টাইটেল পড়ে চমকাবার কিচ্ছু নাই! অসলেই অসভ্যতামীর অপর নাম ফুট ওভার ব্রিজ। কেন? সে উত্তরে পরে আসছি। তার আগে ভাবতে থাকুন; গুলশান সার্কেল ১ থেকে সার্কেল ২ এর মাঝে যেন কয়টা ফুট ওভার ব্রিজ?
দেশের বাইরে আছি প্রায় ১ বছর ১০ মাস। ধরলে ২ বছরই বলতে পারেন। যেখানে থাকি, সেখানের মানুষ হাঁটা হাঁটির বিষয়ে বিশেষ 'অ-পারদর্শি'! এরা হাঁটে না। যেখানে যায়, গাড়ি নিয়ে যায়। এমনকি বাসা থেকে ঠিক ৩-৫ মিনিটের দুরত্বে মসজিদ হলেও সেখানে হেঁটে যাবে। স্টেডিয়াম তৈরী হয় যতটুকু জায়গা নিয়ে, তার থেকে ৫-৬ গুন বড় জায়গা নিয়ে তৈরী হয় পার্কিং। কিন্তু এখানে রাস্তার পাশে হাঁটবার জায়গা আছে।
প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে যখন গাড়িটা নিয়ে বের হই, প্রথম ৫০০ মিটারের মধ্যে ২/৩জন মহিলা এবং ৩/৪ জন পুরুষকে প্রায় প্রতিদিন হাঁটতে দেখি এই ফুটপাথ এ; উনারা সবাই পাকিস্তানী। এরপরের বাকি প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তায় তেমন করে কাউকে হাঁটতে দেখি নাই। তবে এই পুরা পথেই ঠিক রাস্তার সাইজের একটা ফুটপাথ আছে। কিছু দূর পর পর স্পিড ব্রেকারের মত করে একটু উঁচু করা, এবং সাইন লাগানো থাকে 'পথচারী পারাপার' এর।
সারা বিশ্ব খুব ভালো করে জেব্রাক্রসিং নামে কিছু একটা চিনে। চিনি না আমরা। আমাদের দেশে যে পরিমান মানুষ, আর যে পরিমান মানুষ রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে চলে, তাতে রাস্তা এক লেনের হলে ফুটপাথ হবার কথা অন্তত ৩ লেনের। কিন্তু উল্টা! রাস্তা তিন লেন তো ফুটপাথ আধা লেন। তার মধ্যে আবার ৮০% জায়গা দখল করে বসে আছে বিভিন্ন বাজার সদাই বিক্রির লোকেরা। ফলাফল, মানুষ ফুটপাথ ছেড়ে নামছে রাস্তায় খাচ্ছে ধাক্কা গাড়ির সাথে।
ফুটওভার ব্রিজ একটা অসভ্য জিনিষ। যার করণে আপনি গুলশানের মত 'পশ' এরিয়াতে মূল রাস্তার উপরে এই আজিব জিনিষের দেখা পাবেন না (অন্তত ২ বছর আগে দেশ ছাড়বার সময়ও দেখি নাই)। আপনার গাড়ি আছে, রাস্তা আপনার অধিকার; তেমন আমার পা আছে ফুটপাথ এবং জেব্রাক্রসিং আমার অধিকার। আমার কোন ঠ্যাকা পড়ে নাই যে আমি প্রায় আড়াই তলা উুঁচু সিড়ি ভেঙ্গে উঠবো এক ফুট-ওভার-ব্রিজ নামক আজব জিনিষে, আবার নামবো সেটা দিয়ে। যারা বয়স্ক, হাঁটুতে-মাজাতে সমস্যা, তাদের জন্য এই জিনিষ যে কত বিড়ম্বনার তা বলে শেষ করবার মত নয়। আবার ফুটপাথ গুলাতেও কিন্তু পসরা সাজিয়ে লোক বসছে, শুয়ে থাকছে ভিক্ষুকেরা! পাড়া একটা দিবেন, তাও বহুত দেখে শুনে দিতে হবে। না জানি কাকে পাড়িয়ে চলে যান।
আপনি হয়ত বলবেন যে মানুষ তো সিগ্যানলের জন্য অপেক্ষা করে না; এমনেই দৌড় দেয়। হ্যাঁ, এই সমস্যা আছে; তার সমাধানও সহজ। সেটা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ করা। সিগ্যানালের জন্য অপেক্ষা করেই পার হতে হবে এমনটা নিশ্চিত করাও কিন্তু সরকারের একটা দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তবে কি একেবারেই দরকার নাই এই অসভ্য জিনিষে? আছে, অনেক জায়গাতে আছে; যেমন রেলওয়ের উপরে আছে, আবার দরকার আছে মানিক মিয়া এভিনিউতে (কিন্তু ঐখানে এই জিনিষ নাই; কি আজব)। এত্তো বড় রাস্তা পার হবার জন্য হয় ফুটওভার ব্রিজ, বা আন্ডার পাস দরকার। কিন্তু কাজীপাড়া শ্যাওড়া পাড়াতে কোনই দরকার নাই।
আচ্ছা, শেষ একটা প্রশ্ন রেখে যাই। ঢাকার রাস্তার প্রায় ৯৫% ট্রাফিকইতো ট্রাফিক পুলিশকে দিয়ে কন্ট্রোল করাতে হয়, তাহলে খামখা সিগন্যাল লাইট গুলা সারা দিন-রাত কেন জ্বলে?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৯ ভোর ৪:১৫