somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন পলাতক জাদুকর

২৪ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি লোককে প্রথমে শেকল দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা হলো। শেকল যেন খুলতে না পারে তার জন্য শেকলে তালা দেয়া হলো। তার পর লোকটি ধরাধরি করে ঢুকিয়ে দেয়া হলো পানি ভর্তি একটি বক্সে। চিন্তা করুন ..... আমি আপনি হলে কি হতো। কিন্তু কয়েক মিনিট পর লোকটি ঠিকই বেরিয়ে এলো মুক্ত অবস্থায়। আসবেনই তো তিনি তো যে সেই লোক নন .... স্বয়ং হ্যারি হুইডনি। যাকে বলা হয় জাদুকরদের জাদুকর। পলায়নের জাদুকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য পর্যায়ে। আজ সেই মহান জাদুকরের জন্মদিন।

জন্মদিনে এ মহান জাদুকরের প্রতি গুগলের শ্রদ্ধা।

১৮৭৪ সালের ২৪ মার্চ হাঙ্গেরিতে জন্ম গ্রহণ করেন এরিচ উইচেচ। চার বছর বয়সে মা-বাবা এবং আরো চার ভাইসহ জাহাজে ভেসে চলে আসেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। চরম দরিদ্রে কাটে শৈশব। এক স্ট্রীট জাদুকরের জাদু দেখে আকৃষ্ট হন জাদুর প্রতি। মাত্র ৯ বছর বয়সে নেমে পড়েন স্টেজে। এবং ১৭ বছর বয়সে প্রফেশনাল ম্যাজিশিয়ান হিসেবে জাদু প্রদর্শন করেন এরিচ উইচেচ হ্যারি হুইডনি নামে। পরবর্তী সারা পৃথিবীর মানুষ তাকে এ নামেই চিনেন।

বিশেষ ধরনের শেকলে বন্দী হুইডনি।

হুইডনি সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেন তার পলায়নের ম্যাজিকগুলো প্রদর্শন করে। পায়ে বেড়ী, হাতে এবং সারা শরীরে শিকল, চেইন জ্যাকেট, বক্স, পানি ভর্তি বাক্স ইত্যাদি থেকে মুক্ত হবার ম্যাজিক দেখিয়ে মুগ্ধ করেন লাখ লাখ দর্শককে। তিনি ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, গ্রীস, রাশিয়াসহ বহুদেশ সফর করেন। তিনি স্থানীয় পুলিশদের বলতেন তাকে বেড়ী পরিয়ে কোন জেলখানায় আটক রাখতে। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে মুক্ত হয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিতেন তাদের। সার্বিয়ান একটি প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে তিনি তৎকালীন সময়ে ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দেন।

আষ্টেপৃষ্টে বন্দী হুইডনি।

১৯০৪ সালে লন্ডন ডেইলি মিরর নামে একটি পত্রিকা হুইডনিকে চ্যালেন্জ করেন তারা বিশেষ এক ধরনের হ্যান্ডকাপ তৈরী করেছেন যা থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব। হ্যারি হুইডনি তাদের চ্যালেন্জ গ্রহণ করেন। লন্ডনের হিপোড্রোম থিয়েটার এর সব আসন কানায় কানায় ভর্তি। ৪০০০ সাধারন দর্শকের সাথে ১০০ জন বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক। সবার মধ্যে টান টান উত্তেজনা পারবেনতো হুইডনি। বিশেষ ধরনের হ্যান্ডকাপ বন্দী হুইডনিকে একটা পাতলা চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। সময় বয়ে যায় বের হন না হুইডনি। এভাবে প্রায় ৫৬ মিনিট অতিবাহিত হয়। এ সময় হুইডনির স্ত্রী লিজ এসে চুমু দেয় হুইডনির ঠোঁটে। এবং একঘন্টা দশ মিনিট পর মুক্ত হুইডনিকে দেখতে পান দর্শকরা। উত্তেজনায় ফেটে পড়েন দর্শকরা, পুরো হল মুখরিত হয় হাততালির শব্দে। আর দর্শকদের অভিবাদনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হ্যারি। পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন এটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম পলায়ন। (ধারনা করা হয় তার স্ত্রী তাকে চুমু খাওয়ার সময় জীহবার তলে লুকিয়ে হ্যান্ডকাপের চাবি সরবরাহ করেছিলেন। )

হ্যারির অন্যতম জনপ্রিয় জাদু চাইনিজ ওয়াটার টর্চার সেল।

ম্যাজিশিয়ান হিসেবে খ্যাতির তুঙ্গে থাকাবস্থায় রুপালী পর্দার জগতেও পা রাখেন হ্যারি হুইডনি। অভিনেতা এবং প্রযোজক হিসেবে। তার অভিনিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম .. The Master Mystery, The Grim Game, Terror Island, The Man From Beyond ইত্যাদি।

হুইডনি অভিনীত একটি মুভির পোস্টার।

এ মহান জাদুকরের মৃত্যুটাও ছিল তার জীবনের মতো রহস্যময়। একদিন তিনি চ্যালেন্জ দেন তিনি তার পেঠে সব ধরনের আঘাত সহ্য করতে পারবেন। জে. গর্ডন হোয়াইটহেড নামে এক ছাত্র তাকে এটা সত্যি কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি হাঁ সূচক মাথা নাড়েন। আর সাথে সাথে (হুইডনি পেঠের পেশী শক্ত করার আগেই) গর্ডন তার পেঠে পরপর তিনটি ঘুষি মারেন। হুইডনির মুখে সামান্য ব্যাথার অনুভুতি লক্ষ্য করা গেলেও তিনি পেঠের পেশী শক্ত করে আরো বেশ কিছু আঘাত সামলান হাসি মুখে। কিন্তু যা ক্ষতি হবার এরিমধ্যে হয়ে গেছে। মারাত্নকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তার পাকস্থলী। যা পরবর্তীতে ফুটো হয়ে যায়। এ অবস্থায়ও তিনি জাদু প্রদর্শন অব্যাহত রাখেন। ১৯২৬ সালের ২৪ অক্টোবর মিশিগানের একটা হলে জাদু প্রদর্শন শেষে তিনি প্রচন্ড রকমের অসুস্থ হয়ে পড়েন হুইডনি (জাদু প্রদর্শনকালে তার গায়ে জ্বর ছিল ১০৪ ডিগ্রী ফাঃ )। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ৩১ অক্টোবর মাত্র ৫২ বছর বয়সে এ পৃথিবী থেকে চিরকালের মতো পলায়ন করেন হ্যারি হুইডনি। বেচেঁ থাকলে আজ এ মহান জাদুকরের বয়স হতো ১৩৭!

তথ্যসূত্র :

১। http://www.thegreatharryhoudini.com
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Harry_Houdini
৩। http://www.magictricks.com/houdini


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×