গত দুইদিন ধরে টিভি এবং পত্রপত্রিকার খবরগুলো রীতিমত তোলপাড় করে ফেলেছে অজ্ঞাত এক যুবকের সাথে মাহমুদুর রহমান মান্নার তথাকথিত ফোনালাপ এবং ের সিক্যুয়েল সাদেক হোসেন খোকার সাথে তার অডিও রেকর্ড। এমনিতে এসব অডিও রেকর্ডের তেমন কোন গুরুত্ব নেই, কিন্তু এর সঙ্গে সেনাবাহিনী ইস্যু জড়িয়ে যাওয়াতেই সবাই নড়েচড়ে বসেছেন।
বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগ দেশের এমন একটা দল, যারা সবদিক থেকেই ব্যাপক সুবিধায় আছে। সমস্ত মিডিয়া তাদের পক্ষে, আওয়ামী লীগের অনুগত একদল সুশীল বুদ্ধিজীবী দল আছে, যারা রাতকে দিন করতে দিনরাত ব্যস্ত, প্রয়োজনমত তারা জনগণকেও উত্তেজিত করতে পারে - যখন তারা সরকারে থাকেনা। তাদের পরীক্ষিত ইসলাম বিরোধী তৎপরতার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাদের প্রতি অনেকটাই সহানুভিতিশীল। আর সবার উপরে তো ভারতদেব আছেনই - যেকোন বিপদ-আপদে ছায়া হয়ে আওয়ামী লীগের মাথার উপর মহীরুহের মত দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগের একটা ব্যাপক ভয়ের জায়গা আছে। আর সেটি হল সেনাবাহিনী। দেশ স্বাধীন হবার পর আওয়ামী লীগ নেতারা যখন দেশটাকে বাপের সম্পত্তি মনে করে অবাধে লুটে পুটে শেষ করে দিচ্ছিল, রক্ষী বাহিনী আর মুজিব বাহিনীর তান্ডবে দেশের মানুষের যখন দিশেহারা অবস্থা, সেই সময়ে দেশের মানুষকে সেই অসহনীয় অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছিল কিছু 'বিপথগামী' ও 'উচ্চাকাংখী' সেনা সদস্যই - আর কেউ নয়।
আবার দেখুন না, ২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারী ঘোষিত নির্বাচনে যখন বিএনপি এককভাবে সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ভারতের সাহায্য নিয়েও যখন দেশে কোন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে এই সেনাবাহিনী - রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে ১/১১ তে জরুরী অবস্থা ঘোষণায় বাধ্য করার মধ্য দিয়ে।
কাজেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা সম্পর্কে আওয়ামী লীগ ভালভাবেই ওয়াকিবহাল। এইসব পেট্রোল বোমা মার্কা আন্দোলন, বা বান কি মুনের তৎপরতা কোন কিছুই কাজে আসবেনা, যদি না সেনাবাহিনী নাক গলায়। একমাত্র সেনাবাহিনীর পক্ষেই সম্ভব দেশের রাজনৈতিক পাশার দান উলটে দেওয়া।
তাই সেনাবাহিনীকে একটা ঝাড়ি দেবার দরকার হয়েছে। সেই সঙ্গে দরকার হয়েছে জনগনের সমর্থন পাওয়া বিএনপিকেও একটা শিক্ষা দেওয়া। সুশীল সমাজের মধ্যে মান্নাই যেহেতু আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিনিধি, তাই তাকেই বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করে সরকার একই সাথে বিএনপি, সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘকে একটা কড়া ডোজ দিয়ে দিল এবং বুঝিয়ে দিল, গণতন্ত্র রক্ষা এবং তৃতীয় শক্তির উত্থান রোধে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষমতায় থাকা এখন কতটা জরুরী।