পাশেই স্ট্যান্ড করে সাইকেলটি দেখিয়ে মাঈনুল আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
কাকা তুমার সাইকেল?
নাহ কাকা। এটা আমার না।
আমি চালাই?
চালাও।
তার পক্ষে এটায় উঠা সম্ভব নাহ। কিন্তু আগ্রহের অভাব নেই।
সে বেল বাজানোর চেষ্টা করলো।
চেন ঘুরালো।
ছোটদের কাছে সাইকেল বিস্ময়, আনন্দের নাম।
আমি যখন খুব ছোট তখনো সাইকেল নিয়ে আমার ব্যাপক উত্তেজনা কাজ করতো। মনে আছে আমরা যখন আজিমপুরে থাকতাম, আজ থেকে ৩৫ বছর আগের কথা
তখন ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া নিয়ে সাইকেল চালিয়েছি।
আট আনা, এক টাকায় অনেকক্ষণ সাইকেল চালানো যেতো। সারা দুপুর টো টো।
সেই ঢাকা
আহা আমাদের সেই সোনালী শৈশব হারিয়ে গেছে।
আজিমপুর লিটল এনজেলস স্কুলের কথা।
কবির নাম কি লিখছোস? পেছন থেকে আমার সহপাঠীর ফিসফিস কণ্ঠে জানতে চাওয়া।
আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। স্কুলের পরীক্ষা চলছে আমাদের। আমিও চুপচুপ করে বললাম, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
সে কি বুঝলো কে জানে লিখতে গিয়ে লিখলো,
'কবি গরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'!!
পরে তার এই লেখা ক্লাসের সবাইকে পড়ে শোনানো হলো। ক্লাসে হাসাহাসি। আমাদের রাগী আপা পর্যন্ত হাসছেন।
আমার সহপাঠীকে কানে ধরে বেঞ্চিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো। শেষে সে জানালো সে আমার খাতা দেখে লিখেছে।
অথচ আমার খাতায় সঠিকটাই লেখা ছিল। নকল নিয়ে এই হচ্ছে আমার শৈশব স্মৃতি।
পরে পুরো বছর সবাই তাকে ক্ষেপাতো
"কবি গরু" বলে!
১৯৮৭ সনে আমি যখন নাইনে পড়ি তখন পরীক্ষার আগের রাতে তানিয়া ফোন করতো, মাসুদ
শোন, তুই কিন্তু আমার সামনের বেঞ্চে বসবি।
ক্যান?
আমি বুঝেও না বোঝার ভান করতাম। সে আমাকে নানাভাবে পটাতে চেষ্টা কিরে যেতো। একসময় আমি রাজী হতাম বসতে।
এই অনুরোধের কারণ ছিল সে যাতে পরীক্ষার সময় আরাম করে আমার খাতা দেখে লিখতে পারে।
এমন ফোন পরীক্ষার আগের রাতে আরো বেশ কয়েকজনই করতো। আমাদের শৈশবে এসবকে পাপ, করাই যাবে না এমন মনে হতো না।
এগুলো শৈশব কৈশোরের সহজাত অভ্যাস মনে হয়েছিল।
আমরা উত্তেজনা নিয়ে এসব করেছি।
ক্লাস টেনে রূপক খুব আনন্দ নিয়ে বলতো, মাসুদের এমন বাজে হাতের লেখা
অথচ আমি দুই তিন বেঞ্চ পেছন হতে দেখেও ঠিকঠাক বুঝতে পারি।
দূরে বসেও নকল করতে পারে বলে তার সেকি উচ্ছ্বাস!!
এই উচ্ছ্বাস ছিল খুশী আর আনন্দের।
অপাপবিদ্ধ।
(রূপকের কথা অনেকদিন পর লিখলাম। আমার স্কুলের এই বন্ধুটি আমাদের মাঝে নেই।
একটি সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘদিন আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।)
এসএসসির সময়
স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি যাকে কারিগরি অংকন দেখিয়ে দিয়েছিলাম সে লেটার পেয়েছিল
অথচ আমি ৭৮।
খারাপ লাগেনি। বরং আনন্দে মেতেছি। আমার একটু খানি সহায়তায় যে বন্ধুটি লেটার মার্কস পেয়েছিল তাতে আমি অনেক পাপ করে ফেলেছি!!
তার জন্য আমার বা মাকে ডেকে স্কুল থেকে টিসি দেবে বা এমন অপমান করবে- এসব আমাদের সময় কল্পনাতেও আসেনি। আমরা যে খারাপ স্কুলে পড়েছি তাও নয়। তখন সে সময়ে সেই স্কুলগুলো ঢাকার সেরা স্কুলের তালিকায় ছিল। অভিজাত স্কুলই ছিল।
তবু পরিবেশ
পারিপার্শ্বিকতা এমন সহজ সাধারণ ছিল।
আমরাও ছিলাম অন্যরকম।
শিক্ষক শিক্ষিকারা ছিলেন আপন।
কাছের জন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:৩৪