somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজিমপুর ও আমার সোনালী শৈশব

০৫ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৮২-৮৩ সালের কথা।
আমাদের একটি অন্যরকম শৈশব ছিল।
ঢাকা ছিল ছিমছাম একটি শহর। আমরা তখন থাকতাম আজিমপুরে।
ছাপড়া মসজিদের পেছনের গলি; এই গলিটার অন্য প্রান্তের নাম ছিল বিখ্যাত ‘চায়না বিল্ডিং গলি’!!
গলির মোড়ে রেশন শপ ছিল। তার পেছনে খালি জায়গা ছিল আমাদের খেলাধুলার স্থান। বিকেলে অনেক সময় কলোনির মাঠে না গেলে সেখানেই আমরা অনেকে মিলে খেলতাম।
রেশন শপের পরেই ছিল আমাদের টিনের বাসা।
সেই টিনের বাসার ছাদে উঠেই বিকালবেলা চলতো ঘুড়ি উড়ানো!

আমি তখন পড়তাম আজিমপুর লিটল এঞ্জেলস স্কুলে।
বিকেলে ওয়েস্ট এন্ড স্কুলের পাশ থেকে সাইকেল ভাড়া করে কলোনির মাঠে চালাতে যেতাম।
দেবাশীষ নামের এক বন্ধু ছিল যাকে নিয়ে চলত সাইকেল চালানো। সেই শৈশবেই কলোনির ঢালে সাইকেল ছেড়ে দিয়ে শিখেছিলাম সাইকেল চালানো। তারপর কেমন নেশার মতন হয়ে গেলো। বাসার সবাইকে ফাকি দিয়ে দুপুর নাই বিকাল নাই সাইকেল চালানো ছিল একটা নিয়মিত কাজ।
এমনই দুরন্ত শিশু কিশোরদের কথা নিয়েই বাংলাদেশের পপ সম্রাট আজম খান হয়তো ‘আলাল ও দুলাল’ গানটি গেয়েছিলেন!

আলাল যদি ডাইনে যায়
দুলাল যায় বায়ে
তাদের বাবা সারাদিন খুঁজে খুঁজে মরে ।।
আলাল কই
দুলাল কই
নাইরে নাইরে নাইরে নাই
আলাল ও দুলাল, আলাল ও দুলাল
তাদের বাবা হাজি চান
চানখার পুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ী
আলাল ও দুলাল


আমাদের বাসায় তখনো টিভি ছিলনা।
সাদা কালো টিভিতে তখন 'টারজান' দেখাতো। সপ্তাহে একদিনই দেখাতো।
আমরা চায়না বিল্ডিঙে এক আত্মীয়ের বাসায় টারজান দেখতে যেতাম। টারজান শুরু হবার অনেক আগেই হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতন সেই টিভি দেখা। আহা! মনে হলে মায়া লাগে সেই সময়টার জন্য।



কিছুদিন পর আমাদের বাসায় টিভি কেনা হল।
আমাদের সেকি উৎসাহ। ছোটদের মহলে খুব ভাব বেড়ে গেল। তখনই শুরু হয়েছিল 'ম্যাকগাইভার' সিরিজটি। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে হয়তো। আমরা চোখ বড় বড় করে তার কাণ্ডকারখানা দেখতাম।
নিজেকে ভাবতাম ম্যাকগাইভার!

মনে আছে বয়স্করা ‘ছায়া-ছন্দ’ নামের বাংলা জনপ্রিয় সিনেমার গান নিয়ে অনুষ্ঠানটির জন্য অপেক্ষা করতো।
মাঝে মাঝে পাড়ায় কারো বাসায় ভিসিআর বলে একটি বস্তুকে ভাড়া আনতে দেখতাম।
সেটার মধ্যে ছিল আরেক কাহিনী। কি নাচ গান।
আমরা যেন স্বপ্ন পুরীর মতন কিছু দেখছি এই হতো অবস্থা। হা করে গিলতাম।
কি দেখতাম কে জানে!!

আমার এক নানা একদিন সবাইকে সিনেমা দেখাবেন ঠিক হল।
হৈচৈ করে সবাই রাজী।
আমরা সেজে গুজে রওয়ানা দিলাম। নিউ মার্কেটের ‘বলাকা’ হলে গেলাম।
‘দূরদেশ’ নামের সেই সিনেমা ছিল আমার দেখা প্রথম বাংলা সিনেমা।
এখনো স্পষ্ট চোখে ভাসে সেই দিনটির কথা। কি উত্তেজনা নিয়ে বড় পর্দায় সে সব দেখেছিলাম! ববিতার বিপরীতে নাদিমের সেই বিখ্যাত গান ‘দুশমনি কোরো না প্রিয়তম’ শর্মিলা ঠাকুর আর শশী কাপুরের ‘যেওনা সাথী’ আহা। কি ভাব।
আমরা তখন নায়ক নায়িকা কাউকেই চিনি না।

পুরো এলাকার কোন জায়গার নাম কি তা জানিনা, চিনিনা কিন্তু সবখানে টো টো করি।
ঘুরি ফিরি। আর দুষ্টামি বাঁদরামি – এই করেই সেই সময়টা কেটেছে।
১৯৮৬ সনে আমরা সেই এলাকা ছেড়ে চলে আসি।

এখনো আজিমপুরে গেলে আমি একা একা সে সব জায়গায় ঘুরি।
অনেক কিছু বদলে গেছে। দু একটা চিহ্ন চোখ পড়ে যা অবিকৃত রয়েছে যা একেবারেই আমার শৈশবে দেখার মতন করে। বেশির ভাগই নতুন স্থাপনা। আমার সোনালী শৈশবের কোন কিছুকেই আর চেনা মনে হয় না। সেই ছিমছাম শহর, সেই চেনা মানুষগুলো- সেই পরিবেশ।
সেই শান্ত নগরী আর ফিরে পাবার নয়!
সে সময় আর ফিরে আসবে না!



সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×