somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল মনি
ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

প্রিয়তম কী লিখি-৩

০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় সুনীল,

আজ অনেক দিন পর তোমার নাম লিখছি। যেন এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, ভাষাগুলো আমার অন্তরে জমে উঠেছে, তোমার কাছে পৌঁছানোর তাগিদে এক অপরিসীম তৃষ্ণা নিয়ে। তুমি কোথাও আছো, কিন্তু আমার চোখে তুমি ধরা পড়ো না। তুমি যেন মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এক রূপকথার রাজপুত্তুর-যে কোনো দিন অদৃশ্য হয়ে যায়, আবার ফিরে আসে কেবল স্বপ্নে। কিন্তু আমি জানি, তুমি নেই তবুও তোমার অনুপস্থিতির মধ্যে, এক অন্যরকম উপস্থিতি খুঁজে পাই। তুমি কোথাও আছো, শূন্যতার মাঝে। তোমার ছায়া, তোমার স্মৃতি, তা যেন এক নিঃশব্দ বাতাসে ঢেউ তুলছে।

তবে হ্যাঁ! তুমি নেই এটা তো আমি জানি, কিন্তু এমন একটা অনুভূতি হয়, যেন তুমি ঠিক এখানে, একেবারে আমার কাছে।তোমার মিষ্টি হাসি, তোমার নিঃশব্দ নীরবতা, সব কিছু যেন এক অমোঘ আঁকিবুকি হয়ে ভেসে থাকে মনের মাঝে।

তুমি তো জানো, সুনীল, আমি কখনো ভেঙে পড়তে পারি না। যখন তুমি চলে গেছো, আমি কিছু না বলেই নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলেছি, যেন কিছুও পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু, এই শূন্যতার মাঝে, তোমার চলে যাওয়া আমাকে কখনো কাঁদায়নি। বরং সে শূন্যতা এক অন্যরকম অনুভূতিতে পরিণত করেছে।

আজ ভোরে, ঘুম ভাঙার ঠিক আগে, আমি তোমাকে দেখলাম স্বপ্নে। তুমি আর আমি পাশাপাশি হাঁটছি, যেন পুরোনো এক যুগের কেউ, যেন আমাদের মধ্যে কোনো সময়ের সীমা নেই। শুধু চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিলাম, যেন কোন এক রহস্যের সমাধান খুঁজছিলাম।
তোমার গায়ে পুরোনো চাদর গেরুয়া রঙের ,মুখে ক্লান্তির ছাপ তবে সেই ক্লান্তি যেন এক ধরনের রহস্যময় সৌন্দর্যে পূর্ণ ছিল। খোঁচানো দাড়ি, যা হয়তো কামাতে ভুলে গেছো, তবু সেই দাড়ি যেন তোমাকে এক অদ্ভুতভাবে পূর্ণ করেছিল। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই পুরোনো টং দোকানের সামনে, তুমি চা খাচ্ছিলে, ধীরে ধীরে, আর চায়ের কাপ ঠোঁটে তুলতে তুলতে তুমি আমার দিকে তাকালে নির্নিমেষ,শূন্য এক দৃষ্টিতে। দৃষ্টির যে প্রখরতা তা এখনো চোখে আটকে আছে। কিছুতেই মন থেকে সরে না। তোমার বুঝি অসুখ করল! কী হয়েছে তোমার? এই ভেবে ভেবে ঘুম আমার উড়ে গেছে। আমি এক দৃষ্টিতে তোমার চোখে চোখ পেতে রেখেছিলাম। কেন যেন কিছু বলার ইচ্ছে হয়নি। তাকিয়ে ছিলাম শুধু, যেন তোমার চোখের ভেতর থেকে যদি দু:খগাথা বের করে আনতে পারি শিশিরে ভরা পাতা থেকে জল তোলা যায়। কিন্তু কেন জানি, তাও কি সম্ভব? আমাদের মধ্যে যে এক অদৃশ্য শূন্যতা ছিল, তা কখনো ধরা দেয়নি। সে শূন্যতা ছিল এক অচিন্ত্যনীয় যন্ত্রণায় পরিণত, যা হৃদয়ে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, আর আমাকে তুমি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

