২০১৩ সালে আমি হঠাৎই একটা প্রতিষ্ঠান থেকে অফার পাই, সেটা মূলত মার্কেটিং এবং কাষ্টমার সাপোর্ট-রিলেশন টিমের ম্যানেজার হিসাবে। এই সেক্টরে আমার ধারণা প্রায় শুন্য।
কম্পানির মালিক আমার পরিচিত, আমরা বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার করে বেড়াই এক সাথে। সেখান থেকেই মূলত পরিচয়। আমি বিভিন্ন সেমিনারে কিছু গোটকা ট্যাবলেট দিতাম (যেটা না দিলে পাবলিক ধরে রাখা যায় না আরকি); আর উনি মনে করে বসলেন যে আমি মার্কেটিং এবং কাষ্টমার রিলেশনে খুব ভালো কিছু করতে পারবো। আগেই বলে রাখি, বিবিএ-এমবিএ করেছি ফাইন্যান্স মেজরে। মার্কেটিংটা মাইনর ছিলোও না। তবে আমি মার্কেটিং জিনিষটা খুব পছন্দ করি। চরম ডায়নামিক একটা বিষয়।
যাই হোক, প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হচ্ছে পুশ সেল। বিভিন্ন কম্পানির প্রোডাক্ট তারা মূলত ফোন করে পুশ সেল এর চেষ্টা করে। কাষ্টমার সাপোর্ট টিম এর সাথে একটা মিটিং করলাম। সবাই চরম বিরক্ত! লোকে খালি গালি দেয়। এখানে খুব বেশী কিছু করার ছিলো না। তবে তাদের বেশ কয়েকজনের কথা বলা অবজারভ করলাম।
প্রতিষ্ঠান ছোট হলেও এর মধ্যে সম্ভাবনা বড় হিসাবেই দেখতে পেলাম। দরকার চরম মাত্রায় ফাইন টিউনিং। অনেক পদক্ষেপই নিয়েছিলাম। তার মধ্যে মাত্র একটার কথা বলছি।
কাষ্টমারকে ফোন দিলে অনেক সময়ই কাষ্টমার জানায় যে সে কোন না কোন ঝামেলায় আছে। কখনও বাচ্চা অসুস্থ, কখনও সে নিজে অসুস্থ। কখনও বা মন-মেজাজ খারাপ। কখনও বা হবু বাচ্চার মা ডেলিভারী রুমে আছে; কিছুক্ষণের মধ্যে বাচ্চা ডেলিভারী হবে।
আমরা এইগুলি নোট করা শুরু করলাম। এবং কাষ্টমারদের সাথে এগুলি নিয়ে ফলোআপ করা শুরু করলাম।
একবার মনে আছে একজন রাস্তার মধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে মহা বিপদে পড়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে ঐ এলাকারই একজন কল করেছিলো। সে দ্রুত তার পরিচিত এক মেকানিককে বললো ফোন করে দেখতে যে কোন সাহায্য করা যায় কি না। ঐ ভদ্রলোক পর ফোন করে প্রায় ৩০,০০০ টাকার প্রোডাক্ট কেনার ভারবাল এগ্রিমেন্ট করে ফেললেন।
কয়েকবারই পেয়েছি যে এই মাত্র বাচ্চা হয়েছে, বা হচ্ছে। বাচ্চা সহ বাচ্চার মা হসপিটালে। আমরা ছোট একটা গিফট পাঠিয়ে দিলাম হসপিটালে। ব্যাস, রিটার্নে ঐ বাচ্চার বাবা বেশ গাদি খানেক জিনিষ আমাদের থেকে কিনে নিলেন। এমনকি তিনি নানান সমস্যায় আমাদের ফোন দিয়ে সাজেশন চাইতেন।
মাত্র ৩মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের পুশ সেল বেড়ে গেলো অনেক। পুশ সেল এর পাশাপাশি কাষ্টমাররা আমাদের ফোন দিয়ে আরও বিভিন্ন প্রোডাক্টের তথ্য নিতেন। তাতে করে মাঝে মধ্যেই আমরা নতুন প্রোডাক্ট লাইন অথবা নতুন প্রোডাক্টের খবর পেতাম।
------------
গতকাল হঠাৎই আমার গাড়ি কোন কারণে স্টার্ট হচ্ছিলো না। এদিকে জরুরী একটা ডিউটির মধ্যে আছি, ওদিকে গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। একজন মেকানিককে ফোন করলাম রেকার পাঠানোর জন্য। ভদ্রলোক ফোন ধরেন নাই, পরে জেনেছি অসুস্থ ছিলেন। উনাকে না পেয়ে আর একজনকে বললাম। তিনি জানালেন তার পরিচিত রেকার নাই যেটাকে বিশ্বাস করে গাড়ি দিয়ে দিতে পারি। তৃতীয়জন রেকার পাঠিয়ে দিলেন।
ঘন্টা দুয়েক পরে প্রথম যাকে কল করেছিলাম তিনি ফোন দিলেন, তাকে জানালাম যে গাড়ির এই দশা হয়েছিলো, তবে একটা ব্যবস্থা হয়েছে।
গতকাল রাত্রের মধ্যেই গাড়ি ঠিক হয়েছে। তবে ঐ ভদ্রলোক আজকে আবার ফোন দিলেন। জানতে চাইলেন যে গাড়ি ঠিক হয়েছে কি না। ভালো লাগলো বিষয়টি। সাধারণত বাংলাদেশী কার মেকানিকদের কাছ থেকে এই সাপোর্ট পাওয়া অকল্পনীয়। এখন কেমন যেন খারাপ লাগছে যে উনার জন্য একটু অপেক্ষা না করে কেন অন্যখানে গাড়ি পাঠালাম।
Photo by Donny Jiang on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২২ দুপুর ২:০৬