জনসংখ্যার কথা আসলে প্রথমেই চলে গণচীনের কথা। ২০০৩ সালের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে ২৫শে অক্টোবর ২০১০ এ গণচীনের মোট জনসংখ্যা ১৩৫৪৩৭০৭৫৪ (একশত পয়ত্রিশ কোটি তেতাল্লিশ লাখ), যেখানে মোট আয়তন ৯৭৫৮৮০১ বর্গকিমি (প্রায় সাতানব্বই লক্ষ উনষাট হাজার বর্গকিমি), সেই হিসেবে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১১০ জন (প্রতি বর্গকিমি এ), যা জাপানের একতৃতীয়াংশ এবং এশিয়ার অনেক দেশের চাইতে এবং ইউরোপের অনেক দেশের চাইতে কম।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০০৯ সালে ছিল ১৬ কোটি ২২ লাখ, বাংলাদেশের মোট আয়তন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গকিমি, আর জনসংখ্যার ঘনত্ব ১১০০ জন (প্রতি বর্গকিমি এ), যা চীনের ঘনত্বের চাইতে ১০ গুণ বেশি।
চীনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনঃ
একসন্তান নীতির প্রবর্তন করা হয় ১৯৭৮ সালে যা প্রাথমিকভাবে কার্যকর করা হয় ১৯৭৯ সালে জন্ম নেয়া শিশুর উপর। অর্থাৎ, বলা যায়, ১৯৭৯ সাল থেকে চীনে একসন্তান নীতি কার্যকর। এবং এই নীতি আরও একদশক বা তারও বেশি সময় কার্যকর থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সে দেশের অনেকেই এই নীতি মানতে চায়নি, তবুও সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং পরিবেশ রক্ষার কারণ দেখিয়ে চীন সরকার এই নীতির প্রবর্তন করে। চীনের মোট জনসংখ্যার ৩৫.৯% ভাগ একসন্তান নীতির আওতাভূক্ত এবং এই নীতি পল্লী এলাকা, হংকং, ম্যাকাউ, এবং তিব্বতের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কর্তৃপক্ষের দাবী, ২০০০ সাল পর্যন্ত আড়াই কোটি সন্তানের জন্ম ঠেকানো গেছে এই নীতির ফলে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটঃ
বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক দারিদ্রসীমার নিচে এবং গ্রামে বাস করে। অধিকাংশই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সচেতন নয়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায়ই বিয়ে করে। পক্ষান্তরে, হালকা শিক্ষিত এবং শহুরে লোকজনের মধ্যে দেরিতে বিয়ে এবং এক বা দুই সন্তান নেয়ার ঘটনাই বেশি দেখা যায়। এই শহুরে/শিক্ষিত লোকগুলো এক, দুই, বা ততোধিক সন্তান জন্ম দিলেও সেই সন্তানগুলো হয় আত্মনির্ভরশীল আর তা না হলেও দেশ/জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু দরিদ্র এবং অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী নতুনভাবে অতিরিক্ত দরিদ্র, অশিক্ষিত, এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যা বাড়িয়ে চলছে। এতে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ প্রভৃতির উপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
এই গ্রাফটিতে দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশ বেশ ভালই উন্নতি করেছে। তবে, যেহেতু আমাদের দেশের আয়তন কম, সম্পদ থাকলেও ব্যবহারের উপায় নাই, গ্যাস/কয়লা বিদেশীদের দিয়ে তুলে ওদের থেকেই কিনে নিতে হয়, তাই, জনসংখ্যার মত বাড়তি আরেকটা সমস্যা সম্পর্কে আমাদের একটা কঠোর নীতিমালা দরকার।
কিন্তু সমাধানের উপায় কি
১। একসন্তান নীতি
২। দুই সন্তান নীতি
৩। ইচ্ছাধীন (যত ইচ্ছা)
