somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত আঁধার এক

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে তার গুরুত্ব বোঝে সে তখনই যখন অন্য এক পরিবেশের সাথে তার পরিচয় ঘটে। শহরের মানুষকেই প্রকৃতি টানে তাই একটু বেশিই।

আমি আজন্ম শহুরে পরিবেশে মানুষ। তাই শহরের জীবনটাকে আলাদা করে ভালোলাগার কথা মাথায় আসেনি কখনো। বরঞ্চ মনে হয়েছে এখানে সৌন্দর্য উপলব্ধির কিছু নেই। তবে বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি এই যান্ত্রিক পরিবেশের মাঝেও আলাদা কিছু নান্দনিকতা আছে।

আমি বর্তমানে যেখানে থাকি ভূমি থেকে তার উচ্চতা প্রায় ৮০-৮৫ ফিট। তবে ঢাকা শহরের খুব ব্যস্ত এলাকায় অবস্থিত বলে এটা এখানে খুবই স্বাভাবিক। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের বাড়ির পাশের বাড়ি গুলো এখনও উঁচু হওয়া শুরু করেনি।তাই ব্যস্ত ঢাকার বেশ খানিকটা অংশ এখান থেকে দেখতে পাই।

আমার বাসাটা খুব আহামরি না হলেও এর আকর্ষণীয় দিক গুলোর একটা হচ্ছে এখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত- দুটাই স্পষ্ট দেখা যায়। এখানে আমরা যখন নতুন এলাম তখন এই ব্যাপারটি আবিষ্কার করে আনন্দে বিহবল হয়ে গিয়েছিলাম। খোলা মাঠে থাকলে যে চিলকে মনে হয় আকাশের কাছকাছি, আমার জানালা দিয়ে তাকালে প্রায়ই পাশ দিয়ে সেই সোনালী ডানার চিল উড়ে যেতে দেখি।
এর পর আবিষ্কার করলাম আরেক আশ্চর্য দিক, তা হল রাতের বেলা একটু দূরের ২০-২২ তলা দালান গুলোতে যখন বাতি জ্বলে, দেখতে দারুণ লাগে। আমি প্রতি রাতে একবার হলেও বারান্দায় দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখি। দেখার সময় মাঝে মাঝে নিজের ভারী চশমাটা খুলে ফেলি-তখন মনে হয় এ এক আশ্চর্য জগত!

আমি আবার নিশাচর। রাত্রি আমাকে অসম্ভব টানে। মাঝে মাঝে এমন হয় আমার বাসার সবাই যখন ঘুম থেকে ওঠে, আমি তখন ঘুমাতে যাই! এমনি এক নিঃসংগ রাতে আবিষ্কার করলাম আরেক অদ্ভুত ব্যাপার! আমাদের একটি জানালা দিয়ে তাকালেই দেখা যায় বহুল পরিচিত এক ট্রাফিক সিগন্যাল। বৃষ্টির রাত যখন গভীর হয়, যানবাহন গুলো যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমুতে যায়, তখন নিঃসংগ সিগন্যাল বাতির লাল আলো পড়ে বৃষ্টিভেজা চকচকে কালো রাজপথে। এক অপূর্ব অনুভূতি গ্রাস করে আমাকে। মনে হয়, আলোটাই তরল রূপ ধারণ করেছে। এক দৌড়ে রাস্তায় নেমে সেই তরল রঙ হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার, একটু গালে লাগানোর অদম্য ইচ্ছাকে মনে মনে হেসে দমন করার চেষ্টা করি।
এরপর থেকে বৃষ্টি হলেই রাতের জন্য অপেক্ষা করি। বৃষ্টির রাতে অন্য কোথাও বেড়াতে গেলেই খুব মিস করি এটা।

মানুষ নিজের ভালোলাগাকে তার প্রিয়জনের সাথে ভাগ করতে পছন্দ করে, আমি আমার পরিচিত প্রায় সবাইকেই আমার প্রিয় ব্যাপার গুলো ভাগাভাগি করেছি। চেষ্টা করেছি আমার অনুভূতি গুলোকে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আমি মানুষ হিসেবে খুবই যন্ত্রনাদায়ক! তাই বেশ কয়েকবার আমাদের বাসায় আসা অতিথীদের অনেক রাত পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছি শুধুমাত্র এই দৃশ্যটি দেখাবার জন্য। তারাও মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখেছে। আজ আপনাদের সাথেও আমার এই অদ্ভুত ভালোলাগা গুলো শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না! তবে আমার কাছে প্রকৃতিকে বন্দী করার যন্ত্রটি আপাতত না থাকায় এর আসল অনুভূতিটা দিতে পারছিনা বলে দুঃখিত।

সময় করে আর এক দিন দেখাবো।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:০১
৬৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×