somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা কথন

১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি টি জনাব নাভিদ মাহবুব, ফেসবুক লিঙ্ক (https://www.facebook.com/naveed.mahbub) এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগ্রহ করলাম। ঢাকা ছেড়েছি প্রায় ৩ বছর পূর্বে। এই শহরে ই আমার জন্ম বেড়ে উঠা। জন্মস্থানের প্রতি স্বভাবজাত ভালবাসা থেকেই বলতে পারি, যত জায়গায় ই যাই না কেন আমি কোন শহর কেই ঢাকা র মতন ভালবাসতে পারব না। পারি ও নি। তবে, একি হাল আমার শহর টির? হে ঢাকা তুমি তো দেখি একদম বদলাও নি।
সে যাই হোক, প্রতিদিন মা বাবা র সাথে কথা বলার সুযোগ খুব একটা হয়না। তবে যেদিন কথা হয়, আমি শুধু জিজ্ঞেস করি, মা আমার দেশ কেমন আছে? আর উত্তরে আমি শুধু অপেক্ষা করি একটা ভালো খবর আসুক। ঢাকায় যেন সমস্যার শেষ নেই। প্রতি দিন ই এই সমস্যা সেই সমস্যা। বৃষ্টি তে সমস্যা, গরমে দাবদাহে সমস্যা, শীতে সমস্যা। তবে অন্য সমস্যার মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় রোগবালাই। বন্ধুমহলে ডাক্তার অনেকে হওয়ার সুবাদে হয়ত ঢাকায় থাকলে ফ্রি চিকিৎসা ও জুটে যেত। যাই হোক, ছবি টি দেখে মনে হচ্ছে হঠাত কক্সবাজার বানিয়ে ফেলল কিনা কারয়ান বাজার কে। কিন্তু না। এটি আজ সারাদিন বৃষ্টির পর একটি দৃশ্য। তো যে সেই ছবি তুলে জুড়ে দিচ্ছেন আর হ্যাঁ, আরেকটি জিনিস বলতে ভুলছেন না যেটা তা হল, নৌকা মার্কার বদনাম আর সরকারের বদনাম করা।
আমি নিজে কোন দল এর পক্ষ নিয়ে কথা বলবনা। বহুদিন পর পর ব্লগ লিখি, আর কোন দল ক্ষমতায় থাকলে আমার বিশেষ কোন লাভ নেই ভেবেই নিরপেক্ষ থাকবার চেষ্টা করি। তবে আমার বাসার সমস্যা আর বাইরের সব অঘটনের জন্য সরকার দায়ি তা কেন আমরা ভাবি তা আমার জানা নেই। তবে নিজের অপরিপক্কতা আর কাজে গাফিলতি আমরা অন্যের ঘাড়ে চরানোতে যে দুনিয়া তে শীর্ষ স্থান দখল করে আছি তা নিশ্চয়ই সবাই কে বুঝাতে হবেনা। এই জন্যেই আমার আজকের এই লেখা, কারন নিজের জীবনের কিছু ঘটনাও আজ লিখব ভাবছি।
যখন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন প্রেম এর জাল এ হাবুডুবু খাচ্ছি। সুদীর্ঘ ৩ বছর পর যখন পছন্দের নারীর মা র সামনে সাহস করে বিয়ের কথা বললাম(নিজের বাসায় বলা শেষ্ এবং গ্রিন সিগনাল পাওয়ার পর) তখন প্রথম যেই যোগ্যতা আমার সামনে হাজির করা হল, তার আগাগোরা ছিল আমার সাধ্যের বাইরে। শিক্ষা কিংবা পারিবারিক কোন কিছুই যেন দরকার নেই। দরকার নেই বড় চাকরির, কিংবা ভালো মানুসিকতা। এমন কি মাথার কম চুল নিয়েও কোন মন খারাপি দেখলাম না পাত্রীর পরিবারের। খুশি মনে সব কিছু বলা শেষ করে যখন দরকার নাই এর লিস্ট মাথায় ঢুকল, খুশি মনে জানতে চাইলাম তাইলে কি লাগবে বলেন(আমি জন্ম থেকেই কিছুটা আতেল)? উত্তর মিলল পরদিন ফোন এ, "বাবা তোমাদের সম্পত্তি মানে ঢাকায় কি কোন বাড়ি আছে"?
বলে রাখা ভালো, আমার বাবা সারাজীবন সৎভাবে ব্যবসা করেছেন, ভাড়া বাসায় থেকে সেরা স্কুল কলেজে পড়িয়েছেন। কখনও কোন অভাব বুঝতে দেননি। কিন্তু বাড়ি কোথায় পাই এখন?
