somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোকিও বইমেলা ২০১৯

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত এক রঙ্গা এক ঘুড়ির স্টল হতে বই সংগ্রহ করছেন

বইয়ে হোক মুক্তি—মন, মনন ও মানসের’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে হয়ে গেল দ্বিতীয় টোকিও বইমেলা-২০১৯। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্যাক্রেড হার্ট ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী (১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর) এই বইমেলায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ও জাপানি নাগরিকদের সমাগম ঘটে। বাংলা ভাষা ও বাংলা বইয়ের প্রতি প্রবাসেও তাঁদের এই নিরঙ্কুশ ভালোবাসা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশ থেকে সহস্র মাইল দূরে বসবাস করার ফলে প্রবাসী অনেকের পক্ষেই অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। টোকিও বইমেলা কমিটির ধারাবাহিক এই আয়োজন সবার কাছেই ছিল এক আনন্দ উপলক্ষ।

মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত প্রতীকী ‘বটগাছটি’ দর্শনার্থীদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বাংলা মায়ের কোলে। চত্বরে বসে দল বেঁধে আড্ডা, সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠা বাংলা গান, ছোট শিশুদের লুকোচুরি খেলা আর বাংলা বই নিয়ে সবার অনাবিল উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে, প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশি মন ও মননে সর্বক্ষণ প্রিয় বাংলাদেশকে ধারণ করেন।



টোকিও বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাপানে সৃজনশীল এ ধরনের আয়োজনে বাংলাদেশ দূতাবাস সব সময়ই আয়োজকদের পাশে থাকবে।
মেলার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ড. সলিমুল্লাহ খান ও জাপানের ওহাশি মাসায়াকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাৎসুশিরো হোরিগুচি ও কবি মোহন রায়হান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন ইউসিনারি কাসু, কেইকো আজুমা, সাকাগুচি কাজুতাকা, মিজুকামি তেৎসু, আবদুর রহমান, ডা. শেখ ফজলে আকবর, মুন্সী খ আজাদ, আনোয়ারুল করিম ও জুয়েল আহসান কামরুল।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন টোকিও বইমেলা কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শাহরিয়ার মো. সামস সামি। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জীবন তো বটেই, জ্ঞান-বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।’

বইমেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মহাসচিব শিল্পী কামরুল হাসান লিপু। ডা. তাজবীর আহমেদের উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মোড়ক উন্মোচিত হয় টোকিও বইমেলা কমিটির প্রথম প্রকাশনা ‘বসন্ত বরিষন’-এর। দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এবং অভিজ্ঞ ও তরুণ লেখকদের লেখনীর সন্নিবেশে প্রকাশিত এই স্মরণিকা প্রবাসী পাঠকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ও সম্মানিত অতিথিদের উপস্থিতিতে মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত কবি মোহন রায়হান, আনার কলি, মুকুল মোস্তাফিজ ও শিল্পী কামরুল হাসান লিপুর নতুন বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয়।

এবারের মেলায় টোকিও বইমেলা কমিটির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন স্বনামধন্য লেখক ও প্রকাশকেরা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বইপত্র প্রকাশন, ধ্রুবপদ, শিখা প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, পাঞ্জেরী, আগামী প্রকাশনী, বিদ্যাপ্রকাশ, এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী ও সাওল প্রকাশন। বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম জাপানের বিশেষ স্টল ছাড়াও ছিল জাপানপ্রবাসী লেখক ও জাপানি লেখকদের স্টল। প্রবাসী জনপ্রিয় বাংলাদেশি লেখকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত সলিমুল্লাহ খান, মোহন রায়হান ও তরুণ লেখক কিঙ্কর আহসানের উপস্থিতি উৎসাহী পাঠকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে।

লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বগুলো মেলায় যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। মূল আলোচক হিসেবে সলিমুল্লাহ খান আলোচনা করেন ‘পুনর্জন্ম-বাংলা রেনেসাঁ’ বিষয়ে। তাঁর বক্তব্যে তিনি সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের গতিপথ ও বাংলা ভাষার বিবর্তন নিয়েও আলোকপাত করেন।

বিভিন্ন আলোচনা পর্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচিত বিষয়গুলো ছিল সৃষ্টিশীলতা ও বিকাশে লেখক-প্রকাশকের ভূমিকা, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসীদের অবদান, নারী নিগ্রহ ও সাম্প্রতিক ভাবনা।

আলোচনার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জাপানি শিল্পীদের পরিবেশনা, শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ‘যেমন খুশি তেমন বলা’ পর্ব ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বিদেশি বীর প্রতীক ডব্লিউ এস ওডারল্যান্ডকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী মেলার আকর্ষণ বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।

মেলা কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টারা ভবিষ্যতেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তাঁরা সৃজনশীল এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ডা. তাজবীর আহমেদ: গবেষক, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

২য় টোকিও বইমেলায় আমাদের আমন্ত্রণ করায় আমরা আনন্দিত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এক রঙ্গা এক ঘুড়ির পক্ষ হতে আয়োজকদের জন্য অনিঃশ্বেস ভালোবাসা রইলো।



















জাপান বইয়ের দোকানে ঘুরাঘুরি নিয়ে পোষ্ট
পোষ্ট পড়তে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৫৬
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×