে (যেমনÑ ত্বক, হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের কোষ) কেবল ওই ধরনের কোষই তৈরি করা যায়Ñ এমন ধারণা ১৯৬২ সালে এক গবেষণায় ভেঙে দেন জন বি গার্ডন। অন্ত্রের কোষ থেকে তিনি ব্যাঙের ক্লোন তৈরি করেন, যা পরে একটি স্বাভাবিক ব্যাঙ হিসেবে বেড়ে ওঠে।

ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের ওই গবেষণার ভিত্তিতে এখন রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের কৌশল নির্ধারণে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ওই গবেষণার প্রায় ৪০ বছর পর শিনিয়া ইয়ামানাকা দেখান, কেবল চারটি জিন বদলে দিলেই ইঁদুরের প্রাপ্তবয়স্ক কোষ থেকে এমন স্টেমসেল তৈরি করা যায়, যা থেকে দেহের অন্য অঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয় কোষ তৈরি সম্ভব।

নোবেল পুরস্কারের অর্থ হিসেবে গার্ডন ও ইয়ামানাকা মিলে পাবেন ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ মার্কিন ডলার)। ২০০১ সাল থেকে পুরস্কারের অর্থ হিসেবে এক কোটি ক্রোনার দেয়া হলেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে চলতি বছর তা কমিয়ে ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার করা হয়েছে। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ভাগ করে নেবেন গার্ডন ও ইয়ামানাকা। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।

সূত্রঃ বিবিসি
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×