আমাদের সেই সম্পর্ক টিকেনি। বলা যায় টিকতে দেননি সেই পরিবার। এবং শেষ কথা ছিল, "আমার মেয়ে কে ভাড়া বাসায় বিয়ে দেবও না।"
এরপর আরেকটি সম্পর্ক হয়। ৩ বছর যেতে যখন আবার দেখা হয় নতুন একটি পরিবারের সাথে, বলব আমার কথা তখন প্রথম কোন যোগ্যতা আসে আমার? বাইরে ডিগ্রি, বড় চাকরি? নাহ, কোন কিছু দিয়েই তুষ্ট করতে পারিনি। উপরি পরিবার ছিল পুরান ঢাকার। যোগ্যতা র মধ্যে ব্যবসাও করিনা আর বড় কথা "কি নাই?" ঠিক ধরেছেন "বাড়ি নাই।"
বিদেশে এসে শেষমেশ পারিবারিক ভাবেই একটি বিয়ের কথা আগায়। বলে রাখা ভালো, উপরে বর্ণিত ২ টি পরিবারের ঢাকায় নিজেদের কোন বাড়ি ছিল না। এবারের ৩য় পরিবারের কর্তা সরকারি ৩য় শ্রেণির অফিসার। সরকারি বাসা য় থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন আমার বাবা কে, "ভাইজান ছেলে আপনার সোনার টুকরা কিন্তু আমি বাড়ি আছে এরকম জায়গায় মেয়ে বিয়ে দিতে চাই।" যাই হোক, আমার ওই সম্পর্ক আজ ও ভাঙ্গেনি, জানিনা তার ভবিষ্যৎ কি।
আমার প্রত্যেক টা কেস এর পর, বড় ভাই যারা এক ই বিশ্ববিদ্যালয় এ পরেছেন বা, চেনা জানা হয়েছে জানতে চেয়েছিলাম, কি হচ্ছে দেশে? আমার মা, বাবা কে বিয়ে করেছিলেন শিক্ষা দেখে, আমি শিক্ষা অর্জন করে ভালো চাকরি করেও মানুষ এর এই ডিমান্ড কেন আসছে জানতে চাই। ভালো মানুসিকতা দিয়ে যেন কোনভাবেই আর মানুষের মন জয় করা যায় না। উত্তর মিলল, "ঢাকা বদলায় গেসে ভাই। বদলায় গেসে। এখন আপ্নে ঢাকা যান, দুনিয়ার কেলেঙ্কারি করেন। কিন্তু আপনের পয়সা আছে, আর কিছু লাগব না। আপনে হিরো। নাইলে অমনেই উত্তর পাইবেন ভাই। "
যাই হোক, হয়ত আমার ই ভুল। অথবা ভাগ্য খারাপ।
তো আজকের সমাজে সবথেকে বড় স্ট্যাটাস(মধ্যবিত্ত) যা টা হল বাড়ি। এই বাড়ি ১৪ পুরুষ খেয়ে যাবে এই ভেবে বাবা কষ্ট করে বাড়ি বানিয়ে ছেলে মেয়ে র ভবিষ্যৎ সিকিউর করছেন। কিন্তু ছোট্ট একটি শহরে আনুমানিক ৫০ লক্ষ পরিবার যদি ৫০ লক্ষ বাড়ি বানায় তবে? বাবা একটা কথা বলতেন। ৭১ এর আগে সবাই ইন্ডাস্ট্রি করত। ছোট বাড়ি করে আগে ব্যবসা র চিন্তা করত। বাড়ি থাকত গ্রাম এ। আর মানুষ এখন, একটা বাড়ি বানিয়ে ভাড়া নিয়ে বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখে।
সমাজের এই বদল কিংবা মানুষের এই চিন্তা নৌকা কিংবা ধানের শীষ করে দেয়নি ভাই। আমরা নিজেরাই দায়ি। ঢাকা দূষণে আর বিনষ্টে আপনি আমি কম দায়ি নই। কই, বাড়ি বানাবার সময় কয়জন বাড়ির সামনে একটা বাগান রাখেন সম্ভব হলে? রাস্তার উপর পর্যন্ত দখল কারা করেন? দোষ হয় সরকারের, দেখেনা নজরদারি নাই।
যারা এখনও ভাবছেন, ঢাকায় বাড়ি ফ্ল্যাট করে খুব বাহাদুর জীবন যাপন করে দুনিয়ার আনন্দ ভোগ করে যাবেন, তাদের জন্য শুভকামনা।
ও হ্যাঁ, চাঁদপুর আমার গ্রাম এর বাড়ি থেকে একটি নৌকা বাবা কে নিয়ে আসতে বললাম। সামনে ঢাকা আসছি। শুনেছি আজকাল শীতকালেও সেইরকম বৃষ্টি হয়। হোক। নৌকা চড়ে শীতের পিঠা খাব, ভালো তো ভালো না?
জন্ম হোক জথা তথা বাড়ি হোক বড়
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৩১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×