সূর্য এবং রবির মধ্যে বেশ অনেক সময় ধরে চলছে competition . এই competition এর একটা নিয়ম আছে । আর তা হল যে আগে ঘুম থেকে উঠবে সে হারবে । রবি কখনো এতে হারে না । বরাবরের মত আজও রবিই জিতে গেল । সূর্যকেই আগে উঠতে হল ঘুম থেকে । কেননা তার অনেক কাজ আছে । সে তার দায়িত্ব ঠিকমত পালন না করলে অনেক মানুষের গালাগালি খেতে হবে । দরকার কি ? তার থেকে হারলেও ভাল ।
আরো অনেক অনেক সময় পর আরেক সূর্য রবির ঘুম ভাঙলো । চোখ মেলে তাকাল সে । প্রথমেই বড় একটা হাই তুলল । তারপর চোখ ডলল । এরপর উঠে বসল । পাশেই জানালা । জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল রবি । একটা বাড়ি চোখে পড়ল । এবার নিচে তাকাল রবি । একটা রাস্তা দেখতে পেল । মোটামুটি বড়ই চলে ।আর অনেক আগে থেকেই রাস্তায় মানুষ চলাচল শুরু করে দিয়েছে । রবি মানুষ দেখতে থাকল । তার সাথে আরো দেখল রিক্সা , ভ্যান , গাড়ি , সাইকেল , মটর-সাইকেল , কুকুর , বিড়াল etc . কোন পাখি দেখতে পেলনা , কারন পাখি দেখতে হলে উপরে তাকাতে হবে যাতে রবির বড়ই অনীহা । রবি মানুষই দেখতে থাকল মন দিয়ে । মাঝে মাঝে কিছু সুন্দরি ললনাও চোখে পড়ছিল ।রবির এই সুখ বোধহয় সৃষ্টিকর্তার সহ্য হলোনা । তিনি এমন একটা ঘটনা ঘটালেন যাতে রবির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ।
রবির মেজাজ খারাপ করা ইহজগতের কঠিনতম কাজগুলির একটি । এই অসাধ্য সাধন করতে পারে অল্প কিছু বস্তু । তারই একটা এখন রবির চোখে পড়েছে । সংক্ষেপে যার নাম corolla , যা একটি গাড়ির নাম । জনপ্রিয় company Toyota এর বানানো Toyota corolla . ঢাকা শহরে corolla দেখতে পাওয়াটা খুব একটা কঠিন কিছুনা । এই গাড়ির নামকরণের কাহিনীও রবি জানে । অন্তত তার তাই ধারণা । ধারণাটা এরকম , যে সকল automobile engineer গণ এই গাড়ির design করেছেন তারা কোন না কোন ভাবে বাংলাদেশের বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় (!) তরকারি করল্লার স্বাদ পেয়েছেন । আর সেই স্বাদে মুগ্ধ হয়ে এই নামকরণ ।
এখন একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন । এই গাড়িতে এমন কি আসে যে এটা দেখলে রবির মেজাজা খারাপ হবে ? কারণ তো নিশ্চয় আছে । ব্যাপারটা অনেকটা এরকম , দেশ এবং বিদেশের নামকরা জ্যোতিষবৃন্দ বলেন যে মানুষের ভাগ্যে খারাপ যা যা ঘটে তার জন্য দায়ী হচ্ছে শনি গ্রহ । শনি গ্রহের প্রভাবেই নাকি সবরকম অমঙ্গল হয় । আর রবির বেলায় এই শনি গ্রহ হল toyota corolla . এই বস্তু যখনই তার সামনে আসে তখন বা ওইদিন কোন কোন একটা অঘটন ঘটবেই ঘটবে । এটা একটা পরিক্ষীত সত্য । এখন , আজ যে রবির পুরো দিনটিই মাটি এ বিষয়ে কারো কোন রকম সন্দেহ থাকা উচিত নয় ।
ক্ষুণ্ণ মনে রবি জানালা থেকে চোখ সরালো । জোরে হাঁক ছাড়ল রবি , “ আবু চাচা ! এক কাপ চা দাও তো । “ না চাইলে যে চা পাওয়া যাবেনা সেটা রবি খুব ভাল করেই জানে ।
চা চাইবার পরপরই রবির মনে পড়ল যে আবু চাচা নেই । মা না বাবা কার অসুখের কথা বলে যেন ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে । যাবার সময় রবির কাছ থেকে কিছু টাকা নিতে মোটেও ভুল করেনি । এখানে বলে রাখা ভালো , আবু চাচা হচ্ছে রবির ফাই-ফরমাশ খাটার একমাত্র লোক । তার সারদিনের কাজ হল সকালে চা বানানানো , দুই বেলার রান্না আর বাকি সময়টা T.V দেখা । কিছুদিন পরপর ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাওয়া তার routine . আর যাবার সময় সবসমইয়ই রবির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে যায় ।