১। একসন্তান নীতিঃ আমরা বাংলাদেশী বা ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেরা একটু আবেগী, ধর্মভীরুও কম না। সেদিকে নাহয় না-ই গেলাম, বংশের বাত্তি জ্বালানোর ক্ষমতা একমাত্র ছেলে সন্তানেরই আছে বলে আমরা মনে করি। এও মনে করি যে, ছেলেরাই কেবল পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হতে পারে। যদিও বাংলাদেশে এখন অনেক মেয়েই উপার্জন করে এবং ভালভাবে পরিবারকে চালাতে পারে কিন্তু আমরা মেয়েদেরকে আত্মনির্ভরশীল ভাবতে পারি না। অনেক উচ্চশিক্ষিত এবং ধনী শ্রেণীর লোকদের মধ্যেও এই ধারণা প্রচলিত আছে। তাই প্রথম সন্তান যদি মেয়ে হয় তাহলে তার আর চিন্তার সীমা থাকে না, বংশ বুঝি আর রক্ষা করা গেল না, ভিটেয় বাত্তি জ্বালাবার জন্য একখানি কাঠি (দিয়াশলাই এর কাঠি নয়, পুংলিঙ্গ) না হলেই নয়। এইজন্য একের পর এক সন্তান জন্ম দিতে থাকেন একখান কাঠি জন্মাবার আগ পর্যন্ত। প্রথম কাঠিখানি আসার পর যে থেমে যাবে এমন না, এত্তদিনের খেদ মেটাবার জন্য নাড়ীতে যে কয়খান কাঠি আছে একবারে টেনে বের করবার চেষ্টা করে। পরিবার হয়ে যায় বড়, প্রমীলা ফুটবল আর বয়েজ ক্রিকেট টিম দুই-ই বানানো যায় তাদের দিয়ে।
আবার প্রথম সন্তান ছেলে হলে এবার মেয়ের জন্য ভালবাসার শেষ নাই। একটা মেয়ে না থাকলে হয়!! মেয়ের শশুর বাড়ি যাব, আম-কাঁঠাল খাব, আরও কত কি!!! যাইহোক, মেয়ে পাবার জন্য ঐ একই সাইকেল চলে।
কাজেই, একসন্তান নীতি কি সম্ভব আমাদের বাংলাদেশে!!! আবেগী এই দেশে কি জোর করে একসন্তান নীতি চালিয়ে দেয়া যাবে??? কিন্তু আমাদের মত দরিদ্র এবং জনসংখ্যা সমস্যা পীড়িত এই দেশে একসন্তান নীতি ছাড়া উপায় নাই। উল্লেখ্য, এই নীতি জনসংখ্যা কমাতে সহায়তা করে।
২। দুই সন্তান নীতিঃ এই নীতিতে জনসংখ্যা বাড়ে না, বরং স্থির থাকে। এখানেও ঐ একই কথা প্রযোজ্য। প্রথম দুইটাই মেয়ে হলে ছেলের জন্য হাহাকার এবং প্রথম দুইটাই ছেলে হলে মেয়ের জন্য হাহাকার। তবে কিছু ব্যতিক্রম দেখা গেছে, উনারা থেমে গেছেন। কিন্তু তারা মোটামুটি শিক্ষিত এবং সচেতন, দরিদ্র/গ্রামীন/নিরক্ষরদের মধ্যে এই গুণ দেখা যায় নাই।
৩। ইচ্ছাধীন (যত ইচ্ছা)ঃ মহান আল্লাহ্পাকের নামে চলছে, কিচ্ছু বলার নাই।
তাহলে সমাধানের উপায়!!!
১। সরকার যদি ঘোষনা করে যে, যার এক সন্তান হয়েছে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি আর সন্তান নেবেন না তাহলে তার সন্তানকে বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকার প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেবে। এতে ঐ ব্যক্তি আর্থিক সচ্ছল হল, সন্তানকে ভাল করে গড়ে তুলতে পারল এবং টাকা পাওয়ার জন্য ঐ সন্তানের বিয়েও বিলম্বিত করবে। এতে তার আবেগ অনুভূতি সবকিছুই রক্ষা হল। আমার মনে হয় দেশের দরিদ্র মানুষগুলো এই স্কিম এর আওতায় চলে আসবে।
২। যার প্রথম সন্তান ছেলে/মেয়ে হয়েছে সে যদি মেয়ে/ছেলের জন্য আরেকটি সন্তান নেয় (অর্থাৎ সব মিলে তার দুটি সন্তান) তাহলে সেটা তার ব্যাপার, কিন্তু সরকার থেকে কোন ভাতা পাবে না, অন্যান্যের মত সাধারণ নাগরিক সুবিধা ভোগ করবেন।
৩। কিন্তু প্রথম দুই সন্তান ছেলে/মেয়ে হওয়ার পর তৃতীয় সন্তান মেয়ে/ছেলে হলে আর সন্তান নেয়া যাবে না, কারণ তার মেয়ে/ছেলে পাওয়ার আকাংক্ষা পূরণ হয়ে গেল। যদি তৃতীয় সন্তান মেয়ে/ছেলে না হয় তাহলে তার আরও সন্তান নেয়ার অধিকার থাকবে, যতদিন পর্যন্ত না একটি মেয়ে/ছেলে না হয়। হয়ে গেলে বন্ধ। আর যদি মেয়ে/ছেলে হওয়ার পর আবারো সন্তান নেয় তাহলে পরের প্রতিটি সন্তানের জন্য প্রতিমাসে সরকারী কোষাগারে ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। মানে প্রতি সন্তানের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হবে।
আমার মনে হয়, এই পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার আকাংক্ষাও পূরণ হবে, আবেগও থাকবে, কিঞ্চিৎ জনসংখ্যাও নিয়ন্ত্রিত হবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।