ক্রিকেট বাংলাদেশে খুব একটা জনপ্রিয় খেলা নয়। ১৯৯২-২০০৩ পর্যন্ত কিছুটা জনপ্রিয়তা ছিল, কিন্তু এর পর পরেই দেশে ক্রিকেট খালার জনপ্রিয়তায় দর্শনীয় ভাটা পড়ে। এর কারণ মূলত আইসিসি এবং ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের বাড়াবাড়ি রকমের খবরদারি। তাই ক্রীড়ামোদী মানুষজন ধরেই নিয়েছে যে ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করা প্রকারান্তরেই ভারতের খবরদারিকেই প্রশ্রয় দেওয়া। ভারত নামক দেশ, এর প্রতিক্রিয়াশীল জনগণ এবং প্রতিবেশীদের উপর মাতবরী ফলানো সরকার - এই সব কিছুই বাংলাদেশের জনগনের কাছ থেকে যুগে যুগে অনেক ঘৃণা যোগাড় করে ফেলেছে।
বর্তমানে দেশে ক্রিকেট খেলা নিয়ে যতটুকু আলোচনা হয় বা এ নিয়ে মানুষ যতটুকু উৎসাহ দেখায়, তার মূল কারণ হল ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে নিজ দেশের অংশগ্রহণ এবং প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন। এই না হলে ক্রিকেট বোধ হয় অনেক আগেই দেশ থেকে বিদায় নিত।
যাই হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্ব আসরে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে এখন কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছে। আর এই পর্যায়ে তারা সামনে পেয়েছে এদেশের জনগনের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতকে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী কেন বলছি জানেন? বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশকে পাবার আগে ব্যাপক সংখ্যায় পাকিস্তানকে সমর্থন দিত কেন জানেন? আফ্রিদির রূপ সৌন্দর্য বা শোয়েব আখতারের শক্তিমত্তার জন্য নয় - তার একমাত্র কারণ ছিল ভারত বিদ্বেষ, ভারতের প্রতি ঘৃণা। ওয়ানডের এক একটি ম্যাচে ভারত যখন পাকিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ হত - টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত। কেন জানেন? কারণ হল ভারত।
সেই ভারতকে অপদস্ত করার যোগ্যতা এখন বাংলাদেশ নিজেই অর্জন করেছে বলে পাকিস্তানকে কেউ এখন আর লেজ দিয়েও পোছেনা।
তো যা বলছিলাম। ভারতের মুখোমুখি পড়ার কারণে দেশের মানুষের আরেকবার একত্রিত হবার একটা গ্রেট মওকা থুক্কু সুযোগ পাওয়া গেছে। এই খেলায় জিতলে যে সমস্ত বাংলাদেশ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করবে - এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরেও একদল থাকবেই থাকবে - যারা চেহারায় আনন্দ প্রকাশ করলেও তাদের অন্তর কিন্তু পোড়া শুরু হয়ে যাবে। মনে মনে তারা আক্ষেপ করবে, কি হত যদি এই পুঁচকে বাংলাদেশের সাথে গ্রেট ইন্ডিয়া না হারত!
গ্রেট ইন্ডিয়া - এদেশে আওয়ামী দালালদের সমস্ত আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল। এই ইন্ডীয়ার জন্যই আওয়ামী দালাল্লেরা এখনো বুক উঁচু করে রাস্তায় হাঁটার সুযোগ পায় - টেন্ডার নিয়ে কুকুরের মত একজন আরেকজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ইন্ডীয়ার কারণে তাদের নেতারা এখন আমেরিকা-ইউরোপের ক্ষমতা - তাদের বাজারকে অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখায়। বলতে গেলে ভাতে-কাপড়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দালালদেরকে এখন বাঁচিয়ে রেখেছে এই ইন্ডীয়া। তাই ইন্ডীয়া এখন বাংলাদেশের কাছে খেলায় হেরে বিদায় নিলে আর যাই হোক, তাদের অন্তরের জ্বালা তো আর জুড়াবেনা। তাই মুখে মুখে তারা যতই বাংলাদেশের জয় কামনা করুক, অন্তরে অন্তরে তারা নিশ্চয়ই চাইছে যাতে কোন পঁচা শামুকে তাদের পা যেন না কাটে!
তাদের ভরসা একটাই - ক্রিকেট শক্তিতে বাংলাদেশ এখনো ভারতের চেয়ে বহু যোজন দূরে - আর অঘটন ঘটার সম্ভাবনা সব সময়েই কম থাকে। তারপরেও কথা থাকে একটাই - বাংলা বাঁশ রেডি - সাহস থাকলে কাছে আয়!