শিশুটির বাবা “রাস্ট্রীয় ভাতা প্রাপ্ত একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও আওমিলীগের নেতা“ এই তথ্য অপ্রাসঙ্গিক। কেননা তিনি পাকিস্তান সাপোর্ট করেন কী না প্রশ্ন সেটা নয়, প্রসঙ্গ তার শিশু সন্তান। তিনিও যদি পাকিস্তানের সাপোর্টার হয়ে থাকেন তাহলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরিচয় সহ তার মতামত তুলে ধরুন, জানার আগ্রহ রাখি। আশা করি জানাবেন।
আপনার মনবেদনা প্রকাশের জন্য আপনি একটি শিশুর অজ্ঞতাকে উপলক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যে শিশু ক্রিকেটই বোঝেনা সে “শোয়েব আক্তার আর আফ্রিদির খুব ভক্ত” হয় কী করে? কী দেখে? সে তো কাম ও বোঝেনা যে “আফ্রিদি প্লিজ ম্যারি মি” মূলক কামোত্তেজনা থেকে সে ভক্ত হবে!
সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উত্তর হচ্ছে আপানার মত সেয়ানা কাজিন বা এরকম কারোর সঙ্গ। শিশু তার চারপাশের মানুষদেরই কারো উচ্ছ্বাস দেখে “শোয়েব আক্তার আর আফ্রিদির খুব ভক্ত” হয়েছে (যদি আদৌ হয়ে থাকে)। যে শিশু রাজাকার কী বোঝেনা সে স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধ কি তাও বোঝেনা। পাকিস্তানীদের হারামীপনাও তাকে স্পর্শ করেনা। একদিন সে বড় হবে। জানবে ৭১ কী, জানবে মুক্তিযুদ্ধ কী। মুক্তিযুদ্ধ তাকে যত গভীরভাবে স্পর্শ করবে পাকিস্তানকে সে তত ভালভাবেই চিনতে পারবে, সেই সাথে এদেশীয় পাকিস্তানী দোসরদেরকেও। যদি সে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে ইনডিফারেন্টও হয় বড় হয়ে, ক্রিকেটই যদি তার ধ্যান জ্ঞান হয়, তাহলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইকনোমি ক্লাসে পাঠিয়ে দিয়ে পাকিস্তানীদের বিজনেস ক্লাসে যাওয়ার ঘটনাকে সে মেনে নিতে পারবেনা। সেই সার্বিক চিনপরিচয় থেকেই সে পাকিস্তানকে সাপোর্ট করা যায় কী না, পাকিস্তানের জয়ে উল্লাস করা যায় কী না, নিজের জন্য তা নির্ধারণ করে নেবে।
মাইন রানা, আশা করি অবুঝ শিশুদের দোহাই দিয়ে নিজের বক্তব্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন।
সূত্রঃ মূল ব্লগ পোস্ট - বিশ্বকাপ গ্রুপের পোস্ট ।
**********
যারা “খেলা আর রাজনীতি আলাদা” এই কথাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন পাকিস্তানের পক্ষে জয়োল্লাস করার জন্য তারাই রাজনীতি সবচেয়ে বড় গুটিবাজ প্লেয়ার। মুক্তিযুদ্ধের কারণে তো বটেই এবং তারপর তাদের কূটনৈতিকদের মন্তব্য, খেলোয়াড়দের সার্বিক অসততা, নেটে পাকিস্তানীদের অজস্র অপমানজনক মন্তব্য, বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানী পক্ষের পুনরুত্থান, বহু মানুষের কাছেই পাকিস্তানকে এক ত্যাজ্য নামে পরিণত করছে কিন্তু তাদের কাছে করেনি। কেন করেনি? কারা তারা?
ঘোর পাকিস্তান সমর্থক একটা কোর গ্রুপ আছে যারা তাদের “দেশপ্রেম” এর তাড়নায় আজো পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য আওয়াজ দেয়।.যত বেশি পাকিস্তানকে সহজ করিয়ে নেয়া যাবে তত বেশি তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রকাশিত হওয়া সহজ হবে। সহজ হবে ৭১ কে চাপা দেয়ার চেষ্টা। এদের মূল প্রণোদনা ধর্ম। যে ধর্মের কারণে একাত্তরে তারা এই মাটি এই মাটির মানুষদের বিপক্ষে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিলো, আজও ধর্মের বর্ম দিয়েই নিজেদের রাজনৌতিকভাবে পুনর্বাসিত করছে সেই ধর্মই তাদের ক্রিকেটে পাকিস্তান সাপোর্টার হওয়ার কারণ। মূলত এদের কারণেই পাকিস্তান সাপোর্টারদের রাজাকার হিসেবে অভিহিত করার উপলক্ষ্য তৈরী হয়।
আবার পারিপার্শ্বিকতা থেকে যে মুক্তিযুদ্ধকে শুধু “রাজনৈতিক গন্ডগোল” হিসেবে দেখতে শিখেছে, তার পক্ষে পাকিস্তানের প্রতি আবেগ উথলাতে বাঁধা নেই। কারণ সে আবেগ মুক্তিযুদ্ধের জন্য বরাদ্দ হয়নি।
এই ধরণের রুটলেস নতুন প্রজন্ম যাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ “জাস্ট এনাদার পলিটিকাল ফেনমেনন” তারা ছাড়াও আছে “কড়া শট” খাওয়ার স্বপ্নে বিভোর কামোত্তেজিত “আফ্রিদি প্লিজ ম্যারি মি” পার্টি। এদের সমর্থন না রাজনীতি থেকে উদ্ভূত না খেলা থেকে, এদের সমর্থনের উৎস দুই পায়ের ফাঁকে।
যাহোক, শেষে এইটুকুই বলি পাকিস্তানের ভাল পার্ফরমেন্সকে স্বীকার করা আর তাদের জয়ে উন্মাতাল হয়ে ততটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যতটা শুধু বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ থাকার কথা - এই দুটোর মাত্রাগত পার্থক্যই বলে দেয় খেলা আর রাজনীতি কার কাছে কতটা আলাদা বা আদৌ আলাদা কী না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




