ভিডওি লিংক;-
রিজার্ভ চুরির মামলা দায়ের
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা দায়েরের বিষয়টি ইতিবাচক। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে (আরসিবিসি)।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ফিলিপাইনের মানি এক্সচেঞ্জ হাউস, দুটি ক্যাসিনো এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আর্জিতে চুরি হওয়া অর্থসহ মামলা পরিচালনার সমুদয় ব্যয় এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হয়েছে। কেননা, এ ধরনের ঘটনা ইতিপূর্বে আর কোথাও ঘটেনি। ফলে বাংলাদেশের সামনে কোনো নজির ছিল না।
তাই সঠিক পথ খুঁজে তবেই সে পথে হাঁটতে হয়েছে; যাতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অবশ্য বাংলাদেশ প্রথমে দ্বিপক্ষীয় ও কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় কিছু অর্থ ফেরতও এসেছে। তবে বাকি অর্থ না আসায় অবশেষে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। উল্লেখ্য, মার্কিন আইন অনুযায়ী এ ধরনের কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে মামলা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই মামলা করতে সক্ষম হয়েছে। নিয়ম মেনে মামলা করায় চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়াসহ দোষীদের শাস্তি প্রদানের পথ যে প্রশস্ত হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাকড’ করে এ অর্থ চুরি হয়। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলংকার একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। ওই অর্থ দু’দিনের মধ্যেই ফেরত আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে যায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এর মধ্যে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার দেশে ফেরত এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির দায়ে ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতাকে কিছুদিন আগে ৩২ থেকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ডসহ ১০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। ফিলিপাইনের আদালত সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তাকে মানি লন্ডারিংয়ের ৮টি অভিযোগের সবগুলোয় দোষী সাব্যস্ত করে এ সাজা দিয়েছে। যেহেতু ফিলিপাইনে ইতিমধ্যে এটি নিয়ে বিচার হয়েছে এবং বিচারে দেশটির ব্যাংক কর্তাকে দায়ী করে জেল-জরিমানা করা হয়েছে, তাই এ মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
রিজার্ভ চুরির ঘটনা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। চাইলেও আমরা এর বাইরে থাকতে পারব না। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ভালো দিকের পাশাপাশি অনেক মন্দ দিকও রয়েছে। মন্দ দিকগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। তা না হলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা দায়েরের বিষয়টি একটি সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করি আমরা। এ মামলার মধ্য দিয়ে চুরি হওয়া অনুদ্ধারকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:০২