শোন , মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা দুটি নক্ষত্র, আলাদা কক্ষপথে ঘোরাফেরা করেও বারবার একই শূন্যতায় এসে মিশে যাই।
যাইহোক , এটা ওটা ভাবতেই কখন যে ঘুম আসে আর ঘুম ভাঙে। কী বলব আর! তুমি নেই। কিন্তু তোমার চায়ের কাপের সেই নিঃশব্দতা, তোমার চোখে জমে থাকা প্রশ্ন আজকের সকালেও যেন আমাকে শূন্যতার মধ্যে রেখে দিয়েছে। তুমি চলে গেছো, সুনীল ,তবে তোমার ছায়া এখনও আমার সাথে, স্মৃতি, স্পর্শ সব কিছুতেই রয়ে গেছে। তোমার চলে যাওয়ার পরেও, তুমি যেন অমর হয়ে গেছো, এক রাত্রির চাঁদের মতো, যা আলো দেয়, কিন্তু স্পর্শ করতে পারে না। তুমি কখনো চলে যাবে না, সুনীল, তুমি আমার ভেতরে এক অদৃশ্যভাবে স্থির হয়ে আছ। গভীরতায় যে রয় তাকে আর আলাদা করার কী ইবা আছে!

আমি কখনো তোমার রাজ্য বা মুকুট চাইনি। শুধু এক সন্ধ্যার আলোতে, এক কাপ চা,আর তোমার চোখে চোখ রেখে সেই মায়াময় নিশ্চুপ অনুভূতি এটাই চেয়েছিলাম। তুমি, তুমি যেন আমার মাঝে,আমার পৃথিবীকে এক নতুনভাবে সাজাব কতটা চেয়েছিলাম আমি?এটা কি খুব বেশি চাওয়া ছিল, সুনীল?

আজ তোমাকে লিখলাম, কারণ আর বলার কেউ নেই।
তুমি জানো, এতদিন পরেও তুমি আমার ভিতরের সবচেয়ে চেনা মানুষ, আর সবচেয়ে অচেনা শূন্যতাও। আমাকে সব লিখতে হবে। আমার অনেক কিছু তোমাকে বলা যে বাকী। টুস করে যদি চলে যাই তুমি তো দেখতেও আসবে না। তাই তো এতো কথা লিখব ঠিক করেছি যেন আমার অনুপস্থিতি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য শুন্যতা বোধ না করায়। প্রতিনিয়ত তুমি খুঁজে পাবে আমার লেখার বিন্দু বিন্দু শব্দের মায়ায়। আমি তোমার কিছু নাই বা হলাম তবুও মায়া হয়ে হৃদয়ে রয়ে গেলাম। তুমি সরাতে চাইলেও সরাতে পারবে না কোনদিন। অবশ্য তুমিও বা সরাবে কেন! মানুষ ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তোলে সাপের মতন ,আমি তো সাপ নই আর তুমিও নও তাই তো আমাদের কোনদিন বলা হলো না। না হোক তবুও আমাদের মত এমন মজবুত ঘর বল কজনার আছে! সবার ঘর ইট পাথরের বলতে পার মিথ্যে ভালোবাসার জালে জড়ানো মাকড়সার বাড়ি। আমাদের বাড়ি ভেবে বল তো কীসের বাড়ি। জানো সুনীল আমি তোমার সাথে কত যে পথে পথে হেঁটেছি। এই হেঁটে চলার পথ যেন গন্তব্যহীন। পথের শেষে তোমাকে হারাতে চাই না। কিছুই চাই না। তবে আমি কী চাই? আমি চাই আমার খুব অসুখে তুমি দূর হতে হাতটা চেপে বসে রও অনন্তকাল!

তুমি রয়ে গেছো আমার চায়ের কাপে,
প্রতিদিন সকালে, সেই এক কাপ চা হাতে নিই—তোমার কথা মনে পড়ে। জানো, আজকাল চায়ের কাপে আর চা দেখি না, দেখি তোমার মুখ। তুমি নেই তা আমি জানি; তবু কে যেন মনের কোণে বলে, তুমি এখানেই আছো, এই নিরালায়, এই নীরবতায়।আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাই,
কিন্তু পারি না। বুকের ভিতর জমে থাকে কান্না, চিৎকার। সে কান্না কেউ শুনতে পায় না তুমি ছাড়া। জানি না কেন, সব কিছু বলার আগেই গিলে ফেলি। সেই না-বলা কথাগুলোই তোমাকে নিবেদন করি, চুপিচুপি।তোমাকে আমি হৃদয়ের এক গোপন কোণে লুকিয়ে রেখেছি,
তুমি জানো না, অথচ আছো। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারে না কিন্তু আমি জানি, তুমি এখনো আমার মধ্যে আছো। যেমন কোন এক পুরোনো দিনের চিঠি, বারবার নাড়াচাড়া করি, তবু কাউকে বলি না। আচ্ছা যাই -আবার
কথা হবে কেমন।

ইতি, তোমারই নীলিমা
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×