পৃথিবীর তথাকথিত মূত্রমনা ব্লগারদের জন্য এক বিশাল ইন্সপিরেশন হয়ে উঠেছিল প্যারিসের ব্যাঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো হত্যাকাণ্ড। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডে কিছু মুত্রমনা নিহত হলেও বেঁচে থাকা তাদের অনুসারীদেরকে বিশাল উৎসাহ দিয়ে গেছেন। Je Suis Charlie নামে একটা মন্ত্র বানিয়ে এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছেন। খুনীরা আবার ঘটনাস্থলে নিজেদের পরিচয়পত্র ফেলে যাওয়ার মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আঙুল দিয়ে চিনিয়ে দিয়ে গেছেন। তার ফলশ্রুতিতে সন্ত্রাসকে মুসলিমদের জিহাদের সাথে গুলিয়ে ট্যাবলেট বানিয়ে শান্তিকামী মানুষদেরকে ধরে ধরে গেলানো হয়েছে। সারা বিশ্ব পারতপক্ষে মুসলিমদেরকে এক ঘরে করে ফেলেছে শার্লি হেব্দোর ঘটনাকে পুঁজি করে।
সেই একই কাহিনী এখন ঘটছে নিরীহ বাংলাদেশে। মুত্রমনাদের এই তথাকথিত ধর্ম বনাম বিজ্ঞান আন্দোলন চালু রাখার জন্য একটা লাশ ফেলা খুবই জরুরী হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আসলে ফেব্রুয়ারি মাস সবচেয়ে ভাল টার্গেট। এই মাসে বাংলা একাডেমী আয়োজিত বইমেলায় সমাবেশ ঘটে নানা ধরণের লেখক-সাহিত্যিকদের। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে এই মেলা ডমিনেট করছে মূলত বাম ঘরানার লেখক সাহিত্যিকরা। এদের মধ্যে আবার মুত্রমনাদের একটা গ্রুপ বেশ সক্রিয়। এজন্যে তারা প্রথম বলির পাঁঠা হিসেবে বেছেছিল সম্ভবত রোদেলা প্রকাশনীকে। নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর বইটি প্রকাশ হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে জানার পরেও বইটি পাবলিশ করেই ছাড়ল। তারা হয়তোবা ধরে নিয়েছিল এই বইকে কেন্দ্র করে বইমেলায় বা রোদেলা প্রকাশনীর স্টলে একটা খুনখুনি ঘটবে, তারপর এটাকে পুঁজি করে কিছুদিন মুত্রমনাদেরকে সক্রিয় রাখা যাবে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা পুরোপুরি পানিতে পড়ে গেল যখন এসব টের পেয়ে বাংলা একাডেমি তাদের স্টলটি বন্ধ করে দেয়।
সব প্ল্যানেরই একটা প্ল্যান বি থাকে। হতে পারে, হতভাগ্য অভিজিৎ বাবু হচ্ছেন তাদের এই প্ল্যান বি। ভদ্রলোক আমেরিকার সিটিজেন, জন্ম পরিচয়ে হিন্দু, এক মুসলিম নামধারীকে বিয়ে করে অসাম্প্রদায়িকতার বিকাশ ঘটিয়েছেন – সবচেয়ে বর গুণ উনি একজন মুত্রমনা । বলির জন্য এর চেয়ে উন্নতমানের পাঁঠা আর হতে পারে কি? বইমেলা প্রায় শেষের দিকে, রোদেলা স্ট্রাটেজি কাজে লাগলো না, তাই প্ল্যান বি ছাড়া আর কোন উপায় থাকলোনা। বেচারা অভিজিৎ!
আর তাইতো অভিজিতের রক্তের দাগ না শুকাতেই তথাকথিত মূত্রমনারা লেগে গেছে ইসলামের ধোলাই কার্যে। একটা লাশ না পড়লে প্রকাশ্যে এরকম একটা মিছিল বের করা কি কোনদিন সম্ভব হত?
অভিজিৎ নিহত হবার পর তার আশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাথীরা কেউ বাধাও দেয়নি, আহত অভিজিৎকে কেউ হাসপাতালে নেবার কোন তৎপরতাও দেখায়নি। সকলেই ব্যস্ত ছিল, রক্তে মাখামাখি হওয়া অভিজিতের ছবি তুলতে। এতে কি প্রমাণ হয়? প্রমাণ হয় যে, জীবিত অভিজিতের চেয়ে মৃত অভিজিতের ছবির দাম তাদের কাছে বেশি।
তবে আমার প্রশ্ন অন্যখানে। অভিজিৎ যদি আরেক শার্লি হেব্দোর সূচনাকার হয়েই থাকে, তবে বলির পাঁঠা হিসেবে এরকম মেধাবী, কর্মঠ ও উদ্দমী তরুণকে বেছে নেওয়া হল কেন? মুত্রমনাদেরকে কি আর তার দেবার মত কিছুই ছিলনা? অপরের যাত্রাভঙ্গের জন্য কেউ এভাবে নিজের নাক কাটে?