somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোড টু কুয়াকাটা:: ট্যুর উইথ মুরগি

০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুয়াকাটা যাবার ভূত চাপলো মাথায়। সে সময় ট্যুরের জন্য পোস্টার করতাম। কাঁকড়ার চর, ফাতরার বন, আর কুয়াকাটার লাবণ্য তুলে ধরে সে পোস্টারের ডাকে ডিইউটিএস'র মেম্বারের বাইরে আরো ক'জন এলেন। বছরের শেষ দিকে সে ট্যুর। সালটা সম্ভবত ২০০৪।

সব মিলিয়ে লোক হলো ১৩ কি চৌদ্দজন। সেটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি থেকে প্রথম ট্যুর যে ট্যুরে বাবু ছিল না। আমাদের সাথী হলো মৌ, মামুন, তুহিনসহ আরো অনেকে।

কুয়াকাটা যাবার রাস্তাটা কষ্টের। কোনো সন্দেহ নেই। সে সময় সরাসরি একটা বাসই যেতো, সেটি বিআরটিসির। বাসের ডান দিকে তিনটা সিট। বাম দিকে দুটো।

আমরা বাম দিকের সিটগুলো কাটলাম। বাসে উঠলাম গাবতলী থেকে। ডান পাশের সিটে মুরগী। খাঁচাবন্দী মুরগীগুলো মাজে মধ্যে ওড়াওড়ি করছে। কক করে ডাকছেও । আমরা ছুটে চলেছি।

পথে ফরিদপুরের এক রাস্তায় বাস দাঁড়ালো। লম্বা জ্যাম। আমরা সবাই নেমে এলাম। দেখলাম রাস্তার পাশে দুধ বিক্রি হচ্ছে। গরম দুধ আর বিস্কুট খেয়ে আমরা আবার উঠে দাঁড়ালাম। বাসে উঠে বসে আছি। বাস চলছে। রাস্তার অবস্থা খারাপ। হেলে দুলে বাসে বাসে আমাদের মধ্যরাত হলো একটা কলেজের পাশে।

বর্ষ বিদায় জানানোর জন্য সবাই নেমে এলাম সেখানে। বেশ খানিকটা সময় হৈ হুল্লোড় হলো। গান বাজনা হলো। মোমবাতি জেলেছিল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফের উঠে এলাম বাসে। তার আগের গল্পটা আমরা প্রতারিত হলাম।

রাস্তার পাশে একটা শনের বেড়া দেয়া রেস্টুরেন্টে খেতে বসলাম। যা মন চায় খাও। খেতে শুরু করলাম, ডিম, মাছ, বেশি করে তেলে ডোবানো সবজি। খাবার শেষ করার আগেই বাস ছেড়ে দিচ্ছে। পড়ি মরি করে ছুটতে গিয়ে খাবারে বিল তিনগুণ শোধ করেছি।

সকাল ৮ টার দিকে আমরা নামলাম কুয়াকাটায়। থার্টিফাস্ট উপলক্ষে যে রকম ভিড় আশা করেছিলাম, সেটি নেই। আমরা একটা হোটেলের সন্ধানে বের হলাম। এর মধ্যে রাস্তার পাশে সকালের নাশতা। মাত্র বারো টাকা হারে সেরে নিয়ে চা খাচ্ছে কেউ কেউ।

হোটেল সাগরপারের তিনটা রুম আমরা দখল নিলাম। এটা নেবার জন্য হোটেল মালিকের বাড়ি যেতে হয়েছে। প্রথম বলল রুম নেই। আমরা বল্লাম তাহলে আপনার বাড়িতে থাকি। শেষ পর্যন্ত পটিয়ে আড়াইশ টাকা দরে রুম গুলো নেয়া হলো।

রুমে ওঠার পর ফ্রেশ হয়ে আমরা ছুটলাম সৈকতে। ভ্যানে চড়ে যাওয়া হলো। ভেজাভেজি হলো ভীষণ। তারপর দুপুর। 'ভাত ঘর' নামে একটা রেস্তোরা পাওয়া গেলো। এর মেইন শাখা ছিল ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোড়ে। দুপুরে পেট পুরে খাবার খেলাম-মাত্র ৩৮ টাকায়।

রাতে খাবারের বার বি কিউ করার জন্য একটা কোরাল মাছ অর্ডার করা হলো । সেটি দেড় কেজি ওজনের। দাম দেড়শ টাকা। এটা একেবারে রেডি করে দেয়া পর্যন্ত খরচ।

