আমাদের আশেপাশে সুবেশী মানুষগুলো যাদেরকে আমরা বন্ধু ভাবি তাদের মাঝেই রয়েছে বহু পরশ্রীকাতর মানুষ! আপনি ভালো আছেন- এটাই তাদের ঠিক ভালো লাগে না।
বাংলা একাডেমির অভিধানে পরশ্রীকাতর শব্দটির অর্থ দেওয়া আছে এভাবে- অপরের উন্নতি বা সৌভাগ্য দেখে কাতর বা ঈর্ষান্বিত হয় এমন।
শব্দটির বিশেষণ পরশ্রীকাতরতা।
পরশ্রীকাতরতা একটি অসুখ। এতে আমাদের ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে হিংসা-বিদ্বেষ-দ্বন্দ্ব-কলহ-বিবাদ বৃদ্ধি পায়। আমাদের শান্তি ও স্বস্তির জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। আজকের বাংলাদেশের চিত্র বলে দেয় মানুষের প্রতি সব মানুষের ভালোবাসা, কর্তব্য বোধ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা কমছে। খুব আশংকাজনক হারেই কমছে।
কিন্তু কেন কমছে?
কী কারণ তা খতিয়ে দেখলে বোঝা যায় এর প্রধান একটি কারণ হচ্ছে পরশ্রীকাতরতা।
সে ভালো কাজ করছে, ঐ ছেলেটা উন্নতি করছে, সে ভালো রেজাল্ট করেছে ইত্যাদিতে আর আমরা আনন্দ পাই না। বরং হয় উল্টো। মনে হয় কেন পাশের বাড়ির লোকটি নতুন ফ্ল্যাট কিনল, কীভাবে কিনলো? নিশ্চয় কোন কিন্তু আছে।
ইশ ভাবীর ছেলেটা নামি স্কুলে চান্স পেল?
এ বয়সেই কীভাবে এত দ্রুত সফল হলো, তমুকের স্বামী তাকে এত দামি উপহার দেয় কেন?
এই লোকটা এতো খ্যাতি অর্জন করছে!! নাহ, নিশ্চয় এখানে ভেজাল আছে।
আমিতো এটা পারিনি সে কেন পারবে?
আমাকেও সব পেতে হবে। আমার নেই কেন? এই ধরনের চিন্তাধারার মাঝেই রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন পরশ্রীকাতরতা।
পরিচিতজন বা বন্ধুত্বের মধ্যে এক ধরনের বৈপরীত্য বা প্যারাডক্স থেকেই পরশ্রীকাতরতার অনুভূতি জন্মায়।
অধিকাংশ মানুষের বন্ধু সংখ্যা সাধারণত কম হয়ে থাকে।
তবে কিছু মানুষের বন্ধুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি- আর এই দ্বিতীয় দলটির কারণেই বন্ধুত্বের প্রতি সামগ্রিক মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে।
আপনাদের জন্য কোন উপদেশ বা জ্ঞানের পরামর্শ দিলাম না কারণ
আমি জানি এসব উলু বনে মুক্তা ছড়ানোর মতোন।
যার যার ভাবনা তার তার জীবন। আমি হাজার নসিহত করলেও আপনি পরিবর্তন হবেন না। আপনি চলবেন আপনার মতোন করেই। তবু চেষ্টা করবেন পরশ্রীকাতরতা হতে নিজেকে দূরে রাখতে।
চেষ্টা করলে সেটা সম্ভব। নিজের জীবন নিয়ে ভাবুন।
সৎ থাকুন।
নিজেকে পরিশুদ্ধ করুন, একদিন আপনাকেও অনেকে ভালোবাসবে।
তার জন্য পরশ্রীকাতর হবার কোন প্রয়োজন হবে না।
#নগরে_সাধু
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৬