somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প:: জীবন এমন... এমনই মিথ্যাচারের

১২ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাঙ্গু নদী-- ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।

১.
শরীর-মাদকতা এখন আর টানে না। গাঙের ভাটার মত থাইমা গেছে... সব। অথচ এ গাঙেই কত যৌবন-কামোত্তেজনা ছিল। একটা চুমু, এটা ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ার জন্য দু'জ দু'প্রান্ত থেকে ছুটে আসতো--- নগরের কোন এক প্রান্তে; মিলিত হতো। ভাবনায় নিজেকে মগ্ন রাখে অনিকেত--

সাঙ্গুর ঘোলা জলে ইঞ্জিন নৌকাটা চলছে। এক ফোঁটা জলের ছিটা এসে পড়ে চোখে। সাঙ্গুর জল--- মনের ভেতর কত রকমের ভাবনা ভীড় করে। বছর কুড়ি আগের একটা জীবন শুরু । সেই জীবন কতটা তুষ্ট অনিকেত। একা এই নদীর জলে ভাসতে ভাসতে সে কথা মনে করে সে।

নিজেকে অনেকটা নি:সঙ্গ মনে হয়, তার। পাহাড়ের ভাঁজে যৌবনা ঝর্ণার জলের মতই- একাকী নিরবধি বয়ে যাওয়া। সেই বয়ে চলা দেখতে উৎসুক মানুষ আনন্দ পায়, উৎসব করে। ঝর্ণার তাতে কিছু যায় আসে না।

২.
বয়সটা বাড়তে থাকলে জৈবিক চাহিদাও বাড়ে কিম্বা কমে। তারচে বড় কথা বাড়ে বোঝার ক্ষমতা। জৈবিক তাড়নাকে বোঝার, প্রেম-ভালোবাসা উপলব্ধির সক্ষমতাও বাড়ে। অনিকেত কী এখন সে দিকে ধাবিত হচ্ছে! অনেকটা আনমনে গায় সে-- 'না পারিলাম বাঁচতে আমি/ না পারিলাম মরতে/ না পারলাম ওই পিরীতের ওই সোনার পাখি ধরতে!'

আপসে সব চেয়ে নেয় অনিকেত। কেউ একজন ভালোবেসে তাকে তুলে দেবে কাম-সোহাগ। টেনে নেবে প্রেমের গভীর অন্দরে।হাস্নাহেনার উন্মাতাল রাত, গর্মাক্ত দুপুর কিম্বা শান্ত সন্ধ্যাটা করে তুলবে উপভাগ্য। দু'জনেই হবে অনন্য এক জীবন সঙ্গী! হয়নি।

পিরীত যখন তার হলো না, তখন শরীরই তার চাওয়া। এবং এটি সে নিজ থেকে চেয়ে নিলো বছর কুড়ি আগে। শরীর বৃত্তে তার বন্ধন। নারী শরীর অবমুক্ত করার মধ্য দিয়ে তার কাম-গোলায় অনভ্যস্ত চোখ এখন অভ্যস্ত। শরীর হাতড়ানো, নারীর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কামকাতুরে স্পর্শই তার চাওয়া। প্রেমকে সে ফেলে এসেছে--- শাওন মাসের শেষ সন্ধ্যায়, গাঙের জলে, বিলের ঘোলা পানির উপর--- যে পানিতে হাঁস চষে বেড়ায়। ডুব দিয়ে শামুক কুড়িয়ে খায়। সে জলেই পড়ে থাকে সব। সবই।

৩.
অথচ এক সময় তার মনে প্রেম ছিল। প্রেমের চূড়ান্ত বলে তার বিবেচনা ছিল কাম। সানিতাকে তাই সেভাবেই দেখেছে। গোলাপের রাজ্যে, মেঘ-পাহাড়ের লেকে, পূর্ণিমার শেষ রাতে সানিতাকে ঘিরে যে ভাবনাগুলো সাজিয়েছে অনিকেত, তার কোনটাই সত্য হয়নি। এমনকি সানিতা তাকে ঘিরে যে প্রেম-জয়গান রচনার খবর দিয়েছিল তারও কোন বাস্তবায়ন ঘটেনি- তাদের যুগল জীবনের কুড়ি বছরে। অনিকেতের উপলব্ধি --আসলে ভাবনা, পরিকল্পনা এটি সব সময় বাস্তব হয় না! তারও হয়নি!

সকালের সোনা রোদ সব সময় সোনা হয় না। সন্ধ্যাটাও ফেরেনা কমনীয় হয়ে। দু'জনের এত মিল তবুও সব মলিন হয়ে যায় দিনের শেষে। স্বেচ্ছায় কোন সন্ধ্যায় কি এক কাপ চা হাতে প্রেয়সিরূপে পেয়েছিল তাকে--- পেয়েছে হয়ত, সেটি রেস্তারাঁর বারান্দায়! কিম্বা রাতে-- দু'জনে একসাথে এক প্রস্থ রান্না করার গল্প তাদের নেই। একসাথে একবার চোখে চোখ রেখে ডুব দেবার গল্প নেই। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না। দু'জনেই অভিমানে তো ডুবে থাকে!