কুয়াকাটার বিকালটাও দারুণ কাটলো। বিচে ঘুরে বেড়ালাম আমরা। সন্ধ্যার দিকে আমরা ভ্যানে করে লোকাল একটা বাজারে গেলাম। সেখানে একটা নতুন সিনেমা হল। তাতে সিনেমা দেখার আয়োজন। সিনেমা দেখার পর ফিরে এলাম কুয়াকাটায়।

রাত সাড়ে ১২ টা। প্রচণ্ড কুয়াশায় ঢেকে আছে সব। মাছ আনা হলো। কিন্তু পোড়ানোর আয়োজন নেই। হোটেলের সামনে খোলা মাঠে আগুন ধরছে না। কেরোসিন আনা হলো। কিন্তু আগুন জ্বলে না। পাশের সুপারি গাছের পাতা পোড়ানো হলো, ভেজা কাঠ কিছুতেই মাছ পোড়ার যুতসই হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মামুন পাশের ওষুধ দোকানের ঝাঁপ ওঠানোর বাশের লাঠি নিয়ে আসলো। সেটি দিয়ে পুরো মাছ পোড়ানোর আয়োজন।

রাত দুটায় মৎস্য ভক্ষণ পর্ব শেষে আমরা বিচে গেলাম। অন্ধকার বিচে কেবল সমুদ্রের গর্জন ছাড়া কিছুই কানে আসছে না। এ রকম দুর্দমনীয় আনন্দ-উপভোগ্য রাত, খুব কম সময় দেখা হয়েছে।

ভোরের দিকে আমরা ফের হোটেলে। সকালে দেখলাম ওষুধের দোকানি এসে ঝাঁপ ওঠাতে না পেরে বকাবকি করছে। আমরা চুপ চাপ। কিছুই হয়নি, এমন ভান করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এর মধ্যে মামুন গিয়ে কয়েকটা প্যারাসিটামল নিয়ে এলো। দোকানির সাথে গল্পও করে এলো।

সকালের নাশতা সেরে ফের আমরা বিচে। সেখান থেকে বৌদ্ধবিহার হয়ে মহিলা মার্কেটে। মহিলা মার্কেট মানে মহিলা বিক্রি নয়! এটি চালাতেন মহিলারা। এ জন্য এর নাম মহিলা মার্কেট। সেখানে কেনাকাটার পর দুপুরের দিকে আমরা পটুয়াখালী ছুটলাম।

মুরগির সাথে আর ফেরা নয়। এবার লঞ্চে ফিরবো। নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় লঞ্চে ওঠবো- এমন সময় সবাই এক সাতে চিক্কুর মারলো। যাত্রীদের চোখ আমাদের দিকে। লঞ্চের দোতলায় উঠলে একজন এগিয়ে এসে বললো- কার্পেট লাগলে দিতে পারি। বল্লাম-'ট্যাকা নাই। দিবা কিনা ভাইবা লও।'

কার্পেট এসে পড়লো। আমরা বসে পড়লাম। ঢাকা আসবো মাত্র ১০০ টাকায়। সে রকম মজা। দেখলাম সবাই ঘুমানোর আয়োজন করছে। আমরা সাপ লুডু খেলছি। লুডু খেলছি। গান গাইতেছি। মওজ-মাস্তিতে ভরপুর পুরা রাত। ঘুমের ডিস্টার্ব হলো অনেকের। এর মধ্যে একবার সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে গেলাম লঞ্চের রেস্টুরেন্টে। চল্লিশ টাকা প্রতি রাতের বাধ্য গ্রহণ পর্ব শেষে আবারো আড্ডা।

মধ্যরাতে লঞ্চটা কাত হয়ে গেলো। দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হচ্ছে। বের হয়ে দেখলাম যাত্রাবাড়ি- গাবতলী রুটের আট নম্বর বাসের মত কে কার আগে যাবে সে জন্য লঞ্চ দুটো কম্পিটিশন চলছে। অন্য যাত্রীদের কোনো ভাবনা নেই।

আমরাও আর বাবলাম না। লঞ্চের ডেকে, ছাদে আড্ডায় রাত কেটে গেলো। সকাল বেলা আমরা সদরঘাট। ফিরলাম-ক্যাম্পাসে!


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×