
১৫ শতকে বাংলায় সুলতানের দরবারে চীনা দূত মাহুয়ান আসেন। তাদের আপ্যায়নের জন্য ভোজসভার আয়োজন করেন বাংলার সুলতান। সেই সময় অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য নাচ-গানের ব্যবস্থা করা হয়। তার দেখা নর্তকীদের সম্পর্কে তিনি বলেন যে, হালকা লাল রংয়ের ফুল তোলা জামা এবং রেশমের ঘাগড়া, গলায় হার, নীল আর দামি পাথর দেওয়া চুড়ি পরা অবস্থায় তাদেরকে দেখতে যেন অপ্সরীর মত লাগছিল।
১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গান ও নাচের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তখন ঐ শিল্পীরা ধীরে ধীরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ, ঢাকায় এসে আশ্রয় নেয়। ঢাকায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতার মানুষের কোন অভাব ছিল না। নবাব পরিবার এবং তার বংশধরেরা, মোঘল বংশোদ্ভূত জমিদারেরা, ভাওয়াল রাজা, কাশিমপুর, পুবাইলের জমিদারদের নাম এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। শুধু স্থানীয় বাঈজী নয়, ঢাকার নবাব বাদশাদের দেদার খরচের গল্প ছড়িয়ে পড়ায়, লখনৌ, বেনারস, পাটনা, বিহার, কলকাতা থেকে প্রতিষ্ঠিত বাঈজীরাও ঢাকায় এসে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে নিজ দেশে ফেরত গিয়েছেন।
এর মধ্যে আবার অনেকে ঢাকার চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে পাটুয়াটুলী ও জিন্দাবাজার লেন এলাকায় বাড়িঘর কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করে থেকে গিয়েছিলেন। এই বাঈজীরা যেমন নিজেদের বৈঠকখানায় মাহফিল করতো তেমনি আবার তারা বায়না নিয়ে জমিদার নবাবদের রংমহলেও বেড়াতে যেতেন।
ঢাকায় বাঈজীদের নাচ-গান শুরু হয় মুঘল আমলে। সুবাহদার ইসলাম খাঁর দরবারে (সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পর্ব) যারা নাচ-গান করতেন তাদের ‘কাঞ্চনী’ বলা হতো। উনিশ শতকে ঢাকার নবাব নুসরাত জং, নবাব শামসুদ্দৌলা, নবাব কমরুদ্দৌলা এবং নবাব আবদুল গণি ও নবাব আহসানুল্লাহর সময় বাঈজীদের নাচ-গান তথা মেহফিল প্রবলতা পায়। তারা আহসান মঞ্জিলের রংমহল, শাহবাগের ইশরাত মঞ্জিল, দিলকুশার বাগানবাড়িতে নৃত্য-গীত পরিবেশন করতেন। ঢাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে যেসব বাঈজী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাদের মধ্যে লক্ষ্নৌর প্রখ্যাত গায়ক ও তবলাবাদক মিঠন খানের নাতি সাপান খানের স্ত্রী সুপনজান উনিশ শতকের শেষ দিকে ঢাকায় ছিলেন।
১৮৭০-এর দশকে ঢাকার শাহবাগে নবাব গণির এক অনুষ্ঠানে মুশতারী বাই সংগীত পরিবেশন করে প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবদুল গফুর খানের নজরে পড়েছিলেন। ১৮৮০-এর দশকে শাহবাগে এলাহীজান নামে আরেক বাঈজীর নৃত্য ও করুণ পরিণতির দৃশ্য দেখেছিলেন হাকিম হাবিবুর রহমান। নবাব গণির দরবারে নাচ-গান করতেন পিয়ারী বাই, হীরা বাই, ওয়ামু বাই, আবেদী বাই, আন্নু নান্নু ও নওয়াবীন বাই। শেষোক্ত তিন বোন ১৮৮০-এর দশকে ঢাকার নাটক মঞ্চায়নের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ঢাকার অন্য খ্যাতিমান বাইজিদের মধ্যে ছিলেন বাতানী, জামুরাদ, পান্না, হিমানী, আমিরজান, রাজলক্ষ্মী, কানী, আবছন প্রমুখ। এছাড়া কলকাতা থেকে মাঝেমধ্যে ঢাকায় মুজরো নিয়ে আসতেন মালকাজান বুলবুলি, মালকাজান আগরওয়ালী, জানকী বাই, গহরজান, জদ্দন বাই, হরিমতী প্রমুখ।
(বাঈজীদের নিয়ে পড়ছিলাম। কিছু অংশ শেয়ার করলাম।
এখানে দুটি লেখা থেকে শেয়ার করা।
একটি 'বাইজি: ফিরে দেখা' জনাব রিফাত আহমেদ এর। আর কিছু তথ্যের জন্য কৃতজ্ঞতা হেকিম হাবিবুর রহমান, ডঃ মুনতাসির মামুন, শামীম আমিনুর রহমান)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



