এখন থেকে ৭৮ ঘন্টা আগে বিবিসি বাংলা - BBC Bangla ডিপার্টমেন্টকে বিবিসি'র দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক Andrew North "বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনঠাসা জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?" এসাইনমেন্ট দেয়। এন্ড্র নর্থ বিবিসি বাংলা গঠনমূলক ভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করতে বলে। বাম ধারার সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ রিপোর্ট টি তৈরি করে। সাংবাদিকতার নিয়ম হচ্ছে বিটিং সিস্টেম। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নিউজ আওয়ামী বিটের সাংবাদিকরা কাভারেজ করবে। এখানে বিবিসি বাংলা I BBC Bangla পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়নি। রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী জামায়াত গবেষক না। এর চেয়ে ভাল বিশ্লেষণ করতে পারতেন তৃণমূল সরকার বিষয়ক গবেষক তোফায়েল হোসেন। কারন তোফায়েল হোসেনের কাছে জামায়াত বিষয়ক কিছু পরিসংখ্যান আছে। আবুল কালাম আজাদ বিবিসির মতো গনমাধ্যমে এসে বাঙালিয়ানার পরিচয় দিয়েছে। বিবিসির এই প্রতিবেদনে উঠে আসে জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে কতটা জোরালোভাবে প্রাসঙ্গিক তা যে কোন রাজনৈতিক টক শো, পত্রিকার কলাম, রাজনৈতিক গণ জন সভাগুলোর বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দিলেই বুঝাটা জলবৎ তরলং। কোন রাজনৈতিক আলাপই জামায়াত প্রসঙ্গ ছাড়া জমে না-- হোক তা ইলেকট্রনিক প্রিন্টিং মিডিয়ায়, জনসভা-আলোচনা সভায়, এমনকি পাড়াগাঁর চায়ের দোকানে পর্যন্ত। প্রথম সারির সকল নেতাকে ফাঁসি, ২য় সারির নেতাদের প্রায় সকলকে কারান্ত্যরীণ রেখে, নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল করে, সারাদেশের সকল কার্যালয় বন্ধ করে, অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করে, মিডিয়া সন্ত্রাস করে, ইত্যকার সম্ভাব্য সকল অপচেষ্টা ও টোটাল রাষ্ট্রযন্ত্রকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েও জামায়াতকে মুছে ফেলা যায়নি, এমনকি রাজনীতি থেকে অপ্রাসঙ্গিক করা যায়নি--- এটাতে ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য বড় বার্তা আছে। এ সিদ্ধান্তে আসা সম্ভবত কোনভাবেই ভুল হবে না যে, জামায়াত মুসলিম লীগের মত ক্ষমতার উচ্চাসনে থেকেও মুছে যাওয়ার মত কোন দল না। আবার জাতীয় পার্টির মত খুবই কম সময়ের বিবর্তনে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার মত দলও না। কিংবা দু'জন নেতাকে বাদ দিলে নিষ্প্রভ হওয়ার দলও না।
মিডিয়া সিন্ডিকেটবদ্ধভাবে জামায়াত নেতাদের অপাক্তেয় করে রেখে একতরফা বিষোধগার চালিয়ে আসছে; কোনরকম আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করার সুযোগ জামায়াত পায় না। জামায়াতের বিরুদ্ধে একরকম খালিপোস্টে পেনাল্টি পেনাল্টি খেলা চলে মিডিয়ায়। একতরফা খেলা মাঝেমধ্যে বিস্বাদ লাগে নিজেদের কাছেই, তখন জামায়াত নেতাদের মিনিট কয়েকের মন্তব্য বক্তব্য নেয়ার উদারতা দেখায় মিডিয়া। সেরকমই একটি সুযোগ দিয়েছে বিবিসি বাংলা। জামায়াত সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমানের সংক্ষিপ্ত একটি সাক্ষাতকার তারা রিপোর্টের অংশ হিসেবে সম্প্রচার করেছে। জামায়াত ১ম ও ২য় সারির নেতৃত্ব হারিয়েও কত স্মার্টলি নিজেদের সেটাপ করে নিতে পেরেছে তার উদাহরণ ডা. শফিক সাহেব। তিনি মাত্র কয়েক মিনিটে কয়েকটি বাক্যে জামায়াতের অবস্থান, আদর্শিক দৃঢ়তা ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে ভাবনা স্মার্টলি প্রেজেন্টেশন করেছেন। তার বক্তব্য থেকে কয়েকটি নীতিনির্ধারণী কথা এসেছে যা জামায়াত এমনকি বাংলাদেশের অনাগত রাজনীতির জন্য গুরুত্ববহ। তিনি বলেছেন:
১- "আমরা হারিয়ে যাইনি। আমরা সময়ের ক্যালকুলেশান করেই আগাচ্ছি"।
২- "জামায়াতে ইসলামী থেমে যাওয়ার দল নয়, দমে যাওয়ার দল নয়"।
৩- "জামায়াতে ইসলামী তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে সামনের দিকে আপোষহীনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে"।
৪- "নিবন্ধন এবং প্রতীক দুইটাই যদি আমরা না পাই তারপরও জামায়াতে ইসলামী সক্রিয়ভাবে এবং প্রত্যক্ষভাবেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় থাকবে ইনশা আল্লাহ"।
৫- "ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে তো আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু আমাদের কর্মসূচীর পদ্ধতি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ।"
৬- "আমরা এখনই জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেয়ার স্বপ্ন দেখি না। কিন্তু নির্যাতিত মানবতা মুক্তি পাক-সেই স্বপ্ন আমরা দেখি।"
৭- "সিকি শতাব্দীর ভেতরেই এদেশে বড় ধরণের একটা পরিবর্তন হবে ইনশাআল্লাহ"।
এ বক্তব্য খুবই স্পষ্ট ও ব্যাখ্যাতীত। তারপরও কিছু কথা বলা যায়।
১ম তিন পয়েন্ট থেকে ক্লিয়ার জামায়াতকে যে দমানো যায়নি, মুছে ফেলা যায়নি, অপ্রাসঙ্গিক করা যায়নি তার কারণ হচ্ছে আদর্শিক দৃঢ়তা। এ আদর্শিক দৃঢ়তা জামায়াতের মূল ভিত্তি। সুতরাং বলা যায়-- আদর্শ ও মূলনীতিতে আপোসকামিতা, ছাড়ের মানসিকতা, ঢিলেমি, নীতির উপরে নেতার স্থান, ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় কোন ফাঁকফোঁকর, নেতৃত্বের কোন্দল, পদ-পদবির দৃশ্যমান অদৃশ্যমান কোন প্রতিযোগিতা ইত্যাদির যে কোনটি অথবা একাধিক বিষয় কখনও জামায়াতে যদি স্থান পায় তাহলে জামায়াতের মূল ভিত্তি নড়েবড়ে হয়ে ওঠবে। তখন এ ভিত্তির কারণে জামায়াতের যে মজবুত স্তর বিন্যাস করা আছে তা ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। তাই এ ব্যাপারে জামায়াতেরই প্রতি স্তরে সতর্কতার বিকল্প নেই।
৪,৫ ও ৬ নং পয়েন্ট থেকে স্পষ্ট জামায়াত নি