আবারো বিশাল একটা হাই তুলল রবি । বিছানা থেকে নামলো । উদ্দেশ্য , দাঁত মাজা । আয়নার সামনে দাঁড়াল রবি । অনেক সময় নিয়ে নিজের চেহারা দেখল । এরপর brush এ paste লাগালো । তারপর সেটা মুখে পুরলো । অতীত চিন্তায় ডুবে গেল ।
বেশিদিন না । মাত্র ৪ মাস , ১১ দিন আগের কথা । রবি সেদিন রাজপথে বেরিয়েছিল । উদ্দেশ্য আর কিছুই না , একটা চাকরির interview দেয়া । সে ১০০% নিশ্চিত ছিল যে interview board এ হাজির হলেই তার চাক্রি হয়ে যাবে । এত আত্ববিশ্বাসের কারণ আর কিছুই না, board এর যিনি প্রধান , তিনি হচ্ছেন রবির খুব close friend এর এক দুঃসম্পর্কের ভাইয়ের আপন মামার বন্ধু । রবি তার বন্ধুটিকে manage করতে বেশ কিছু টাকা খরচ করে গুলশানের K.F.C তে নিয়ে খাইয়েছে । বন্ধুটি তাকে কথা দিয়েছে যে তার চাকরি হয়ে যাবে ।
রবি বেশ খুশি মনে হাঁটছিল । তার জানা সবচেয়ে নিরাপদ বাহন দুই পা ব্যবহার করে চলছিল সে । আত্ববিশ্বাসের সাথে , দৃঢ় পায়ে । হাঁটতে হাঁটতেই তার চোখে পড়ল সামনে একটা গাড়ি আসছে । গাড়িটা আর কিছুই না । একটা corolla . রবি কিন্তু আজ মোটেও ভয় পায়না । সে থেমে দাঁড়ায় । গাড়িটাকে আসতে দেয় । একসময় গাড়িটা আসে এবং চলেও যায় । রবি সেটাকে দেখল যতদুর দেখা যায় । একসময় গাড়িটা হাওয়া হয়ে গেল । রবি একটা বাঁকা হাসি হেসে আবার তার যাত্রা শুরু করল । সামনের দিকে এগোল । আরে ? ব্যাপারটা কি ? সামনের ওই পিচ্চি ওর দিকে আঙ্গুল তুলে হাসছে কেন ? “ বড়ই বেয়াদপ তো ! ” ভাবল রবি । কিন্তু কিছু বলল না । আবার হাঁটতে শুরু করল । আবার থামতে হল । সামনে একটা ছোঁড়া রবির দিকে তাকিইয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে ! “ সাহস কত ! “ ভাবল রবি । কিন্তু একেও ক্ষমা করে দিল সে । হাজার হোক দয়ার মহাসাগর তো ! আবারো এগোল রবি এবং আবারো বাধা পেল । এবার এক ভদ্রলোককে দেখতে পেল অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছেন যিনি । এবার রবি চারপাশে তাকাল । দেখল আশপাশের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে । সন্দেহ হল ওর । রবি এবার স্বয়ং সবার সাথে যোগ দিল । মানে নিজের দিকে তাকাল আরকি ! “ হায় খোদা ! এটা কি ? “ রবি কে যে চেনাই যাচ্ছেনা ! আসলে বলা ভাল অর dress চেনা যাচ্ছেনা । ওর surf excell দিয়ে পরিষ্কার করা পোষাকের পুরো design পাল্টে গেছে । পোষাকের একপাশে কাদামইশ্রিত বিচিত্র রঙের পানি এসে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে । ফলে পোষাকের দু পাশ দুরকম হয়ে গেছে । রবি বিভ্রান্তের মত চারপাশে তাকায় । রাস্তার দিকে চোখ পড়ে । মুহুর্তেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যায় । আসলে তখন সময়টা ছিল শ্রাবন মাস । সারা মাস কন ব্রিষ্টি না হলেও ওইদিনেই প্রচন্ড রকম ব্রিষ্টি হয়েছিল । ফলে রাস্তায় স্বাভাবিক ভাবেই পানি জমে ছিল । সেই toyota corolla যখন রবিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় তখন ওই পানির একটা অংশ ওকে উপহার (!) স্বরূপ দিয়ে যায় । আর তাতেই এই অবস্থা । রবি রাগে , ক্ষোভে গাড়ীটাকে গালাগালি করতে থাকে । কিন্তু তাতে আর এখন লাভ কি ? যা হবার তাতো হয়েই গেছে । সব পন্ড । রবি অবশ্য হার মানবার পাত্র নয় । সে ওইদিন ওই পোষাকেই interview দিতে যায় । অবশ্য বলা বাহুল্য মাত্র , সেদিন সেই office এর gate ও পার হতে পারে নি । কোনরকমে মান-সম্মান নিয়ে ফিরে আস্তে পেরেছিল । থাক , সে আরেক গল্প ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