৪.
কিছু কষ্ট থাকে, তার সব কিছু সব সময় নষ্ট বলে ডুবিয়ে দেয়া যায় না। যদি ফেরে নতুন ভোর, আলোক সন্ধ্যা কিম্বা কোজাগরি একটা রাত। শরীর কাব্য পাঠের তুঙ্গে কেউ যখন বলে- 'তুমি কেবল শরীর ভালোবাসো' তখন হোঁচট খেতে হয়। এমন ঘটনা যে অনিকেতের হয়নি, তাও নয়। তবুও কীভাবে যেনো সে শরীর কাব্য পাঠে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেছে।

সানিতা নিজ থেকে কখনো আগ্রহ করে একটা চুমু, একটা কাম-স্বপ্ন দেখায়নি। বেশ্যার সঙ্গম আর সানিতা সঙ্গমে তফাৎ খুঁজে পায়না অনিকেত। তবুও তার একটাকে কেবল জায়েজ বলে মেনে নেয়া। নিজেই ডাকে, নিজেই উৎসব করে- কামোৎসব। সেই উৎসব শেষেই নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়! এ গুটিয়ে নেয়া, এ নিজেকের সাথে নিজের যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত ।

৫.
জীবনটা এমন না হলেও পারতো। প্রথাগত সুন্দরী একটা নারী, যার দুধের বোঁটা গোলাপি.. পিনপিনে বাতাসে নড়ে ওঠে শরীর--- জবাফুল নাভির অতলে যার কাম-উৎসব--- এমন কোন রমণীয় ঘিরে তো স্বপ্ন আঁকেনি অনিকেত। আঁকলে সেটি বাস্তব হওওয়ার উপায় ছিল। তবুও কেন- সব উল্টে যায়-- ভেবে পায় না।

সানিতার একটা প্রেম ছিল। সে প্রেম টেকেনি। কৈশরের প্রেম। প্রথম রজস্রাবে যে শিশু নতুন-তরুণী রূপে রূপান্তারিত হয়... সে সময়কার প্রেম। এমন প্রেম কেউ ভোলে না। সানিতাও ভোলেনি। তাতে কি? ভুলে থাকার চেষ্টাও করেনি। তাতেও কিচ্ছু যায় আসেনা, অনিকেতের। এটা তো হতে পারে! এটা ব্ল্যাকবোর্ডে চকের দাগ নয়... একটা রঙ্গিন ডাস্টারের এক পোঁচে মুছে দেয়া যায়।
নতুন করে যাকে পেয়েছে জীবনে তাকে মূল্যহীন ভাবাটাও কতটা ঠিক সেটি জানে না অনিকেত। যে মেয়েটি তার বন্ধুসঙ্গকে ফেরেশতা সঙ্গ হিসাবে বিচেনা করে, সে একই মেয়ে তার বরের সঙ্গকে উপভোগ করে না।

৬.
অবশ্য উপভোগ করার মত কোন কারণও সানিতা অনিকেতের মধ্যে খুঁজে পায় না। এ খুঁজে না পাওয়ার পেছনে অনিকেতের দায় কিছু কম বলে ধরে নেয়াটা ঠিক হবে না। দায় অবশ্যই অনিকেতের আছে। তাই বলে দুই দশক একটা সম্পর্ক শুধু শরীরের উপর টিকে থাকলেও একটা নারীর প্রতি পুরুষের কিম্বা পুরুষের প্রতি নারীর প্রেম জন্মাতে পারে! সম্ভবত। তবে এ চরিত্রের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। হবার সম্ভবানা নেই। ভালোবাসাবাসির মিথ্যা জানান দেয়াটাও দু'জনের পছন্দ নয়, তাই কেউ জানানও দেয়না। মিথ্যা অভিনয় না থাকাটাও একটা উৎসুক উৎসব। এটাও কম নয়।

৭. জীবনের রসহীন শুষ্ক সম্পর্কের ইতিও টানতে চায়না তারা । এভাবে চলছে... চলুক না। এটাও একে অন্যকে এক ধরণের শাস্তির ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে। যাক না।

সাঙ্গুর আরো ভেতরে চলে এসেছে নৌকা, রুমার কাছাকাছি--- ইনজিনের শব্দটা স্লথ। নদীর জলে কারেন্ট আছে। সেই কারেন্ট মোকাবিলায় মাঝির একটা কৌশল--- এ রকম কৌশল কি অনিকেত সানিতার জীবনে আসতে পারতো! পারতো না! ভাবনায় ডুবে থাকে অনিকেত! এক জীবন... এতটা কষ্ট নিয়েই কেটে গেলে। অথচ যার জন্য সানিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছে, সে হয়ত 'সুখেই আছে'। যাকে এড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন সেই অনিকেতও হয়ত কারো প্রেমের কাছে হার মেনেছে বলে সানিতার 'প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি'!!

জীবন এমন... এমনই মিথ্যাচারের!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×